সুদ কাকে বলে? সুদের হারের পার্থক্যের কারণগুলো আলোচনা কর

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে সুদ কাকে বলে? সুদের হারের পার্থক্যের কারণগুলো আলোচনা কর নিয়ে আলোচনা করব।

সুদ কাকে বলে? সুদের হারের পার্থক্যের কারণগুলো আলোচনা কর

সুদ কাকে বলে? সুদের হারের পার্থক্যের কারণগুলো আলোচনা কর। অথবা, সুদের হারের তারতম্যের কারণগুলো ব্যাখ্যা কর। সুদঃ সুদ হলো মূলধন ব্যবহারের দাম। মূলধন ব্যবহারের জন্য তার মালিককে যে দাম দেয়া হয়, তাকে সুদ বলে। ব্যবসা - বাণিজ্যের অগ্রগতির সাথে সাথে অর্থ উপার্জনের জন্য মানুষ ক্রমান্বয়ে বেশি ঝুঁকে পড়ে। অর্থ উপার্জনের সঙ্গে সুদ শব্দটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

সুদ দেয়া-নেয়াকে অতীতে অসামাজিক, অধর্মীয় ও গর্হিত কাজ বলে তীব্রভাবে বিরোধিতা করা হতো। অ্যারিস্টটল সুদ গ্রহণকে অন্যায়, অস্বাভাবিক এবং প্রকৃতির নিয়মবিরোধী বলে মনে করতেন। ইসলাম ধর্মে সুদ গ্রহণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এতদসত্ত্বেও বর্তমান যুগে সুদের অবাধ লেনদেন চালু আছে। অর্থনীতিবিদগণ সুদ প্রদানের সপক্ষে নানা সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।

নিম্নে তাঁদের প্রদত্ত কয়েকটি প্রামাণ্য সংজ্ঞা তুলে ধরা হলোঃ
  • অধ্যাপক মার্শাল-এর মতে, "সুদ হলো ভবিষ্যৎ ভোগের জন্য প্রতীক্ষার পুরস্কার।
  • লর্ড কেইন্স-এর মতে, "একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তরল অর্থ হাতছাড়া করার পারিতোষিকই হলো সুদ।

উপরিউক্ত সংজ্ঞা হতে দেখা যায় যে, সুদ হলো অপেক্ষার বা প্রতীক্ষার পারিতোষিক। সুতরাং বলা যায়, মূলধন ব্যবহারের জন্য ঋণদাতাকে যে পারিতোষিক দেয়া হয় তাই সুদ। সুদের লেনদেন হতে সুস্পষ্ট যে, উৎপাদনে বৃদ্ধি তথা অর্থনৈতিক উন্নতি ও সমৃদ্ধি লাভের জন্য মূলধন অপরিহার্য। মূলধন লাভের জন্য মূলত সুদ দেয়া হয়।

সুদের হারের পার্থক্যের কারণঃ ব্যবহারের তারতম্যভেদে ঋণ বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। সকল প্রকার ঋণের সুদের হার কিন্তু সমান নয়। বিভিন্ন প্রকার ঋণের জন্য বিভিন্ন হারে সুদ দিতে হয়। সুদের হারের পার্থক্যের কারণগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

১। বিভিন্ন ব্যবহারঃ লগ্নিকৃত টাকা বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। অধিক উৎপাদনশীল বা লাভজনক বিনিয়োগে সুদের হার বেশি এবং কম উৎপাদনশীল বা কম লাভজনক বিনিয়োগে সুদের হার কম হয়।

২। বিভিন্ন মেয়াদঃ ঋণের মেয়াদের তারতম্যের কারণে সুদের হারেরও তারতম্য ঘটে। স্বল্পমেয়াদি ঋণের সুদের হার কম এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণের সুদের হার বেশি। ঋণের টাকা দীর্ঘকাল ধরে ঋণগ্রহীতার নিকট আটকা পড়ে থাকে বলে ঋণদাতা অধিক সুদ দাবি করে।

৩। ঝুঁকির পার্থক্য: সুদের হার ঝুঁকির মাত্রার উপরও নির্ভর করে। যেসব বিনিয়োগ বা ঋণ প্রদান অধিক ঝুঁকিবহুল সেসব ক্ষেত্রে সুদ বেশি হবে এবং ঝুঁকির মাত্রা কম হলে সুদের হার কম হবে।

৪। ঋণের পরিমাণঃ ঋণের পরিমাণও সুদের হারকে প্রভাবিত করে। ঋণের পরিমাণ বেশি হলে সুদের হার কম হবে এবং ঋণের পরিমাণ কম হলে সুদের হার বেশি হবে।

৫। ঋণের ব্যবস্থাপনা খরচঃ ঋণ দেয়া, ঋণের হিসাব রাখা এবং ঋণ আদায় সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা খরচ লাগলে যে ঋণের এই ব্যবস্থাপনা খরচ বেশি সেই ঋণের সুদ বেশি। আর ব্যবস্থাপনা খরচ কম হলে সুদের হারও কম হবে।

৬। সরকারি করঃ বিভিন্ন প্রকার ঋণপত্রের উপর সরকারের ধার্যকৃত করের পরিমাণ কম-বেশি হওয়ায় সুদের হারের পার্থক্য দেখা যায়।

৭। ঋণের জামিন: প্রায় সকল ঋণই জামিনের পরিবর্তে দেয়া হয়। সমপরিমাণ ঋণের জন্য বিভিন্ন মাত্রায় বিভিন্ন ধরনের জামিন পাওয়া যায়। জামিনের মাত্রা যত বেশি হবে সুদের হার তত কম হবে। মূল্যবান এবং সহজে বিক্রয়যোগ্য জামানতের ক্ষেত্রে সুদের হার কম আর যে জামানতের দাম কম এবং সহজে বিক্রয় করা যায় না ঐ ক্ষেত্রে সুদের হার বেশি হবে।

৮। প্রতিযোগিতার মাত্রাঃ ঋণের বাজারে ঋণের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে প্রতিযোগিতা যত তীব্র হবে সুদের হার তত কম হবে। অর্থাৎ পূর্ণ প্রতিযোগিতার বাজারে ঋণের সুদের হার কম এবং অপূর্ণ প্রতিযোগিতার বাজারের সুদের হার বেশি হয়।

৯। ঋণের গতিহীনতা: বিভিন্ন প্রকার ঋণের বিভিন্ন উৎস বা বাজার রয়েছে। যেমন- কৃষকদের জন্য কৃষি ব্যাংক, শিল্পপতিদের জন্য শিল্প ব্যাংক, ব্যবসায়ীদের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংক ইত্যাদি। এক বাজারের ঋণগ্রহীতা অন্য বাজার হতে ঋণ পায় না এবং ঋণগ্রহীতারা এক বাজার হতে অন্য বাজারে যেতে পারে না বলে ঋণের বাজারে গতিশীলতা নেই। এ গতিহীনতার দরুন সুদের হার বিভিন্ন হয়।

১০। বিনিয়োগ পরিবেশঃ বিনিয়োগ পরিবেশ অনুকূল এবং প্রতিকূল হতে পারে। দেশে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এতে ঋণের চাহিদা এবং তৎসঙ্গে সুদের হার বাড়বে। পক্ষান্তরে, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনীতিতে মন্দাভাব দেখা দিলে ঋণের চাহিদা হ্রাস পাবে এবং সুদের হারও কমবে। উপরে উল্লিখিত কারণে একই দেশে বিভিন্ন প্রকার ঋণের সুদের হার সমান থাকে না। এমনকি সুদের পরিবর্তনও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন হারে হয়।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। সুদ কাকে বলে? সুদের হারের পার্থক্যের কারণগুলো আলোচনা কর এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url