জাতীয় আয়ের সংজ্ঞা দাও | জাতীয় আয় পরিমাপের গুরুত্ব বর্ণনা কর

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে জাতীয় আয়ের সংজ্ঞা দাও | জাতীয় আয় পরিমাপের গুরুত্ব বর্ণনা কর নিয়ে আলোচনা করব।

জাতীয় আয়ের সংজ্ঞা দাও। জাতীয় আয় পরিমাপের গুরুত্ব বর্ণনা কর। অথবা, জাতীয় আয় কাকে বলে? জাতীয় আয়ের গুরুত্ব বর্ণনা কর।

জাতীয় আয়ের সংজ্ঞা দাও | জাতীয় আয় পরিমাপের গুরুত্ব বর্ণনা কর

জাতীয় আয়: একটি নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক বছরে একটি দেশে যে হারে দ্রব্যসামগ্রী ও সেবা কার্যের সৃষ্টি হয় তাদের অর্থমূল্যের সমষ্টিকে জাতীয় আয় বলে। আর একটু ভিন্নভাবে বলা যায় যে, কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত একবছরে কোনো দেশের উৎপাদনের সব উপকরণসমূহ উৎপাদন কাজে নিয়োজিত হয়ে মোট যে পরিমাণ বস্তুগত ও অবস্তুগত দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম সৃষ্টি করে তার আর্থিক মূল্যকে জাতীয় আয় বলে। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে অর্থনীতিবিদগণ জাতীয় আয়ের সংজ্ঞা দান করেছেন। নিম্নে তাঁদের দেয়া কয়েকটি প্রামাণ্য সংজ্ঞা তুলে ধরা হলোঃ

  • অধ্যাপক মার্শাল বলেছেন, "কোনো দেশের শ্রম ও মূলধন তার প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহার করে সবরকম সেবাসহ মোট যে পরিমাণ বস্তুগত ও অবস্তুগত দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করে, তাকে জাতীয় আয় বলে।"
  • অর্থনীতিবিদ পিশুর মতে, "বিদেশ থেকে প্রাপ্ত আয়সহ সমাজের বস্তুগত আয়ের যে অংশ অর্থ দ্বারা পরিমাপযোগ্য তাই জাতীয় আয়।"
  • অধ্যাপক স্যামুয়েলসন-এর ভাষায়, "কোনো দেশের অর্থনীতিতে উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্মের বার্ষিক প্রবাহের মোট অর্থমূল্যকে জাতীয় আয় বলে।"
  • অধ্যাপক লিন্দী বলেছেন, "জাতীয় আয় হচ্ছে কোনো দেশের একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যে পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম উৎপন্ন হয়, তাদের মোট বাজার মূল্য এবং ঐ সময়ের মধ্যে অর্জিত আয়ের সমষ্টি।"

জাতীয় আয় পরিমাপের গুরুত্বঃ যে-কোনো দেশের অর্থনীতিতে জাতীয় আয়ের আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতীয় আয়ের গুরুত্ব নিচে আলোচনা করা হলোঃ

  1. অর্থনৈতিক অবস্থার মানদণ্ডঃ জাতীয় আয় হলো একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার মানদণ্ড। কোনো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন তা জাতীয় আয়ের আলোচনা থেকে জানা যায়। জাতীয় আয়ের বিশ্লেষণের মাধ্যমেই একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্বন্ধে ধারণা করা যায়।
  2. জীবনযাত্রার মান নির্দেশঃ জাতীয় আয় দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান নির্দেশ করে। কোনো দেশের জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান কোনো স্তরে রয়েছে তা সে দেশের জাতীয় ও মাথাপিছু আয়ের হিসাব হতে বুঝা যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দৈশের জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানের তুলনামূলক চিত্র তাদের জাতীয় আয়ের হিসাব হতে পাওয়া যায়।
  3. অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক: জাতীয় আয়কে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কোনো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটছে না অবনতি ঘটছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ঊর্ধ্বমুখী না নিম্নমুখী তা জাতীয় আয় এবং এর পরিবর্তনের ধারা থেকে জানা যায়।
  4. বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার তুলনাঃ জাতীয় আয় পাঠের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে তুলনা করা যায়। বিভিন্ন দেশের জাতীয় আয়ের পরিসংখ্যান হতে তাদের মধ্যকার অর্থনৈতিক অবস্থার একটি তুলনামূলক চিত্র পাওয়া যায়।
  5. বিভিন্ন তথ্যের সন্ধানঃ জাতীয় আয়ের হিসাব হতে একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যের সন্ধান লাভ করা যায়। জাতীয় আয় আলোচনার মাধ্যমে একটি দেশের মোট উৎপাদন, সঞ্চয়, বিনিয়োগ, ভোগ, ব্যয় প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যায়।
  6. বিভিন্ন খাতে অবদান সম্পর্কে ধারণাঃ জাতীয় আয়ের হিসাব হতে দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের অবদান সম্পর্কে ধারণা করা যায়। যেমন- কোনো দেশের অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক না শিল্পভিত্তিক তা জাতীয় আয়ের আলোচনা হতে জানা যায়। দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাত বা উৎস হতে কী পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদিত হচ্ছে তা জাতীয় আয়ের খাতওয়ারি আলোচনা থেকে জানা যায়।
  7. সম্পদের বণ্টনঃ জাতীয় আয়ের হিসাব থেকে একটি দেশের সম্পদের বণ্টন সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। একটি দেশের সম্পদের সুষম বণ্টন ঘটছে বা মুষ্টিমেয় লোকের হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে তা জাতীয় আয়ের হিসাব থেকে জানা যায়।
  8. মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রা সংকোচনের পরিমাণঃ জাতীয় আয়ের হিসাব থেকে মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রা সংকোচনের তীব্রতা পরিমাপ করা যায়। যেমন- কোনো দেশের প্রকৃত জাতীয় আয় অপেক্ষা আর্থিক জাতীয় আয় বেশি হলে ঝুঝতে হবে দেশে মুদ্রাস্ফীতি ঘটছে।
  9. বাজেট প্রণয়নঃ বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে জাতীয় আয়ের হিসাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাজেট হচ্ছে সরকারের একবছরের বিভিন্ন খাতে সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের হিসাব। এজন্য জাতীয় আয় সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকলে সরকারের পক্ষে সঠিকভাবে বাজেট প্রণয়ন করা সম্ভব হয় না।
  10. ব্যবসা-বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা: জাতীয় আয়ের হিসাব থেকে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা করা যায়। এ কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি জানার জন্য জাতীয় আয়ের বিশ্লেষণ একান্ত প্রয়োজন।
  11. অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন: অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রেও জাতীয় আয়ের আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য বিভিন্ন তথ্যের প্রয়োজন হয়। জাতীয় আয়ের বিশ্লেষণ হতে এসব তথ্য জানা যায়।
  12. আন্তর্জাতিক সংস্থার চাঁদার হার নির্ধারণ: জাতিসংঘ, আই.এম.এফ, বিশ্বব্যাংক প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সংস্থার চাঁদার হার নির্ধারণের ক্ষেত্রেও জাতীয় আয়ের হিসাব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জাতীয় আয়ের অনুপাতেই এসব আন্তর্জাতিক সংস্থার চাঁদার হার নির্ধারণ করা হয়।

জাতীয় আয়ের পরিসংখ্যানের সাহায্যে আমরা একটি দেশ মন্দা হতে সমৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হচ্ছে কি না, তার অব্যাহত দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ও উন্নয়ন এবং সর্বোপরি অন্যান্য জাতির তুলনায় এর বস্তুগত জীবনযাত্রার মানের একটি বিবরণ পেতে পারি। এসব কারণে অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে জাতীয় আয়ের গুরুত্ব অপরিসীম।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। জাতীয় আয়ের সংজ্ঞা দাও | জাতীয় আয় পরিমাপের গুরুত্ব বর্ণনা কর এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url