অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির গুরুত্ব আলোচনা কর

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির গুরুত্ব আলোচনা কর নিয়ে আলোচনা করব।

অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির গুরুত্ব আলোচনা কর। অথবা, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব আলোচনা কর। অথবা, কৃষির গুরুত্ব/প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।

অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির গুরুত্ব আলোচনা কর

ভূমিকা: কোনো অর্থনীতির ভিত্তি হলো কৃষি। কৃষিকে ভিত্তি করে শিল্প গড়ে ওঠে। কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কৃষিই আমাদের খাদ্য সরবরাহের মূল উৎস।

কৃষির গুরুত্বঃ নিচে কৃষির গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:

  1. জাতীয় আয় বৃদ্ধিঃ কৃষি কার্যের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় শস্য ও বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনের মাধ্যমে জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়। এতে দেশে শিল্প স্থাপনের জন্য মূলধনের সৃষ্টি হয়।
  2. প্রধান পেশাঃ অনুন্নত দেশের ৭০% লোক প্রত্যেক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। কৃষিকাজের মাধ্যমে বহুলোক জীবিকানির্বাহ করে থাকে। তাদের দ্বারা উৎপন্ন বিভিন্ন কাঁচামাল দেশ-বিদেশের শিল্পকেন্দ্রে ব্যবহৃত হয়। তাই তারা পরোক্ষভাবে শিল্পের প্রথম স্তরের শ্রমিক হিসেবে কাজ করে।
  3. খাদ্যের যোগানঃ মানুষের প্রধান মৌলিক চাহিদা খাদ্য। কৃষি মানুষের এ মৌলিক চাহিদা পূরণ করে। বিভিন্ন প্রকার শস্য, মাছ, মাংস, ফলমূল, তরিতরকারি প্রভৃতি কৃষি হতে আসে। ২০১০ সালে বিশ্বে প্রায় ৬৭ কোটি ২০ লক্ষ মেট্রিক টন ধান এবং ৬৫ কোটি ১৩ লক্ষ মেট্রিক টন গম উৎপাদন হয় কৃষি থেকে।
  4. কর্মসংস্থানঃ পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ বিশেষ করে অনুন্নত দেশের জনগণের কর্মসংস্থান হয় কৃষি থেকে।
  5. শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহঃ খাদ্য ছাড়াও কৃষিজাত দ্রব্যাদিতে আমরা শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। কৃষিজাত দ্রব্যের ভিত্তি করে বিভিন্ন শিল্প গড়ে ওঠে। এগুলো হলো- বস্ত্র শিল্প, পাট শিল্প, চিনি শিল্প, চামড়া শিল্প, চা শিল্প, দুগ্ধ শিল্প, পশম ও রেশম শিল্প, মৎস্য শিল্প, কাঠ শিল্প ইত্যাদি।
  6. বৈদেশিক মুদ্রা আয়: বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের উৎস হিসেবে কৃষির গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন প্রকার কৃষিজাত দ্রব্য অর্থাৎ পাট, তুলা, চা, মাছ প্রভৃতি রপ্তানি করে পৃথিবীর বহুদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।
  7. শিল্প পণ্যের বাজার: কৃষিখাতে দেশে উৎপাদিত শিল্পপণ্যের বাজার হিসেবে কাজ করে। কৃষির উপর নির্ভরশীল জনপদ প্রয়োজনীয় শিল্পপণ্য যেমন- বস্ত্র, লবণ, তৈল, ওষুধপত্র, সার, কীটনাশক ওষুধ ইত্যাদি ক্রয় করে শিল্পের বাজার বিস্তৃত করে।
  8. হস্ত ও কুটির শিল্প: কৃষিজাত দ্রব্যাদির উপর নির্ভর করে পৃথিবীর বহু দেশে অসংখ্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গড়ে উঠেছে। তুলা, পাট, রেশম, তুঁতজাত প্রভৃতি কুটির শিল্পের উন্নয়নে সাহায্য করেছে।
  9. অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা: খাদ্য মানুষের মৌলিক চাহিদা। কৃষি খাদ্য ও শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল উৎপাদন করে দেশকে পরমুখাপেক্ষী হতে দেয় না। দ্রব্যের মূল্য স্থিতিশীল থাকে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
  10. পরিবহনে উন্নয়ন: কৃষিজাত পণ্যদ্রব্য আনা-নেয়াকে কেন্দ্র করে পরিবহন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ঘটেছে। ট্রাক, রেল, স্টিমার, লঞ্চ, নৌকা, ঠেলাগাড়ি প্রভৃতি কৃষিজাত পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণে সাহায্য করেছে।
  11. অঞ্চলভিত্তিক শিল্প স্থাপনঃ কৃষি বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্প স্থাপনে সাহায্য করে। অঞ্চলের কাঁচামালের উপর ভিত্তি করে উত্তরাংশে চিনি শিল্প, পূর্বাংশে পাট শিল্প এবং পাহাড়িয়া অঞ্চলের চা শিল্প গড়ে উঠেছে।
  12. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন: কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি করে জনগণের প্রয়োজনীয় খাদ্য চাহিদা মেটাতে পারে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করে।
  13. সরকারি আয়ের উৎসঃ ভূমি রাজস্ব এবং কৃষিপণ্যের উপর আরোপিত কর সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস।
  14. বাসস্থানের উপকরণের যোগানঃ কৃষি বিশ্বের অনুন্নত দেশের অধিকাংশ গরিব লোকের বাসস্থানের যোগান দেয়। কৃষিজাত পণ্য বাঁশ, বেত, শন, পাটখড়ি প্রভৃতি দ্বারা ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়।
  15. জ্বালানি সরবরাহঃ কৃষি হতে উৎপন্ন বাঁশ, কাঠ, পাটখড়ি প্রভৃতি এদেশের জনগণের জ্বালানির উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  16. কৃষি পদ্ধতিঃ ভূমি, জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি, পরিবহন ব্যবস্থা, ভূমি মালিকানা, লোকবসতি, শ্রমিক সরবরাহ, অর্থনৈতিক অবস্থার বিভিন্নতার কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন প্রকার চাষ পদ্ধতি চালু আছে।
  17. আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রভাব: আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কৃষিতে উন্নত দেশগুলোর প্রভাব বিভিন্নভাবে প্রতিফলিত হয় বলে দরিদ্র এবং খাদ্য ঘাটতির দেশগুলো আন্তর্জাতিক খাদ্য রাজনীতির শিকারে পরিণত হয়। ফলে তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি ব্যাহত হয়। সুতরাং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কৃষির ভূমিকা অত্যন্ত ব্যাপক।

আরো পড়ুনঃ কৃষিকাজ কী? কৃষিকাজের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।

উপসংহারঃ উপরিউক্ত আলোচনায় দেখা যায় যে, মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিটি স্তরে কৃষির বিরাট অবদান বিদ্যমান। এটি একটি দেশের কৃষি, শিল্প তথা সামগ্রিক সমৃদ্ধি ও উন্নতির চাবিকাঠি। সুতরাং অর্থনীতিতে কৃষির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে এবং প্রাথমিক শিল্প হিসেবে কৃষির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির গুরুত্ব আলোচনা কর এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url