চাহিদার স্থিতিস্থাপকতার নির্ধারকসমূহ আলোচনা কর

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে চাহিদার স্থিতিস্থাপকতার নির্ধারকসমূহ আলোচনা কর নিয়ে আলোচনা করব।

চাহিদার স্থিতিস্থাপকতার নির্ধারকসমূহ আলোচনা কর

চাহিদার স্থিতিস্থাপকতার নির্ধারকসমূহ আলোচনা কর। অথবা, চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা নির্ধারণকারী বিষয়গুলোর বর্ণনা কর। চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা কতকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা নির্ধারণকারী বিষয়সমূহ নিচে আলোচনা করা হলোঃ

  1. দ্রব্যের প্রকৃতিঃ চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা দ্রব্যের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। যেসব দ্রব্য মানুষের জীবনধারণের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় তাদের চাহিদা অস্থিতিস্থাপক হয়ে থাকে। এসব দ্রব্যের দাম পরিবর্তিত হলেও চাহিদার বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয় না। যেমন- চাল, লবণ, তেল, বস্ত্র প্রভৃতি প্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা অস্থিতিস্থাপক। পক্ষান্তরে, যে সমস্ত দ্রব্য আরাম ও বিলাসিতার জন্য ব্যবহার করা হয় তাদের চাহিদা স্থিতিস্থাপক হয়ে থাকে। এসব দ্রব্যের দাম সামান্য পরিবর্তিত হলে চাহিদার ব্যাপক পরিবর্তন হয়ে থাকে। যেমন- মোটরগাড়ি, রেডিও, টেলিভিশন, অলংকার, দামি আসবাবপত্র ইত্যাদির চাহিদা স্থিতিস্থাপক।
  2. বিকল্প দ্রব্য: যেসব দ্রব্যের বিকল্প দ্রব্য আছে তাদের চাহিদা স্থিতিস্থাপক; যেমন-চা ও কফি, সিগারেট ও বিড়ি, চিনি ও গুড় ইত্যাদি। যদি চায়ের দাম বাড়ে তাহলে লোকে চায়ের পরিবর্তে কফি ক্রয় করবে। এজন্য বিকল্প দ্রব্যের চাহিদা স্থিতিস্থাপক হয়। পক্ষান্তরে, যেসব দ্রব্যের কোনো বিকল্প দ্রব্য নেই তাদের চাহিদা অস্থিতিস্থাপক হয়।
  3. একাধিক ব্যবহারের সম্ভাবনাঃ যে সমস্ত দ্রব্যের বিকল্প ব্যবহার আছে তাদের চাহিদা স্থিতিস্থাপক হয়। যেমন- বিদ্যুৎ, কয়লা ইত্যাদি। বিদ্যুতের দাম কমে গেলে লোকে এটা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে এবং দাম বৃদ্ধি পেলে কম কাজে ব্যবহার করে। এজন্য এর চাহিদা স্থিতিস্থাপক হয়।
  4. স্থগিত ব্যবহার: যেসব দ্রব্যের ব্যবহার সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা যায় তাদের চাহিদা স্থিতিস্থাপক হয়। যেমন- জুতোর দাম বৃদ্ধি পেলে লোকে নতুন জুতো না কিনে পুরানো জুতো দ্বারা কিছুদিন চালিয়ে দিতে পারে। অনুরূপভাবে, সিমেন্টের দাম বৃদ্ধি পেলে লোকে গৃহনির্মাণ কাজ কিছুদিন স্থগিত রাখতে পারে। এজন্য এসব দ্রব্যের চাহিদা স্থিতিস্থাপক হয়। পক্ষান্তরে, যেসব দ্রব্যের ব্যবহার স্থগিত রাখা সম্ভবপর হয় না তাদের চাহিদা অস্থিতিস্থাপক হয়।
  5. ক্রেতার আয়প্তর: লোকের আয়ের উপরও চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা নির্ভর করে। ধনীদের আয় বেশি বলে তাদের দ্রব্যের চাহিদা অস্থিতিস্থাপক হয়। কোনো দ্রব্যের দাম বাড়লেও ধনীদের নিকট তার চাহিদার বিশেষ পরিবর্তন হয় না। কিন্তু গরিবদের আয় কম বলে তাদের নিকট দ্রব্যের চাহিদা স্থিতিস্থাপক। কারণ দ্রব্যের মূল্য বাড়লে দরিদ্র লোকের চাহিদার পরিমাণ যথেষ্ট কমে যায় এবং মূল্য কমলে চাহিদার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
  6. পণ্যের দামঃ দ্রব্যের দামের উপর চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা নির্ভর করে। দ্রব্যের দাম খুব বেশি বা কম হলে তার চাহিদা অস্থিতিস্থাপক হয়; যেমন- মোটরগাড়ি, মণি-মুক্তা প্রভৃতির দাম সামান্য বাড়লেও বিত্তশালী ব্যক্তিরা তা কেনা বন্ধ করে না। তেমনি ঐসব দ্রব্যের দাম সামান্য কমলেও দরিদ্র ব্যক্তিরা তা ক্রয় করতে পারে না। এজন্য এসব দ্রব্যের চাহিদা অস্থিতিস্থাপক হয়। কিন্তু যেসব দ্রব্যের দাম খুব বেশি বা কম নয় বরং মাঝামাঝি সেসব দ্রব্যের চাহিদা স্থিতিস্থাপক হয়। এসব দ্রব্যের দাম সামান্য কম-বেশি হলে চাহিদার বিশেষ পরিবর্তন হয়।
  7. ভোগকারীর অভ্যাস: ভোগকারীর অভ্যাসের উপর চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা নির্ভর করে। যেমন- বিড়ি ও সিগারেট পরস্পরের বিকল্প দ্রব্য। কিন্তু যারা বিড়ি খায় না তারা বিড়ির দাম কমলেও সিগারেটের পরিবর্তে বিড়ি ক্রয় করবে না। এমতাবস্থায় ঐ সমস্ত লোকের নিকট সিগারেটের চাহিদা অস্থিতিস্থাপক। সুতরাং কার নিকট পণ্যের চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা কি রকম হবে তা অনেকাংশে নির্ভর করে ঐ ব্যক্তির ভোগের অভ্যাসের উপর।
  8. ব্যয়ের অনুপাত: কোনো দ্রব্য ক্রয়ের জন্য যদি আয়ের সামান্য অংশ খরচ হয় তাহলে তার চাহিদা অস্থিতিস্থাপক হবে। যেমন- লবণ, সুচ, আলপিন ইত্যাদি। লবণের উপর মোট আয়ের এত সামান্য অংশ ব্যয় করতে হয় যে লবণের দাম কিছু বাড়লেও তার চাহিদা কমে না। এজন্য এর চাহিদা অস্থিতিস্থাপক। যেসব দ্রব্য ক্রয় করতে আয়ের একটি মোটা অংশ ব্যয় করতে হয় তাদের চাহিদা স্থিতিস্থাপক হয়ে থাকে।
  9. যুক্ত চাহিদা ও যেসব দ্রব্য যুক্তভাবে ব্যবহার করা হয়, তাদের চাহিদা সাধারণত অস্থিতিস্থাপক হয়। যেমন- পেট্রোলের দাম কমে মোটরগাড়ির দাম যদি স্থির থাকে তাহলে পেট্রোলের চাহিদা খুব বাড়ে না।
  10. সময়ের ব্যাপ্তিঃ স্বল্পকালীন সময়ের চেয়ে দীর্ঘকালীন সময়ে কোনো দ্রব্যের চাহিদা বেশি স্থিতিস্থাপক হয়। কারণ দীর্ঘকালীন সময়ে ভোক্তা তার ভোগের পরিকল্পনায় যথেষ্ট সামঞ্জস্য বিধান করতে পারে।
  11. কলাকৌশলগত বিষয়ঃ কলাকৌশলগত কারণও চাহিদার স্থিতিস্থাপকতাকে প্রভাবিত করে। বিদ্যুতের দাম কমলে তার ভোগ নাও বাড়তে পারে। কারণ ভোক্তার পক্ষে প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ক্রয় করা সম্ভব নাও হতে পারে।

পরিশেষে বলা যায় যে, চাহিদার স্থিতিস্থাপকতার ধারণাটি আপেক্ষিক। স্থান, কাল ও ব্যক্তিভেদে একই দ্রব্যের চাহিদার স্থিতিস্থাপকতার রূপ বিভিন্ন হতে পারে।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। চাহিদার স্থিতিস্থাপকতার নির্ধারকসমূহ আলোচনা কর এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url