আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কাকে বলে? আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের মধ্যে পার্থক্য দেখাও

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কাকে বলে? আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের মধ্যে পার্থক্য দেখাও নিয়ে আলোচনা করব।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কাকে বলে? আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের মধ্যে পার্থক্য দেখাও

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কাকে বলে? আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের মধ্যে পার্থক্য দেখাও। অথবা, অবাধ বাণিজ্য কী? অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা কর।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলতে দুই বা ততোধিক সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যে দ্রব্যসামগ্রী বা সেবাকর্মের আদান-প্রদানকে বুঝায়। বিশ্বের কোনো একটি দেশের সাথে অন্য কোনো দেশের যে বাণিজ্য চলে তাকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, কোনো দেশ তার সার্বভৌম সীমারেখার বাইরে অবস্থিত অন্য কোনো দেশ বা একাধিক দেশের সাথে যদি দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকার্যের আদান-প্রদান করে তবে তাকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলে।

এরূপ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক বিভিন্ন দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী যাতায়াত করেন। যেমন- বাংলাদেশের সাথে ভারতের কিংবা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের বাণিজ্য সংঘটিত হয়। এরূপ বাণিজ্যকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলে। নিম্নে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হলো:

  1. বাণিজ্য ক্ষেত্রের ভিন্নতা: একই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে সংঘটিত বাণিজ্য হলো অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য। যেমন- বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও রাজশাহী জেলার মধ্যে সংঘটিত বাণিজ্য হলো অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য। অন্যদিকে, দুই বা ততোধিক দেশের মধ্যে যে বাণিজ্য চলে তাই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। যেমন- বাংলাদেশ ও মিসরের মধ্যে বাণিজ্য হলে তা হবে আন্ত জাতিক বাণিজ্য।
  2. প্রাকৃতিক সম্পদের বিভিন্নতাঃ প্রাকৃতিক সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে একই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে যতটা পার্থক্য থাকে, বিভিন্ন দেশের মধ্যে তার চেয়ে অনেক বেশি পার্থক্য দেখা যায়। প্রাকৃতিক গ্যাস ছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদের তেমন একটা ভিন্নতা দেখা যায় না। কিন্তু ভারতে প্রাকৃতিক সম্পদের সমাহার বাংলাদেশ থেকে নিঃসন্দেহে ভিন্ন।
  3. উৎপাদনের উপকরণগুলোর গতিশীলতার তারতম্য: উৎপাদনের বিভিন্ন উপকরণ একই দেশের ভিতরে যতটা গতিশীল বিভিন্ন দেশের মধ্যে ততটা গতিশীল নয়। আবহাওয়ার তারতম্য, সামাজিক রীতিনীতির বিভিন্নতা, ভাষাগত পার্থক্য, যাতায়াতের খরচ ইত্যাদি কারণে দেশের বাইরে শ্রমের গতিশীলতা বাধাপ্রাপ্ত হয়।
  4. মুদ্রা ও ব্যাংক ব্যবস্থার পার্থক্য: অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে একই মুদ্রা এবং একই ব্যাংকিং ব্যবস্থা কার্যকর থাকে। তাই বাণিজ্যিক লেনদেনে ব্যবসায়ীরা কোনো বাধা বা সমস্যার সম্মুখীন হয় না। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাণিজ্যরত দেশগুলোর মুদ্রা ও ব্যাংকিং নীতির মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য থাকে। ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যবসায়ীদেরকে নানারকম সমস্যা ও জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়।
  5. বাজার ব্যবস্থার পার্থক্য: একই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারগুলোর মধ্যে ক্রেতাদের রুচি, অভ্যাস, পছন্দ ইত্যাদির তারতম্য দেখা যায়। ওজন ও পরিমাপ, যন্ত্রপাতির ধরন প্রভৃতি একটি দেশের ভিতরে যেমনটি থাকে বিভিন্ন দেশের মধ্যে তা দেখা যায় না। এসব কারণে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে দ্রব্যসামগ্রীর ক্রয়-বিক্রয় অবাধে চলে, কিন্তু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এক দেশের দ্রব্যসামগ্রী অন্য দেশে অবাধে বিক্রি হয় না।
  6. পৃথক বাণিজ্য নীতি: একই দেশের ভিতরে অভিন্ন বাণিজ্য নীতি অনুসৃত হয় বলে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য দ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয় সাধারণত একই নিয়মে চলে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য নীতি প্রযোজ্য হয় বলে আমদানি- রপ্তানির উপর নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপিত হয়। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বাণিজ্য নীতির সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য বাণিজ্যরত দেশগুলোকে বিভিন্ন বাণিজ্যিক কলাকৌশল ও পন্থার আশ্রয় নিতে হয়। ফলে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য পরিচালনা যত সহজ হয় তার চেয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালনা অনেক কঠিন ও জটিল হয়।
  7. উৎপাদন ব্যবস্থার পার্থক্য: একই দেশের ভিতরে কারখানা আইন, শ্রম ও রাজস্বনীতি, উৎপাদন কলাকৌশল, বণ্টন নীতি ইত্যদি প্রায় একইরকম থাকে। কিন্তু এ বিষয়গুলো দেশভেদে ভিন্ন ধরনের হয় বলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিভিন্ন দেশের মধ্যে একই ধরনের দ্রব্যের উৎপাদন ব্যয়ের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য দেখা যায়।
  8. লেনদেনের ভারসাম্যের সমস্যাঃ অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে লেনদেনের ভারসাম্যের কোনো সমস্যা নেই। অথচ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ সমস্যাটি বেশ জটিল ও চিরন্তন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে লেনদেনের ভারসাম্য সমস্যা সমাধানের জন্য মুদ্রার অবমূল্যায়ন, মুদ্রা সংকোচন, আমদানির উপর বাধানিষেধ আরোপ ইত্যাদি যেসব পদক্ষেপ গৃহীত হয় তার ফলে এ বাণিজ্য বেশ জটিল ও সমস্যা সংকুল হয়ে পড়ে।

উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের পরিচালনা যত সহজ তার চেয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালনা অনেক কঠিন ও জটিল হয়।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কাকে বলে? আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের মধ্যে পার্থক্য দেখাও এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url