ব্যাকরণ ও বাংলা ব্যাকরণের সংজ্ঞার্থ

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে ব্যাকরণ ও বাংলা ব্যাকরণের সংজ্ঞার্থ নিয়ে আলোচনা করব।

ব্যাকরণ ও বাংলা ব্যাকরণের সংজ্ঞার্থ

যে-গ্রন্থ বাংলা ভাষাকে সম্যক বিশ্লেষণ করে তার গঠন-প্রকৃতি ও মরূপকে চিনিয়ে দেয়, তাকে শুদ্ধভাবে প্রয়োগ ও ব্যবহার করতে শেখায়, তাকে বাংলা ভাষার ব্যাকরণ বলে। এক কথায় বলা যায় যে বিদ্যাশাখায় বাংলা ভষার স্বরূপ ও প্রকৃতি বর্ণনা করা হয় তাকে বলে বাংলা ব্যাকরণ। ভাষাবিদগণ নানাভাবে ব্যাকরণ ও বাংলা ভাষার ব্যাকরণের সংজ্ঞার্থ করেছেন, যেমন-

ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, যে বিদ্যার দ্বারা কোনও ভাষাকে বিশ্লেষণ করিয়া তাহার স্বরূপটি আলোচিত হয়, এবং সেই ভাষার পঠনে ও লিখনে এবং তাহাতে কথোপকথনে শুদ্ধ-রূপে তাহার প্রয়োগ করা যায়, সেই বিদ্যাকে সেই ভাষার ব্যাকরণ (Grammar) বলে।

বাংলা ভাষার ব্যাকরণ সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, 'যে ব্যাকরণের সাহায্যে এই ভাষার স্বরূপটি সব দিক্ দিয়া আলোচনা করিয়া বুঝিতে পারা যায় এবং শুদ্ধ-রূপে (অর্থাৎ ভদ্র ও শিক্ষিত সমাজে যে রূপ প্রচলিত সেই রূপে। তা পড়িতে ও লিখিতে ও ইহাতে বাক্যালাপ করিতে পারা যায়, সেইরূপ ব্যাকরণ বুঝায়।।

মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর মতে, 'যে শাস্ত্রে কোনো ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়োগবিধি বিশদভাবে আলোচিত হয়, তাকে ব্যাকরণ বলে।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর (১৮৮৫-১৯৬৯) মতে, 'যে শাস্ত্র জানিলে বাঙ্গালা ভাষা শুদ্ধরূপে লিখিতে, পড়িতে ও বলিতে পারা যায় তাহার নাম বাঙ্গালা ব্যাকরণ।

ড. মুহম্মদ এনামুল হকের (১৯০২-৮২) মতে, 'যে শাস্ত্রের দ্বারা ভাষাকে বিশ্লেষণ করিয়া ইহার বিবিধ অংশের। পারস্পরিক সম্মন্ধ নির্ণয় করা যায় এবং ভাষা রচনাকালে আবশ্যকমত সেই নির্ণীত তত্ত্ব ও তথ্য প্রয়োগ সম্ভবপর হইয়া উঠে, তাহার নাম ব্যাকরণ।

বাংলা ব্যাকরণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, 'যে শাস্ত্রে বাংলা ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠনপ্রকৃতি ও স্বরূপ বিশ্লেষিত হয় এবং এদের সম্পর্ক ও সুষ্ঠু প্রয়োগবিধি আলোচিত হয়, তাই বাংলা ব্যাকরণ।'

সুতরাং, উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ-কথা স্পষ্ট যে ভাষার অভ্যন্তরীণ নিয়ম-শৃঙ্খলার আলোচনাই ব্যাকরণ। ব্যাকরণ বিশ্লেষণ করে-ভাষায় কখন কী হওয়া উচিত তা বলে না বা নির্দেশ করে না বা বিধান প্রণয়ন করে না, বর্ণনা করে মাত্র।

ব্যাকরণের সাহায্যে ভাষার সংগোপন অভ্যন্তর-সূত্র উদঘাটন করে ভাষার বিশুদ্য রূপ বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়। প্রসজাত রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেণী বলেছেন, 'আমি ব্যাকরণ নামে যে বিজ্ঞান শাস্ত্রের উল্লেখ করিতেছি তাহার উদ্দেশ্য ভাষা শেখান নহে। উহার উদ্দেশ্য নিজে শেখা, ভাষার ভিতরে কোথায় কী নিয়ম প্রচ্ছন্নভাবে রহিয়াছে, তাহাই আলোচনা দ্বারা আবিষ্কার করা।

ভাষা যেন বহতা নদী। উৎসদ্বার থেকে নদীর বিপুলকায় জলধারা বেরিয়ে সর্পিল গতিতে কত বাঁকে কত মোড় নিয়ে এগিয়ে চলে মোহনার দিকে। অনুরূপভাবে বিবর্তন, রূপান্তর ও ক্রমবিকাশের মধ্য দিয়ে ভাষারও অগ্রগতি ঘটে। ভাষার পরিবর্তনের সঙ্গে ব্যাকরণের নিয়মেও পরিবর্তন ঘটে। তাই ব্যাকরণ ভাষার সংবিধান হলেও তা অপরিবর্তনীয় এমনটি বলা যায় না।

 ভাষা কীভাবে চলবে বা ভীভাবে চলা উচিত তা ব্যাকরণ নির্ধারণ করতে পারে না। এক্ষেত্রে। ব্যাকরণের ভূমিকা ভাষাতে নিয়মের শৃঙ্খলে বেঁধে রাখা নয়, বরং পরিবর্তনের ধারায় ভাষাকে সুশৃঙ্খল, গতিশীল ও জীবন্ত করে রাখা। তাই বলা হয়-

ব্যাকরণ ভাষাকে শাসন করে না, বরং ভাষাই ব্যাকরণকে শাসন করে' অর্থাৎ, ব্যাকরণ ভাষাকে চলতে নির্দেশ দেয় না কিংবা শাসন করে না, বরং ভাষাই ব্যাকরণকে শাসন করে বা চলতে নির্দেশ দেয়, কিংবা ব্যাকরণ ভাষার বিষয়কে বর্ণনা করে মাত্র।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। ব্যাকরণ ও বাংলা ব্যাকরণের সংজ্ঞার্থ এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

পরবর্তী পোস্ট পূর্ববর্তী পোস্ট
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url