অর্থনীতির বিষয়বস্তু আলোচনা কর অথবা, অর্থনীতির প্রকৃতি, পরিধি বা বিষয়বস্তু আলোচনা কর

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে অর্থনীতির বিষয়বস্তু আলোচনা কর অথবা, অর্থনীতির প্রকৃতি, পরিধি বা বিষয়বস্তু আলোচনা কর নিয়ে আলোচনা করব।

অর্থনীতির বিষয়বস্তু আলোচনা কর। অথবা, অর্থনীতির প্রকৃতি, পরিধি বা বিষয়বস্তু আলোচনা কর।

অর্থনীতির বিষয়বস্তু আলোচনা কর। অথবা, অর্থনীতির প্রকৃতি, পরিধি বা বিষয়বস্তু আলোচনা কর। অর্থনীতি একটি মানবিক তথা সামাজিক বিজ্ঞান। অর্থনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো 'Economics' যা জার্মান 'Oikonomia' শব্দ থেকে উদ্ভূত। 'Oikonomia' শব্দটি আবার 'Oikos' এবং 'Nomos' শব্দ দুটির সমন্বয়ে গঠিত। 'Oikos' অর্থ গৃহ এবং 'Nomos' অর্থ বিধি। অর্থাৎ 'Oikonomia' দ্বারা 'গার্হস্থ্য বিধি' বুঝায়। তাই উৎপত্তিগত অর্থে অর্থনীতি হলো একটি গার্হস্থ্য সংক্রান্ত বিজ্ঞান।

অর্থনীতির প্রকৃতি-পরিধি/বিষয়বস্তুঃ নিম্নে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে অর্থনীতির বিষয়বস্তু/আওতা বা পরিধি সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

  1. সমাজবদ্ধ মানুষের কার্যাবলির আলোচনা: অর্থনীতি সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবদ্ধ মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলি আলোচনা করে। সমাজ বিচ্ছিন্নদের কার্যাবলি অর্থনীতির আওতাভুক্ত নয়।
  2. অর্থনৈতিক কার্যাবলির আলোচনা: মানুষের সকল কাজ অর্থনীতির আওতাভুক্ত নয়। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কার্যাবলি অর্থাৎ অর্থোপার্জন ও অর্থ ব্যয়সংক্রান্ত কার্যাবলি আলোচনা করে। কেয়ার্নক্রস বলেছেন, "মানুষের কার্যাবলির যে অংশ অর্থের সাথে জড়িত তার আলোচনাই অর্থনীতির বিষয়বস্তু।
  3. প্রত্যক্ষ ও নিরপেক্ষ বৈজ্ঞানিক আলোচনা: অর্থনীতি একটি প্রত্যক্ষ ও নিরপেক্ষ বিজ্ঞান যা সংঘটিত হয়েছে বা হতে পারে সেগুলোই অর্থনীতির আওতাভুক্ত। কী করা উচিত, কী উচিত নয় তা অর্থনীতির বিষয় নয়। রবিন্স-এর মতে, অর্থনীতি হলো 'প্রত্যক্ষ' ও 'উদ্দেশ্য নিরপেক্ষ'।
  4. আদর্শ বিজ্ঞান: মার্শাল, হিকস, পিণ্ড প্রমুখের মতে, অর্থনীতি শুধু প্রত্যক্ষ বিজ্ঞান নয়, এটি আদর্শমূলক বিজ্ঞান। "অর্থনীতি অধ্যয়নের দ্বারা আমরা এমন একটি কৌশল আয়ত্ত করতে পারি যা দ্বারা আমাদের বিশেষ সমস্যাগুলো নির্ভুলভাবে সমাধান করা যায়।"-(কেইন্স)। 
  5. অভাব মোচন ও কল্যাণ সাধন: অর্থনীতি মানুষের অভাব মোচন ও কল্যাণ সাধনের প্রচেষ্টা চালায়। ফিসার বলেছেন, "অর্থনীতির প্রধান উদ্দেশ্য হলো সম্পদের সাথে মানুষের জীবন ও কল্যাণের সংযোগ নির্দেশ করা।
  6. সমস্যার সমাধান: ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের অভাব অসীম, কিন্তু সম্পদ সীমিত। এই সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে উৎপাদন, বণ্টন ও ভোগের সাথে জড়িত কার্যাবলি অর্থনীতির বিষয়বস্তু। সেনিগম্যান বলেছেন, "যেসব শক্তি সামাজিক আয় বা জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধির সহায়তা করে এবং বিভিন্ন শ্রেণি ও ব্যক্তিবিশেষের মধ্যে সম্পদ বৃদ্ধির সহায়তা করে এবং বিভিন্ন শ্রেণি ও ব্যক্তিবিশেষের মধ্যে সম্পদের বণ্টন নিয়ন্ত্রণ আলোচনা করে তা হলো অর্থনীতির প্রকৃত বিষয়বস্তু।
  7. বিভিন্ন তত্ত্ব ও বিভাগের আলোচনা: অর্থনীতি উৎপাদন, বিনিয়োগ, বণ্টন, মূল্য নির্ধারণ, জনসংখ্যা, খাজনা, সুদ, ব্যাংকিং, সরকারি অর্থব্যবস্থা, বাণিজ্য প্রভৃতি তত্ত্ব ও বিভাগসমূহ আলোচনা করে।
  8. অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রণয়ন: উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ, বাজেট প্রণয়ন প্রভৃতি অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য বিষয়বস্তু যা কল্যাণমুখী রাষ্ট্র পরিচালনায় সহায়তা করে। দ্রুত ও সুষ্ঠু অর্থনৈতিক উন্নয়নই উন্নয়নশীল দেশসমূহের প্রধান লক্ষ্য।

উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটা স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, অর্থনীতির বিষয়বস্তু বা পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধাপে ধাপে মানুষের চিন্তাধারায় যেমন বৈপ্লবিক পরিবর্তন ও সম্প্রসারণ ঘটেছে, তেমনি অর্থনীতির বিষয়বস্তু বা পরিধির ক্ষেত্রেও নব নব সংযোজন ঘটছে।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। অর্থনীতির বিষয়বস্তু আলোচনা কর অথবা, অর্থনীতির প্রকৃতি, পরিধি বা বিষয়বস্তু আলোচনা কর এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url