চাহিদার নির্ধারকসমূহ আলোচনা কর
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে চাহিদার নির্ধারকসমূহ আলোচনা কর নিয়ে আলোচনা করব।
চাহিদার নির্ধারকসমূহ আলোচনা কর। অথবা, চাহিদা কী কী বিষয়ের উপর নির্ভরশীল? কোনো ক্রেতা একটি দ্রব্য কী পরিমাণ ক্রয় করে তা কতকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। এগুলোকে চাহিদার নির্ধারক বলা হয়। চাহিদার নির্ধারকগুলো নিচে আলোচনা করা হলোঃ
- দ্রব্যের দাম: কোনো দ্রব্যের চাহিদা বহুলাংশে দ্রব্যের দামের উপর নির্ভরশীল। দ্রব্যের দাম কমলে চাহিদা বাড়ে এবং দ্রব্যের দাম বাড়লে চাহিদা কমে।
- ক্রেতার আয়ঃ চাহিদার অন্যতম নির্ধারক হলো ক্রেতা বা ভোগকারীর আয়। ক্রেতার আয় বৃদ্ধি পেলে তার ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে চাহিদার পরিমাণ বাড়ে। বিপরীতভাবে ক্রেতার আয় হ্রাস পেলে দ্রব্যের চাহিদা পরিমাণও কম হয়।
- বিকল্প দ্রব্যের দাম: কোনো দ্রব্যের চাহিদা কেবলমাত্র সেই দ্রব্যের দামের উপর নির্ভর করে না; বরং বিকল্প বা পরিবর্তক দ্রব্যের দামের উপরও নির্ভর করে। যেমন- চা ও কফি পরস্পরের বিকল্প দ্রব্য। কফির দাম হ্রাস পেলে চা-এর দাম স্থির থাকলেও চায়ের চাহিদা হ্রাস পাবে। কারণ এক্ষেত্রে ভোগকারীরা চায়ের পরিবর্তে কফি পান করতে শুরু করবে।
- পরিপূরক দ্রব্যের দাম: কোনো দ্রব্যের চাহিদা তার পরিপূরক দ্রব্যের দামের উপরও নির্ভর করে। যেমন- মোটরগাড়ি ও পেট্রোল একইসাথে ব্যবহার করা হয়। মোটরগাড়ির দাম বৃদ্ধি পেলে মোটরগাড়ির চাহিদা হ্রাস পাবে। ফলে পেট্রোলের চাহিদাও হ্রাস পাবে।
- ক্রেতার রুচি ও অভ্যাস: কোনো দ্রব্যের চাহিদা ক্রেতার পছন্দ, রুচি ও অভ্যাসের উপরও নির্ভর করে। যেমন - কোনো বিশেষ দ্রব্যের জন্য ভোগকারীর রুচি ও পচ্ছন্দ বৃদ্ধি পেলে উক্ত দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
- জনসংখ্যার পরিবর্তনঃ দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ক্রেতা বা ভোগকারীর সংখ্যা বাড়ে। ফলে দ্রব্যের চাহিদাও বাড়ে।
- আবহাওয়া বা জলবায়ুর পরিবর্তনঃ কোনো দ্রব্যের চাহিদা আবহাওয়া বা জলবায়ুর পরিবর্তনের দ্বারাও প্রভাবিত হয়। যেমন- গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা পানীয় দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু শীতকালে এর চাহিদা হ্রাস পায়। একইভাবে শীতকালে পশমি বস্ত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পায়, কিন্তু গ্রীষ্মকালে এর চাহিদা হ্রাস পায়।
- সম্পদ বণ্টন: সম্পদ বণ্টন ব্যবস্থাও চাহিদাকে প্রভাবিত করে। যেমন- কোনো সমাজে যদি অধিকাংশ সম্পদ মুষ্টিমেয় লোকের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে তাহলে বিলাসজাত দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। পক্ষান্তরে, দেশের সম্পদ যদি জনসাধারণের মধ্যে সুষমভাবে বণ্টিত হয় তাহলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
- দামের ভবিষ্যৎ গতি: দামের ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি দ্বারাও চাহিদা প্রভাবিত হয়। যেমন- ভবিষ্যতে কোনো দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকলে বর্তমানে উক্ত দ্রব্যের দাম না কমলেও চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।
- সঞ্চয় প্রবণতা: সঞ্চয় প্রবণতার দ্বারাও চাহিদা প্রভাবিত হয়। কারণ জনসাধারণের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা বাড়লে বর্তমানে দ্রব্যসামগ্রী ক্রয়ের প্রবণতা কমে যায়। এর ফলে চাহিদা হ্রাস প্রায়।
- পারিপার্শ্বিক অবস্থা: ব্যক্তিবিশেষের চাহিদা সমাজের পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপরও নির্ভর করে। যেমন- অনেকে বিত্তবান প্রতিবেশী ও বন্ধুবান্ধবদের উচ্চ জীবনযাত্রার মান অনুসরণ করতে চায়। এর ফলে তাদের নিকট বিলাসজাত দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এভাবে পারিপার্শ্বিক অবস্থা দ্বারাও চাহিদা প্রভাবিত হয়।
সুতরাং দাম ছাড়াও ক্রেতার আয়, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দ্রব্যের দাম, ক্রেতার রুচি ও পছন্দ, ক্রেতার সংখ্যা, আবহাওয়া বা জলবায়ু, সম্পদ বণ্টন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের উপর কোনো দ্রব্যের চাহিদা নির্ভর করে। এগুলোই হলো চাহিদার নির্ধারক।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। চাহিদার নির্ধারকসমূহ আলোচনা কর এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url