মুদ্রাস্ফীতি কাকে বলে? মুদ্রাস্ফীতির কারণসমূহ বর্ণনা কর

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে মুদ্রাস্ফীতি কাকে বলে? মুদ্রাস্ফীতির কারণসমূহ বর্ণনা কর নিয়ে আলোচনা করব।

মুদ্রাস্ফীতি কাকে বলে? মুদ্রাস্ফীতির কারণসমূহ বর্ণনা কর

মুদ্রাস্ফীতি: মুদ্রাস্ফীতি এমন এক অর্থনৈতিক অবস্থা যখন স্বল্পকালের ব্যবধানে দ্রব্যাসামগ্রীর দাম দ্রুত ও ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। ঠিক তখনই মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। সাধারণত দেশে অর্থের যোগান বৃদ্ধির ফলে দ্রব্যসামগ্রীর কার্যকর চাহিদা বাড়ে, অথচ সে তুলনায় দ্রব্য ও. সেবার উৎপাদন বাড়ে না, তখন দেশের সার্বিক দামস্তর দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় অর্থের মূল্য তথা জনগণের ক্রয়ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পায় এবং অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হয়।

  • অর্থনীতিবিদ ক্রাউথার (Crowther)-এর মতে, মুদ্রাস্ফীতি এমন একটি অবস্থা যখন অর্থের মূল্য ক্রমাগত হ্রাস পায়, অর্থাৎ দ্রব্যের দাম ক্রমেই বাড়ে।
  • কুলবর্ণ বলেন, মুদ্রাস্ফীতি এমন এক পরিস্থিতি যখন বেশি পরিমাণ অর্থ অল্প পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রীর পেছনে ধাবিত হয়।
  • অধ্যাপক পিও-এর মতে, যখন আর্থিক আয় উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডের তুলনায় বেশি হারে বাড়ে তখনই মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদগণ মুদ্রাস্ফীতি সম্পর্কে এ ধরনের ধারণা পোষণ করেন।

কিন্তু আধুনিক অর্থবিজ্ঞানী লর্ড কীনস্ (Keynes)-এর মতে, পূর্ণনিয়োগ অবস্থার পরে উৎপাদনের পরিমাণ স্থির থেকে মোট কার্যকর চাহিদা বৃদ্ধির ফলে দামস্তরের যে ক্রমাগত বৃদ্ধি ঘটে তা-ই হলো প্রকৃত মুদ্রাস্ফীতি।

সুতরাং সমাজের দ্রব্যসামগ্রীর যোগানের তুলনায় মোট চাহিদা বৃদ্ধির ফলে দামস্তরের যে ক্রমাগত বৃদ্ধি ঘটে এবং অর্থের মূল্য হ্রাস পেতে থাকে, সেই অবস্থাকে মুদ্রাস্ফীতি বলে মুদ্রাস্ফীতির কারণসমূহ: কিন্তু সময়ব্যাপী দামস্তরের ক্রমাগত বৃদ্ধিকে মুদ্রাস্ফীতি বলে। নিম্নলিখিত বিভিন্ন কারণে মুদ্রাস্ফীতি ঘটেঃ

  1. অর্থের যোগান বৃদ্ধি: ও মুদ্রাস্ফীতির অন্যতম প্রধান কারণ হলো উৎপাদনের তুলনায় অর্থের যোগান বৃদ্ধি। দ্রব্যসামগ্রীর উৎপাদন না বেড়ে যদি অর্থ ও ঋণের যোগান এবং অর্থের প্রচলন গতি বাড়ে তবে দ্রব্যসামগ্রী ক্রয়ের চাহিদা বাড়ে। কিন্তু সে অনুযায়ী উৎপাদন না বাড়লে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। কিন্তু অর্থের যোগান বাড়ার সাথে সাথে উৎপাদন বাড়লে মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাবনা থাকে না।
  2. সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি: দেশের উন্নয়নমূলক ও অন্যান্য কারণে সরকারি ব্যয় বাড়লে সাথে সাথে স্বল্পকালে উৎপাদন বাড়ে না। ফলে মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হয়। জনসাধারণের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে এ ব্যয় নির্বাহ করলে মুদ্রাস্ফীতির তেমন ভয় থাকে না। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা বিদেশি উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ ও ব্যয় করা হলে অর্থের যোগান বাড়ে ও মুদ্রাস্ফীতি ঘটে।
  3. ঘাটতি ব্যয়: সরকারের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলে দেশের ভেতরে অথবা বাইরে থেকে ঋণ গ্রহণ, নতুন নোট ছাপানো ইত্যাদি দ্বারা ঘাটতি ব্যয় পূরণ করা হয়। এ ঘাটতি ব্যয়ের ফলে অর্থের যোগান বাড়লেও সে অনুপাতে উৎপাদন বাড়ে না।
  4. দাম স্তর ঊর্ধ্বমুখী হয়: এর ফলে জনগণের চাহিদা বাড়ে ও মুদ্রাস্ফীতি হয়। ব্যাংক ঋণের প্রসারঃ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যখন বেশি পরিমাণে ঋণ প্রদান করে তখন অর্থের যোগান বৃদ্ধি পায়।
  5. ব্যয়যোগ্য আয় বৃদ্ধি: সমাজে ব্যয়যোগ্য আয় বাড়লে দ্রব্যসামগ্রীর চাহিদা বাড়ে। ফলে দাম স্তর বাড়ে। অতীত সঞ্চয়ের ব্যবহার, বর্তমান সঞ্চয় হ্রাস, মজুরি বৃদ্ধি, ভোগ বৃদ্ধি, কর হ্রাস প্রভৃতি কারণে ব্যয়যোগ্য আয় বাড়তে পারে।
  6. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উদ্বৃত্ত: দেশে আমদানির চেয়ে রপ্তানি বেশি হলে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত সৃষ্টি হয়। ফলে আয়স্তর বাড়ে এবং জনগণের চাহিদা বাড়ে। কিন্তু সে তুলনায় উৎপাদন না বাড়লে দ্রব্যসামগ্রীর দাম বাড়ে।
  7. জনসংখ্যা বৃদ্ধি: দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে দ্রব্যসামগ্রীর চাহিদা বাড়ে। কিন্তু সে তুলনায় উৎপাদন না বাড়লে দাম স্তর বাড়ে। অতিরিক্ত জনসংখ্যার দেশে এ ধরনের মুদ্রাস্ফীতি দেখা যায়। 
  8. উৎপাদন হ্রাস: উৎপাদনের উপকরণগুলোর অপর্যাপ্ততা যোগান ও দাম বৃদ্ধি, প্রকৃতির দুর্যোগ, বিনিয়োগ হ্রাস প্রভৃতি কারণে দেশে কৃষি ও শিল্পের উৎপাদন কমে যায়। এ অবস্থায় দ্রব্যসামগ্রীর যোগান কমে। কিন্তু অর্থের যোগান ও জনগণের চাহিদা বাড়লে দাম স্তর বাড়তে থাকে।
  9. মজুরি বৃদ্ধিঃ শ্রমিকের মজুরি ও সুদের হার বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন ব্যয় বাড়ে। ফলে উৎপাদন কমে এবং দামস্তর ঊর্ধ্বমুখী হয়। এ ধরনের মুদ্রাস্ফীতিকে ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি বলে।
  10. মজুতদারি ও চোরাচালান: অনেক সময় দেশে দ্রব্যসামগ্রীর মজুতদারি ও চোরাচালানের ফলে দ্রব্যের অভ্যন্তরীণ যোগান কমে যায়। ফলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।
  11. যুদ্ধের ব্যয়: যুদ্ধকালীন সময়ে দেশে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। যুদ্ধের ব্যয় মেটানোর জন্য অতিরিক্ত অর্থ ছাপাতে হয় বলে অর্থের যোগান বাড়ে। কিন্তু যুদ্ধের ফলে উৎপাদন না বেড়ে বরং তা কমে যায়। ফলে দ্রব্যসামগ্রীর দাম বাড়ে।
  12. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা: রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলার জন্য দেশে উৎপাদন কার্যক্রম বিঘ্নিত হয় এবং বিনিয়োগ ব্যাহত হয়। ফলে উৎপাদন কমে যায়। এভাবে দ্রব্যাদির চাহিদার তুলনায় যোগান না বাড়ায় দামস্তর ঊর্ধ্বগামী হয়।

উপরিউক্ত আলোচনা শেষে সার্বিক বিশ্লেষণে মুদ্রাস্ফীতির কারণগুলোকে দুটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। তা হলো দ্রব্যসামগ্রীর বর্ধিত চাহিদা এবং অবর্ধিত যোগান। দ্রব্যসামগ্রীর যোগানের চেয়ে চাহিদা বৃদ্ধি পেলে এবং সে তুলনায় যোগান না বাড়লে মুদ্রাস্ফীতি ঘটে।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। মুদ্রাস্ফীতি কাকে বলে? মুদ্রাস্ফীতির কারণসমূহ বর্ণনা কর এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url