ব্যাকরণ কী ও কেন

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে ব্যাকরণ কী ও কেন নিয়ে আলোচনা করব।

ভাষার অভ্যন্তরীণ নিয়ম-শৃঙ্খলার আবিষ্কারের নামই ব্যাকরণ। আঠারো শতকের পঞ্চম দশকে বাংলা ভাষার অভ্যন্তরশৃঙ্খলা উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা শুরু হয় বিদেশিদের দ্বারা, ও ল্যাটিন-ইংরেজি ব্যাকরণ কাঠামোতে। তবে বালা ব্যাকরণের বয়সকাল মাত্র আড়াই শ' বছর, যেখানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বয়স হাজার বছর। বাঙালিদের মধ্যে রাজা রামমোহন রায়ই সর্বপ্রথম বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনা করেন।
ব্যাকরণ কী ও কেন

প্রথম বাংলা ব্যাকরণ রচিত হয় ১৭৪৩ সালে পর্তুগীজ ভাষায়। এর রচয়িতা ছিলেন মানোএল দা আসসুম্পসাঁউ। তিনি এটি রচনা করেন বাংলা-পর্তুগীজ অভিধানের ভূমিকা অংশ হিসেবে। এরপর নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড প্রণীত ইংরেজি ভাষায় রচিত পূর্ণাঙ্গ একটি বাংলা ব্যাকরণ প্রকাশিত হয় ১৭৭৮ সালে।
 
বইটির নাম 'এ গ্রামার অব দি বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ'। ১৮০১ সালে উইলিয়াম কেরি এবং ১৮২৬ সালে রামমোহন রায় ইংরেজি ভাষায় আরো দুটি উল্লেখযোগ্য বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন। ১৮৩৩ সালে প্রকাশিত রামমোহন রায়ের 'গৌড়ীয় ব্যাকরণ' বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম বাংলা ব্যাকরণ।

রামমোহনের পরে বহু বিদগ্ধ ভাষাতত্ত্ববিদ ও বৈয়াকরণের অক্লান্ত শ্রম-সাধনায় আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। বাংলা ব্যাকরণের আলোকেই আমরা প্রকৃতপক্ষে বাংলা ভাষার গঠন-প্রকৃতি ও শুদ্ধতার সঙ্গে পরিচিত হতে পারি। ব্যাকরণ ভাষার স্বরূপ ও প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করে।
 
প্রকৃতপক্ষে ব্যাকরণ হলো একটি ভাষা আমরা কীভাবে বলি তার নিয়মের সমষ্টি। ধ্বনি, শব্দ, বাক্য ইত্যাদি বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভাষার মধ্যকার সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করা ব্যাকরণের কাজ। ব্যাকরণশাস্ত্রে এসব বৈশিষ্ট্যকে সূত্রের আকারে সাজানো হয়ে থাকে।

ব্যাকরণ (বি+ আ + কৃ+ অন) শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ- বিশেষভাবে বিশ্লেষণ। ভাষাকে বর্ণনা করে বা বিশ্লেষণ করে দেখাবার চেষ্টা থেকেই ব্যাকরণের জন্ম, কিন্তু কী বর্ণনা করে দেখানো হবে? দেখানো হবে-ধ্বনিগুলো কীভাবে উচ্চারণ করব তার নিয়ম, কীভাবে শব্দ তৈরি করব তার নিয়ম, শব্দের রূপ-রূপান্তরই-বা কীভাবে সাধিত হয় সেসব নিয়ম,
 
শব্দকে জুড়ে কীভাবে পদবন্ধে রূপ দেব তার নিয়ম, আবার পদবন্ধ জুড়ে কীভাবে বাক্য নির্মাণ করব তার নিয়ম। এসব যদি আমরা বিশ্লেষণ করে দেখি তা হলে ভাষার কোনটি স্বভাবধর্ম তা ঠিকমতো বুঝতে পারব, কীসে তার স্বধর্মচ্যুতি তাও বুঝতে পারব। ব্যাকরণের এই সূত্র বাংলা ব্যাকরণের বেলায়ও খাটে।

দীর্ঘদিন ব্যবহারে ভাষায় যেসব রীতি প্রচলিত হয়েছে তার বিশ্লেষণই ব্যাকরণের বিষয়বস্তু। ভাষাকে অবলম্বন করেই ব্যাকরণের সৃষ্টি। ভাষার গতি, প্রকৃতি, তার স্বরূপ, ধরন-ধারণ ব্যাকরণে রূপ লাভ করে। ভাষার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ব্যাকরণ থেকে ধারণা লাভ করা যায়। ভাষা সৃষ্টি হয়েছে আগে, ব্যাকরণ এসেছে ভাষার পথ ধরে।
 
ভাষা ব্যবহারের ফলে যখন বিশেষ কিছু নিয়ম দাঁড়িয়ে গেছে তখন তা হয়ে উঠেছে ব্যাকরণের বিষয়। ব্যাকরণের নিয়মকানুন ভাষাকে বিশুদ্ধ রাখতে সহায়তা করে। সেজন্য ব্যাকরণকে 'ভাষার সংবিধান' বলা হয়। সংবিধানের মতো ব্যাকরণে ভাষার নিয়মকানুন থাকে। ব্যাকরণের নিয়মকানুন অনুসরণ করার মাধ্যমে ভাষার পঠনে, লিখনে ও বলায় শুদ্ধরূপ বজায় রাখা যায়। ব্যাকরণের জ্ঞান ভাষাকে নির্ভুল রাখতে সহায়তা করে।


কোনো ভাষা শিখতে, জানতে বা লিখতে গেলে দেখা যায়-সেই ভাষার বর্ণমালা থেকে শুরু করে বাক্যসংযোজন-প্রণালী পর্যন্ত সব কিছুতেই কোনো না কোনো নিয়মনীতি রয়েছে, যা মাতৃভাষার ক্ষেত্রে থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় তা আছে বলে মনে হয় না। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা বলেই এমনটি মনে হয়। আসলে ভাষা মুখ থেকে উচ্চারিত কতকগুলো এলোপাথাড়ি ধ্বনির সমষ্টি নয়।
 
বরং মুখ থেকে বেরিয়ে আসা ধ্বনিগুলোর মধ্যে সুস্পষ্ট ও সুশৃঙ্খল নিয়ম ও অর্থ থাকে। যেমন-"আমি 'উচ্চতর স্বনির্ভর বিশুদ্ধ ভাষা-শিক্ষা' বইটি পড়ি"-এই বাক্যটিকে যদি লেখা বা বলা হয় 'বইটি ভাষা-শিক্ষা আমি উচ্চতর পড়ি বিশুদ্ধ স্বনির্ভর' তাহলে কোনো সঠিক অর্থ যেমন হয় না, তেমনি এর ভেতর বক্তব্য প্রকাশের কোনো নিয়ম বা শৃঙ্খলাও লক্ষ করা যায় না।
 
কারণ এখানে বাংলা ভাষায় বাক্য গঠনের রীতি-নীতি মানা হয়নি। কাজেই দেখা যায়, ব্যাকরণ কোনো ভাষার উপাদান-উপকরণ প্রভৃতি বিশ্লেষণ করে তার রীতি-নীতি ও নিয়ম-পদ্ধতি আবিষ্কার করে ভাষার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার সন্ধান দিয়ে থাকে। ভাষার এই অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য উদ্‌ঘাটন ও নিয়ম-শৃঙ্খলা আবিষ্কার করে তার সুবিন্যস্ত ও সুসংহত বর্ণনার নামই ব্যাকরণ।

এক এক ভাষার নিয়ম-শৃঙ্খলা অন্য ভাষার চেয়ে আলাদা। ফলে প্রতিটি ভাষার ব্যাকরণও কমবেশি ভিন্ন বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। ভাষাভেদে ব্যাকরণের নামকরণও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন, বাংলা ভাষার জন্য-বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, ইংরেজি ভাষার জন্য English Grammar ইত্যাদি।
 

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। ব্যাকরণ কী ও কেন এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

পরবর্তী পোস্ট পূর্ববর্তী পোস্ট
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url