সরকারি ঋণ বলতে কী বুঝায়? সরকারি খঋণের উদ্দেশ্যাবলি আলোচনা কর

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে সরকারি ঋণ বলতে কী বুঝায়? সরকারি খঋণের উদ্দেশ্যাবলি আলোচনা কর নিয়ে আলোচনা করব।

সরকারি ঋণ বলতে কী বুঝায়? সরকারি খঋণের উদ্দেশ্যাবলি আলোচনা কর

সরকারি ঋণ বলতে কী বুঝায়? সরকারি খঋণের উদ্দেশ্যাবলি আলোচনা কর। অথবা, সরকারি ঋণ কী? সরকার ঋণ গ্রহণ করেন কেন? অথবা, সরকারি ঋণ কী? সরকারি ঋণের উদ্দেশ্যসমূহ বর্ণনা কর।

সরকারি ঋণ: সাধারণ অর্থে, সরকারি ঋণ বলতে দেশের সরকার কর্তৃক গৃহীত ঋণকে বুঝায়। অনেক সময় ব্যক্তির ন্যায় সরকারকেও ঋণ গ্রহণ করতে হয়। সরকার সাধারণত কর ও অন্যান্য ফি এর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ রাজস্ব হতে ব্যয় নির্বাহ করার চেষ্টা করে।

কিন্তু সরকারের পক্ষে সবসময় কর ও অন্যান্য স্বাভাবিক উৎস হতে সংগৃহীত রাজস্ব দ্বারা সর্বপ্রকার ব্যয় মিটানো সম্ভব হয় না। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অন্যান্য জরুরি অবস্থার মোকাবিলা, যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহ প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে সরকারকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়।

এ ব্যয়ের পরিমাণ যদি সরকারের আয় অপেক্ষা বেশি হয় তাহলে সরকারকে ঋণ গ্রহণ করে এ ঘাটতি পূরণ করতে হয়। সুতরাং সরকারের আয় অপেক্ষা ব্যয় বেশি হলে তা পূরণের জন্য সরকার যখন দেশের অভ্যন্তরে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে অথবা বিদেশের নিকট হতে ঋণ গ্রহণ করে, তখন তাকে সরকারি ঋণ বলা হয়।

সরকারি ঋণের উদ্দেশ্যঃ প্রত্যেক দেশের সরকার জাতীয় ব্যয়নির্বাহের জন্য বিভিন্ন উৎস হতে রাজস্ব সংগ্রহ করেন। কিন্তু সংগৃহীত রাজস্ব দ্বারা অনেক সময় সরকারি ব্যয় মিটানো সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় সরকারকে ঋণ গ্রহণ করতে হয়। নিম্নে সরকারের ঋণ গ্রহণের বিভিন্ন কারণ আলোচনা করা হলোঃ

  1. সাময়িক ঘাটতি পূরণ: প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য সরকারকে নিয়মিত অর্থ ব্যয় করতে হয়। কিন্তু সরকার নিয়মিতভাবে আয় পান না। ফলে সরকারের আয়-ব্যয়ে অর্থের ঘাটতি পড়ে। এরূপ সাময়িক ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ গ্রহণ করতে হয়।
  2. জরুরি অবস্থার মোকাবিলা: অনেক সময় অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি দুর্যোগে কৃষিজ ও অন্যান্য সম্পদের উৎপাদন যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরূপ অবস্থা মোকাবিলার জন্য সরকার রাজস্ব প্রাপ্তির আশায় অপেক্ষা করতে পারে না। তা ছাড়া রাজস্ব আয় দ্বারা এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলা করাও সম্ভব নয়। কাজেই জরুরি অবস্থা মোকবিলার জন্য সরকার ঋণ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।
  3. ঘাটতি বাজেট পূরণ: সরকারের বাজেটে আয় অপেক্ষা ব্যয় বেশি হলে তাকে ঘাটতি বাজেট বলা হয়। অনেক সময় সরকারের আয় অপেক্ষা ব্যয় বেশি হয়, ফলে বাজেটে ঘাটতি দেখা দেয়। বাজেটের এরূপ ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার ঋণ গ্রহণ করতে বাধ্য হন।
  4. সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো গঠনঃ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সুদৃঢ় সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন। সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো বলতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানি, বিদ্যুৎ, পরিবহন, যোগাযোগ ইত্যাদি অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক বিষয়ের উন্নয়ন সাধানকে বুঝায়। এসবের উন্নয়নের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। সরকারকে ঋণ গ্রহণ করে দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো গঠন ও এদের উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হয়।
  5. যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহ: অনেক সময় এক রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য রাষ্ট্র যুদ্ধ করে। তা ছাড়া বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাহিনীকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা ও যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহ করার জন্য প্রচুর অর্থের দরকার হয়। জনগণের উপর কর ধার্য করে যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহ করা মোটেই সম্ভব নয়। সুতরাং যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহ, সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালীকরণ প্রভৃতির দরুন সরকারকে ঋণ গ্রহণ করতে হয়।
  6. মন্দাভাব দূরীকরণ: অর্থনীতিতে অনেক সময় মন্দাভাব দেখা দেয়। এ সময় জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়। ফলে দ্রব্যসামগ্রীর চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পায়। এতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এবং অসংখ্য শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে। এরূপ অবস্থায় অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিতকরণের জন্য সরকারকে বিনিয়োগ বাড়াতে হয়। বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারকে ঋণ গ্রহণ করতে হয়। এতে অর্থনীতিতে প্রাণের সঞ্চার হয়, অর্থনৈতিক কর্মতৎপরতা ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং মন্দাভাব দূরীভূত হয়।
  7. কল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন: দেশের জনগণের সার্বিক কল্যাণের জন্য সরকারকে অনেক কল্যাণমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করতে হয়। যেমন- শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, দরিদ্র জনগণের মধ্যে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ প্রদান, খাবার পানি সরবরাহ, বৃদ্ধ বয়সে পেনশন, বেকার ভাতা ইত্যাদি। এসবের ব্যয় মিটাবার জন্য সরকার ঋণ গ্রহণ করেন।
  8. মুদ্রাস্ফীতি রোধ: মুদ্রাস্ফীতির ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। এতে সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট বাড়ে এবং অর্থনৈতিক কর্মতৎপরতা ব্যাহত হয়। এ অবস্থায় দেশের মধ্যে যাদের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ আছে তাদের নিকট হতে সরকার ঋণ গ্রহণ করেন। ফলে। বাজারে অর্থের প্রচলনের গতি হ্রাস পায়, জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায় এবং মুদ্রাস্ফীতি রোধ করা সম্ভব হয়।
  9. আয় বৈষম্য দূরীকরণ: সরকার দেশের সম্পদশালী লোকদের নিকট হতে ঋণ গ্রহণ করে দরিদ্র জনসাধারণের কল্যাণ ও দেশের উন্নয়নমূলক কাজে অর্থ ব্যয় করতে পারেন। ফলে সমাজে ধনী ও দরিদ্রের আয় বৈষম্য অনেকাংশে দূর হয়।
  10. অর্থনৈতিক উন্নয়ন: অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জাতীয় আয় খুবই কম। তাই দেশে মূলধনের অভাব দেখা দেয়। এ অবস্থায় শুধু করের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ দ্বারা উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করা কোনোভাবেই সম্ভব হয় না। তাই সরকারকে দেশ ও বিদেশ হতে ঋণ গ্রহণ করে পরিকল্পনার ব্যয় নির্বাহ করতে হয়।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, সরকারকে বহুমুখী কাজ সম্পাদনের জন্য ঋণ গ্রহণ করতে হয়। বস্তুত বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশসমূহের জনসাধারণ অত্যন্ত দরিদ্র এবং এসব দেশে সম্পদের পরিমাণ খুবই কম। কাজেই দেশের ক্রমবর্ধমান সমস্যাবলির সমাধান তথ্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সরকারকে ঋণ গ্রহণ করতে হয়।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। সরকারি ঋণ বলতে কী বুঝায়? সরকারি খঋণের উদ্দেশ্যাবলি আলোচনা কর এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url