ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করব।
ব্যাকরণ গাঠের গুরুত্ব সম্পর্কে মন্তব্য করতে নিয়ে ড. মুহম্মদ এনামূল হক বলেছেন, 'আলো, জস, বিদ্যুৎ, বাভাস প্রভৃতি সম্মন্ধীয় বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্য না জানিয়াও মানুষ বাঁচিয়াছে, বাঁচিতেছে ও বাঁচিবে। কিন্তু, তাই বলিয়া ঐ সমস্ত বস্তুর বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্যকে মানুষ অস্বীকার করিয়া বর্তমান সভ্যতার গগন-বিচুম্বী সৌধ নির্মাণ করিতে পারে নাই।
ব্যাকরণ না জানিয়াও ভাষা চলিতে পারে, কিন্তু ভাষাগত সভ্যতা না হউক, অন্তত ভব্যতার পত্তন বা সমৃদ্ধি হইতে পারে না।... এই জনাই শিক্ষিত ব্যক্তির পক্ষে ব্যাকরণ-সম্মন্ধীয় সাধারণ জ্ঞানের সঙ্গে বিশেষ জ্ঞানও আবশ্যক।। একটি ভাষা সম্মান্ধে পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ করতে হলে সেই ভাষার ব্যাকরণ পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন-
১। ভাষা-শিক্ষার ক্ষেত্রে সহায়তা: ব্যাকরণ ভাষাবিজ্ঞানেরই অংশ। ভাষাবিজ্ঞান একটি বিজ্ঞান। ব্যাকরণ শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ উপকারি দিকটি হলো, নিজে যে ভাষাটিকে বলি বা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করি, তার সংগঠন ও কাজকর্মের মূল সূত্রগুলো আমরা এই বিদ্যাচর্চা থেকে জানতে ও বুঝতে পারি। তাতে আমরা সচেতনভাবে ভাষাটির সমূহ শক্তি ও সম্ভাবনাকে ব্যবহার করতে পারি। ফলে আমরা বা অন্য কেউ ভুল করলে আমরা সে ভুলটি কী ধরনের এবং কেন ঘটল, তা যুক্তি দিয়ে বুঝতে ও বোঝাতে পারি।
২। অন্য ভাষার ব্যাকরণ জানতে সহায়তা করে। একটি ভাষার ব্যাকরণ ভালোভাবে জানলে আমাদের অন্য ভাষার ব্যাকরণ জানা ও বোঝার, এমনকি মানুষের সমস্ত ভাষার ব্যাকরণকে জানা ও বোঝার পথটি খুলে যায়। কারণ একটি (গভীর) তরে পৃথিবীর সকল ভাষার মধ্যে কিছু মৌলিক ঐক্য আছে। সকল ভাষাই ধ্বনি জুড়ে রূপ বা শব্দখণ্ড গঠন করে, শব্দ জুড়ে পদরুদ্ধ এবং পদবন্ধ জুড়ে বাক্য। আবার সকল ভাষাতেই শব্দগুলো বিশেষা, বিশেষণ, ক্রিয়া ইত্যাদি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। এই প্রাথমিক সূত্র ও প্রক্রিয়াগুলো সম্বন্ধে সমাক ধারণা নিজের ভাষার ব্যাকরণ থেকে তৈরি হলে অন্য ভাষার ব্যাকরণের কয়েকটি ধাপও অতিক্রম করা থাকে। বাকি ধাপগুলো পার হওয়া তখন সহজ হয়। একটি ভাষার ব্যাকরণ জানা অন্য ভাষার ব্যাকরণ জানার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
৩। বিজ্ঞানবোধের বিকাশে গুরুত্ব ব্যাকরণ আমাদের শেখায় যে, ভাষা নিয়মের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বিজ্ঞান আমাদের বলে যে, বিশ্বজগতের যাবতীয় বিষয়ে এই 'নিয়মের রাজত্ব' বর্তমান। ব্যাকরণের মধ্য দিয়ে একটি ভাষাকে বিশ্লেষণ করতে শিখলে সমস্ত কিছুকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বিশ্লেষণ করে বোঝার একটি শিক্ষা ছাত্রের হওয়া উচিত। খন্ড কীভাবে সমগ্রকে নির্মাণ করে, আবার উলটো দিকে সমগ্রকে ভেঙে কীভাবে খন্ডকে পাওয়া যায়, বস্তুর (বাক্যের) কীভাবে পরিবর্তন ঘটে, তাতে অর্থের কী বৈচিত্র্য ঘটে, এইসব নিরীক্ষা ও অনুধ্যান থেকে যুক্তি ও বিশ্লেষণের বৃত্তি তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে, জীবন ও পৃথিবীর নিয়মবদ্ধ রূপটি সম্মন্ধে ধারণা স্পষ্ট হয়। ফলে ব্যাকরণ পাঠে ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য স্বেচ্ছাচারিতা রোধ হয়, ফলে ভাষার বিশুদ্ধতাও রক্ষা পায়।
৪। সাহিত্যরসিকদের মতে সাহিত্যের রস আস্বাদন করতে হলে পুরোপুরি সে রস গ্রহণ করতে হয়; ব্যাকরণ সে রস গ্রহণের সহায়ক। ব্যাকরণ পাঠের মাধ্যমে ছন্দ-অলংকার বিষয়েও জ্ঞান লাভ করা যায়।
৫। ব্যাকরণের তত্ত্ব ও তথ্য সম্পর্কে উপযুক্ত জ্ঞান না থাকলে ভাষাগত আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তখন উন্নত ভাবের বাহনরূপে ভাষাকে ব্যবহার করে উৎকৃষ্ট সাহিত্য সৃষ্টি করা যায় না।
৬। ভাষার সামগ্রিক রূপকে বোধের উপযোগী করে তোলা ব্যাকরণ শিক্ষার লক্ষ্য। বাংলা ব্যাকরণের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তবে একটি কথা স্মরণ রাখতে হবে-ভাষা আগে, পরে ব্যাকরণ। অতএব ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজন আমাদের আছে বটে, কিন্তু এর দ্বারা আচ্ছন্ন হলে চলবে না।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url