গণতন্ত্রের সংজ্ঞা নিরূপণ করো

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা নিরূপণ করো নিয়ে আলোচনা করব।

গণতন্ত্রের সংজ্ঞা নিরূপণ করো

গণতন্ত্রের সংজ্ঞা

গণতন্ত্র সম্পর্কে বিভিন্ন রাষ্ট্র দার্শনিক বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। অ্যারিস্টট্ল গণতন্ত্রের প্রকৃতি নিরূপণ করতে গিয়ে একে 'বিকৃত সরকার' বলে অভিহিত করেন। খ্রিষ্টপূর্ব 422 অব্দে গ্রিক দার্শনিক ক্লিয়ন বলেছেন, গণতন্ত্র হল তাই, যা জনগণের, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য। তবে গণতন্ত্রের সংজ্ঞাগুলিকে দু-ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। যথা-[1] ব্যাপক অর্থে গণতন্ত্র এবং [2] সংকীর্ণ অর্থে গণতন্ত্র।

ব্যাপক অর্থে গণতন্ত্র

ব্যাপক অর্থে গণতন্ত্র বলতে এমন একটি ব্যবস্থাকে বোঝানো হয়, যেখানে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গণতন্ত্র গড়ে তোলার কথা বলা হয়। এই অর্থে জনগণের হাতে চূড়ান্ত ক্ষমতা ন্যস্ত থাকার কথাও বলা হয়েছে। ব্যাপক অর্থে সেই রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা বলা হয়, যে রাষ্ট্রব্যবস্থা সাম্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।

গণতন্ত্র মানুষকে সমমর্যাদাসম্পন্ন করে। সি ডি বার্নস বলেছেন, গণতন্ত্র বলতে এমন একটি অবস্থাকে বোঝায়, যেখানে সকল ব্যক্তি সমরূপ না হলেও তারা সমাজের অবিচ্ছেদ্য ও অপরিহার্য অংশ হিসেবে সমান। আবার এমিল বার্নস্ তাঁর 'Ideas in conflict' (1960)-এ উল্লেখ করেছেন যে, Few words have been more loosely and variously defined than democracy. It has almost literally meant all things to all men.

সংকীর্ণ অর্থে গণতন্ত্র

সংকীর্ণ অর্থে যে সব রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রাষ্ট্রদার্শনিক গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দিয়েছেন, তাঁদের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা হল-

প্রথমত, অধ্যাপক ডাইসি গণতন্ত্রকে এমন এক শাসনব্যবস্থা বলে অভিহিত করার পক্ষপাতী, যে শাসনব্যবস্থায় বেশিরভাগ জনগণই অংশগ্রহণ করে।

দ্বিতীয়ত, অধ্যাপক গেটেলও অনুরূপভাবে বলেছেন, গণতন্ত্র হল এমন এক ধরনের সরকার, যেখানে বেশিরভাগ জনগণের অধিকার আছে সার্বভৌম ক্ষমতাকে প্রভাবিত করার।

তৃতীয়ত, একইরকমভাবে হলেও খানিকটা অন্য সুরে অধ্যাপক সিলি (Seeley) বলেছেন যে, গণতন্ত্র বলতে এরূপ এক শাসনব্যবস্থাকে বোঝায়, যে শাসনব্যবস্থায় সকলেই অংশ নিতে পারে।

চতুর্থত, অনেকে আব্রাহাম লিঙ্কন প্রদত্ত সংজ্ঞাকেই সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য বলে মনে করেছেন। তাঁর মতে, গণতান্ত্রিক সরকার হল-জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা, জনগণের সরকার। লিঙ্কন প্রদত্ত সংজ্ঞাটির তিনটি অংশ পাওয়া যায়। যেমন- [1] জনগণের জন্য-অর্থাৎ, গণতন্ত্রের একমাত্র লক্ষ্য হল, জনগণ ও তাদের কল্যাণ।

[2] জনগণের দ্বারা-এর অর্থ হল, গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের সম্মতিতে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় এবং জনসম্মতিই তাঁর ক্ষমতায় থাকার ভিত্তিস্বরূপ. [3] জনগণের সরকার-এর অর্থ হল, জনগণের দ্বারা সরকার গঠিত হলে জনগণই হল তার নিয়ন্ত্রক।

সমন্বয়মূলক সংজ্ঞা

'গণতন্ত্রের' এইসব সংজ্ঞা থেকে বোঝায় যে, গণতন্ত্র কেবল একটি শাসনব্যবস্থা বা সরকারের ধারণাকেই বোঝায় না, গণতন্ত্র বলতে এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বোঝায়, যেখানে জনগণের সম্মতি এবং রাজনৈতিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত। যেখানে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমতা নীতির কথা বলা হয়।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। গণতন্ত্রের সংজ্ঞা নিরূপণ করো এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url