বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি কী? বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতির কারণসমূহ আলোচনা কর

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি কী? বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতির কারণসমূহ আলোচনা কর নিয়ে আলোচনা করব।

বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি কী? বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতির কারণসমূহ আলোচনা কর

বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি কী? বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতির কারণসমূহ আলোচনা কর। অথবা, কী কী কারণে বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি হয় আলোচনা কর।  অথবা, বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির কারণ এবং অর্থনীতিতে এর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা কর।

বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি: দ্রব্যসামগ্রীর দাম স্বল্পকালের ব্যবধানে দ্রুত বাড়লে তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলে। এ অবস্থায় অর্থের ক্রয়ক্ষমতা ক্রমাগত কমতে থাকে। অন্যকথায়, সমপরিমাণ দ্রব্য ও সেবা কেনার জন্য বেশি বেশি অর্থের প্রয়োজন হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রয়োজনে বাংলাদেশে অর্থ ও ঋণের যোগান ক্রমাগত বাড়ছে। তা ছাড়া এদেশে প্রশাসনিক ব্যয় বেড়ে চলছে।

উপরন্তু এখানে উৎপাদনের বিভিন্ন উপকরণ ও আমদানি দ্রব্যের দাম বাড়ায় দ্রব্যসামগ্রী ও সেবার দাম বাড়ছে। পাশাপাশি প্রত্যাশিত হারে উৎপাদন বাড়ছে না। কিন্তু জনসংখ্যা বাড়ার ফলে চাহিদা বাড়ার জন্য দামস্তর বাড়ছে। শ্রমিকের মজুরিও বাড়ছে। ফলে দেশে ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে। উপরন্তু বাংলাদেশে কোনো কোনো সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগহেতু ফসলহানি, পরিবহন সমস্যা, বণ্টন ব্যবস্থার ত্রুটি প্রভৃতি কারণে মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশে ২০০৫-০৬ অর্থবছরের ভিত্তি মূল্যে ২০১২-১৩ অর্থবছরে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি পূর্ববর্তী অর্থবছরের (৮.৬৯ শতাংশ) তুলনায় হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ৬.৭৮ শতাংশ। আলোচ্য ভিত্তি মূল্যে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে ২০১২-১৩ অর্থবছরের এপ্রিল মাসের মূল্যস্ফীতির হার ৮.৩৭ শতাংশ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের ৭.৪৬ শতাংশে নেমে এসেছে। বার্ষিক গড় ভিত্তিতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৬.৪৬ শতাংশ।

তবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়শীল দেশে এ ধরনের মুদ্রাস্ফীতি চরম উদ্বেগের কারণ নয়। সার্বিকভাবে দেশে বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক তৎপরতা যথেষ্ট বৃদ্ধি পাচ্ছে না বলে মুদ্রাস্ফীতির অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে না।

বংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির কারণ এবং অর্থনীতিতে এর প্রভাব: বিগত একদশক ধরে বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০১৩- ২০১৪ অর্থবছরে এ মুদ্রাস্ফীতির গড় হার ছিল প্রায় ৭.৩৮ শতাংশ ও ২০১৫ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৬.১৯%। মুদ্রাস্ফীতির সাধারণ কারণগুলোর সাথে কিছু বিশেষ কারণ যুক্ত হয়ে এদেশে মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছে। এদেশে মুদ্রাস্ফীতির প্রধান কারণগুলো নিচে আলোচনা করা হলোঃ

  1. অর্থের যোগান বৃদ্ধিঃ বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির অন্যতম প্রধান কারণ হলো অর্থের যোগানের বিপুল বৃদ্ধি। অতীতের তুলনায় সাম্প্রতিক কালে আমাদের দেশে অর্থের যোগান যথেষ্ট বেড়েছে। অর্থের যোগান বিপুল পরিমাণে বাড়লেও দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাদির পরিমাণ তার তুলনায় বাড়েনি। ফলে দামস্তর বেড়ে মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি করেছে। এটি অর্থনীতির উপর বিশেষ প্রভাব ফেলেছে।
  2. জনসংখ্যা বৃদ্ধি: বাংলাদেশের জনসংখ্যা অতীতের তুলনায় অত্যন্ত দ্রুত বেড়েছে। কিন্তু নানা কারণে বর্ধিত জনসংখ্যার তুলনায় দ্রব্য ও সেবাদির উৎপাদন তেমন বাড়েনি। ফলে অতিরিক্ত চাহিদা দামস্তর বাড়িয়ে মুদ্রাস্ফীতি ঘটিয়েছে।
  3. উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি: বিদ্যমান মুদ্রাস্ফীতির আরেকটি কারণ হলো উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি। সুষ্ঠু পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব মজুরি ও জ্বালানি তেলের দামসহ উৎপাদনের বিভিন্ন উপকরণের দাম ক্রমাগতভাবে বাড়ার ফলে উৎপাদন ব্যয় যথেষ্ট বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবে দামস্তরও বেড়েছে।
  4. আমদানিজাত দ্রব্যাদির দাম বৃদ্ধি: বাংলাদেশকে প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে নানা ধরনের প্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করতে হয়। বিগত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের আমদানি পণ্যের দাম যথেষ্ট বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দামস্তর বেড়ে মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি করেছে।
  5. মজুতদারি ও চোরাকারবার: দেশের অর্থনীতির বিপর্যস্ত অবস্থার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির মজুতদার, কালোবাজারি ও চোরাচালানকারী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী মজুদ কিংবা চোরাচালান করে। এ কারণে দেশে দ্রব্যসামগ্রীর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয় ও মূল্যস্ফীতি ঘটে।
  6. অতিরিক্ত পরোক্ষ করের প্রভাব: অধুনা বছরগুলোতে বাংলাদেশ সরকার তার বর্ধিত ব্যয়ভার মেটানোর জন্য বিভিন্ন পরোক্ষ করের হার ক্রমান্বয়ে বাড়িয়েই চলছে। বর্ধিত পরোক্ষ কর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দাম বাড়ায়। সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির এ প্রয়াসে জিনিসপত্রের দাম দ্রুত বেড়েছে।
  7. রপ্তানি বৃদ্ধিঃ ইদানীংকালে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার উদ্দেশ্যে এমনসব দ্রব্য রপ্তানি করা হচ্ছে এখনও দেশে যেগুলোর ঘাটতি রয়েছে। ফলে রপ্তানির পর সীমিত পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রীর জন্য চাহিদা অতিরিক্ত হয়ে পড়ছে। এতে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে।
  8. উদার ঋণনীতি: সাম্প্রতিক কালে দেশে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিশেষায়িত ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মারফত বিভিন্ন খাতে উদার ভিত্তিতে বিপুল পরিমাণ ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এ ঋণের বেশিরভাগই অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহৃত হওয়ায় এবং অনাদায়ী থাকায় তা মুদ্রাস্ফীতিকে বাড়িয়ে চলছে।
  9. সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি: বিগত বছরগুলোতে গৃহীত অর্থনৈতিক পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকার প্রচুর অর্থ ব্যয় করলেও উৎপাদনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় নি। তা ছাড়া সরকার ইদানীংকালে অনুৎপাদনশীল খাতেও যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করে থাকে। ফলে দ্রব্যসামগ্রীর দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে।
  10. বেতন ও মজুরি বৃদ্ধিঃ গত কয়েক বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে যাওয়ায় সরকার সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত কলকারখানার কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতন ও মজুরি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। কিন্তু চাকরিতে আর্থিক সুবিধাদি বৃদ্ধির অনুপাতে দ্রব্যসামগ্রীর উৎপাদন তেমন বাড়েনি। ফলে জিনিসপত্রের দাম খুব বেড়ে মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি করেছে।

পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির জন্য উল্লিখিত কারণগুলো মূলত দায়ী। তবে এ মুদ্রাস্ফীতির পিছনে আরও কিছু কারণ পরোক্ষভাবে কার্যকর। এগুলো হলো বিভিন্ন খাত থেকে ক্রমান্বয়ে ভর্তুকি প্রত্যাহার, প্রবাসীদের ওয়েজআর্নার স্কিমের মাধ্যমে দেশে অর্থ প্রেরণ প্রভৃতি।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি কী? বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতির কারণসমূহ আলোচনা কর এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url