পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে জ্ঞানের অন্যান্য শাখার সম্পর্ক

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে জ্ঞানের অন্যান্য শাখার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করব।

পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে জ্ঞানের অন্যান্য শাখার সম্পর্ক

পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে জ্ঞানের অন্যান্য শাখার সম্পর্ক (Relationship of Civics and Good Governance with other disciplines) পৌরনীতি ও সুশাসন হলো নাগরিকতা বিষয়ক সামাজিক বিজ্ঞান। একজন নাগরিক পৌরনীতি ও সুশাসন অধ্যয়নের মাধ্যমে সুনাগরিক হয়ে ওঠে।

আর সুনাগরিক হওয়ার জন্য পৌরনীতি ও সুশাসন সমাজবদ্ধ মানুষের আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি ও নানামুখী কার্যাবলি নিয়ে আলোচনা করে। এর ফলে নাগরিকরা তাদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পায়।

আর অধিকার আদায় ও কর্তব্য পালন করতে গিয়ে একজন নাগরিককে পৌরনীতি ও সুশাসনের পাশাপাশি সমাজবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার (রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, নীতিশাস্ত্র, ইত্যাদি) সাথে পরিচিত হতে হয়। পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে এসব বিষয়ের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ।

কেননা উল্লিখিত বিষয়গুলোর প্রত্যেকটিই রাষ্ট্রের কল্যাণে ভূমিকা রাখে। ইংরেজ দার্শনিক হেনরি সিজউইক (Henry Sidgwick) -এর মতে, 'কোনো শান্ত সম্পর্কে সঠিক ও পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে হলে অন্যান্য শাস্ত্রের সাথে তার সম্পর্ক অনুধাবন করা প্রয়োজন।' জ্ঞানের এই শাখাগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক নিচে আলোচনা করা হলো-

পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক

পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক নিবিড়। একই চিন্তাভাবনার ধারাবাহিকতায় পৌরনীতি ও সুশাসন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান জন্ম লাভ করেছে। যে শাস্ত্র রাষ্ট্রের নাগরিকদের আচার-আচরণ ও কার্যকলাপ পর্যালোচনা করে তাকে পৌরনীতি ও সুশাসন বলে। আর যে শাস্ত্র রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কিত বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করে তাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলে। উভয় বিষয়ের পারস্পরিক সম্পর্ক নিচের মতো করে ব্যাখ্যা করা যায়:

ক. শাব্দিক অর্থে পৌরনীতি ও সুশাসন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান একই অর্থ নির্দেশ করে। ইংরেজি 'Civics' শব্দটি ল্যাটিন 'Civis' এবং 'Civitas' শব্দ হতে উদ্ভূত। যার অর্থ যথাক্রমে 'নাগরিক' এবং 'নগররাষ্ট্র'। অন্যদিকে ইংরেজি 'Politics' শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক 'Polites' ও 'Polis' শব্দ হতে, যার অর্থ যথাক্রমে 'নাগরিক' এবং 'নগররাষ্ট্র'।। সুতরাং দেখা যায়, শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থে পৌরনীতি ও সুশাসন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান এক ও অভিন্ন।

খ. পৌরনীতি ও সুশাসন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান উভয়ই রাষ্ট্রের মানুষের কার্যাবলি পর্যালোচনা করে। পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকতা বিষয়ক সামাজিক বিজ্ঞান, আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রবিষয়ক বিজ্ঞান। নাগরিক ও রাষ্ট্র অবিচ্ছেদ্য এবং পরস্পর নির্ভরশীল। নাগরিক ছাড়া যেমন রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয় তেমনি রাষ্ট্র ব্যতীত নাগরিকের অস্তিত্ব থাকতে পারে না। সুতরাং বলা যায়, পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক দেহ ও প্রাণের মতো। এদের যেকোনো একটিকে দেহ হিসেবে বিবেচনা করলে অন্যটিকে চিহ্নিত করতে হবে তার প্রাণ হিসেবে। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের (Aristotle)* মতে-'রাষ্ট্র হলো একটি সামগ্রিক সত্তা, আর নাগরিক হলো সেই সত্তার অংশবিশেষ।' সুতরাং নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, পৌরনীতি ও সুশাসন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠতা খুব নিবিড়।

গ. পৌরনীতি ও সুশাসন কেবল নাগরিকতা নিয়েই আলোচনা করে না। বরং, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মতো এটি রাষ্ট্র এবং এর বিভিন্ন উপাদান (জনসমষ্টি, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, সরকার, সার্বভৌমত্ব) সম্পর্কেও আলোচনা করে। সুতরাং বিষয়বস্তুর দিক থেকে উভয়ের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে কোনো সীমারেখা টানা সম্ভব নয়। কেননা উভয় বিষয়ই নাগরিক, নাগরিকতা, নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য, রাষ্ট্র, সরকার, সংবিধান, আইন, স্বাধীনতা, সাম্য, জাতি, জাতীয়তা, জাতীয়তাবাদ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। পৌরনীতি ও সুশাসন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যকার ব্যাপক সাদৃশ্যের জন্য অনেকেই পৌরনীতি ও সুশাসনকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অংশ বলে আখ্যায়িত করেন।

কিন্তু এত সাদৃশ্য থাকার পরও পৌরনীতি ও সুশাসন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। নিচে তা আলোচনা করা হলো-

  1. পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নাগরিক জীবনের পর্যালোচনা এবং এর সমস্যার বিচার-বিশ্লেষণ করে সমাধানের উপায় বের করে। অন্যদিকে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধান খোঁজে।
  2. পৌরনীতি ও সুশাসনের আলোচনা মূলত নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা মূলত রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। 
  3. রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং পৌরনীতি ও সুশাসনের বিষয়বস্তুর তুলনামূলক বিচারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু বিস্তৃত বলে ধরা হয়। সুতরাং বলা যায়, পৌরনীতি ও সুশাসন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যকার সম্পর্ক সামাজিক বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার চেয়ে ঘনিষ্ঠ। বিষয়বস্তু, পরিধি, দৃষ্টিভঙ্গিগত দিক থেকে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও জ্ঞানের এ শাখাদুটি পরস্পরের সহায়ক ও পরিপূরক।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে জ্ঞানের অন্যান্য শাখার সম্পর্ক এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url