অর্থনৈতিক সমস্যা বলতে কী বুঝায়? অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন কর্মপর্যায়গুলো আলোচনা কর

অর্থনৈতিক সমস্যা বলতে কী বুঝায়? অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন কর্মপর্যায়গুলো আলোচনা কর

অর্থনৈতিক সমস্যা বলতে কী বুঝায়? অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন কর্মপর্যায়গুলো আলোচনা কর। অথবা, মানবজীবনে অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন কর্মপর্যায়গুলো বর্ণনা কর। অথবা, উৎপাদন, বিনিময়, কটন ও ভোগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানবজীবনের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান প্রচেষ্টা সম্পন্ন হয়-আলোচনা কর।

অর্থনৈতিক সমস্যা বলতে প্রকৃতপক্ষে সম্পদের 'স্বল্পতা' এবং 'বাছাই' বা 'নির্বাচন' এর সমস্যাকে বুঝায়। মানুষের অভাববোধ বা চাহিদা সীমাহীন। প্রাথমিক পর্যায়ের ন্যূনতম অভাবগুলো পূরণ হলে মানুষ আরও নানারকম নতুন নতুন অভাবের সম্মুখীন হয়।

কিন্তু সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে মানুষের জীবনের সব অভাব পূরণ করা যায় না, বরং মানুষ সবসময় অসীম অভাব ও সীমিত সম্পদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করে। এ সমস্যা চিরন্তন এবং তা ব্যক্তি ও সমাজ সবক্ষেত্রেই সমভাবে বিরাজমান।

অর্থনৈতিক সমস্যাঃ মানুষ অসীম অভাব পূরণের জন্য বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে সম্পদ বা অর্থ উপার্জন করে। কিন্তু যেহেতু অভাবের তুলনায় প্রাপ্ত সম্পদ সীমিত বা অপ্রচুর, তাই এই সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করাও আরেকটি অন্যতম অর্থনৈতিক সমস্যা। সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার না হলে ভোগের পূর্ণ তৃপ্তি সম্ভব হয় না। মূলত সম্পদের স্বল্পতা বা দুষ্প্রাপ্যতাই হলো মানুষের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা।

নিম্নে অর্থনৈতিক সমস্যা সম্পর্কে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদদের মন্তব্য তুলে ধরা হলোঃ
  • অধ্যাপক বেনহাম বলেন, "মানুষ অভাবের নির্বাচন করতে বাধ্য হয় বলেই অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দেয়।
  • নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ পি. এ. স্যামুয়েলসন (P. A. Samuelson) বিভিন্ন প্রকার দ্রব্য উৎপাদনে পছন্দ বা নির্বাচনের মাধ্যমে দুষ্প্রাপ্য সম্পদের নিয়োগ ও ভোগের ক্ষেত্রে তার বণ্টনকে অর্থনীতির আলোচ্য বিষয় বলে মনে করেন।
  • অধ্যাপক আর. জি. লিপসি (R. G. Lipsey) মনে করেন, "দুষ্প্রাপ্যতার সমস্যা হলো প্রধান সমস্যাগুলোর অন্যতম যা অর্থনীতির অধিকাংশ বিষয়াদির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।

সুতরাং সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে অসীম অভাবকে গুরুত্বের মাত্রা অনুযায়ী নির্বাচন এবং এসব অভাব পূরণের ক্ষেত্রে নিয়োজিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হলো মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা।

অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন কর্মপর্যায়: অফুরন্ত অভাবের তুলনায় সম্পদের স্বল্পতার কারণে মানবজীবনে অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। অসীম অভাব ও অপ্রচুর সম্পদের সমন্বয় সাধন করাই হলো এ কর্মপর্যায়ের মূলকথা। অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষ যে নানারকম কর্মপ্রচেষ্টা গ্রহণ করে তাকে কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। যেমন- উৎপাদন, বিনিময়, বণ্টন ও ভোগ। নিম্নে এ পর্যায়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১) উৎপাদন : মানুষের অভাব পূরণের জন্য বিভিন্ন রকম দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্মের প্রয়োজন হয়। এজন্য অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের প্রথম পদক্ষেপ হলো দ্রব্য ও সেবার উৎপাদন। মানুষের অভাব অসীম হলেও সব অভাব সমান গুরুত্বপূর্ণ নয়। সম্পদের স্বল্পতার জন্য গুরুত্ব অনুযায়ী অভাবের নির্বাচন করে সেই অনুযায়ী সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করা প্রয়োজন।

এজন্য ব্যক্তি ও সমাজের ক্ষেত্রে কী কী দ্রব্য এবং কী পদ্ধতিতে উৎপাদন করা উচিত তা নির্ধারণ করতে হয়। কেননা উৎপাদনের উপকরণগুলোর যোগানও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এভাবে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার দ্বারা উৎপাদন বৃদ্ধি করেই অভাব পূরণের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়।

২) বিনিময়: সমাজে স্বনির্ভর ব্যক্তি বা পরিবার খুঁজে পাওয়া যায় না। মানুষের প্রয়োজন যত বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে, উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রীর বিনিময়ের প্রয়োজনীয়তাও তত বাড়ছে। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা অনুযায়ী বিশেষ বিশেষ দ্রব্য উৎপাদন করে এবং তার বিনিময়ে অন্যান্য দ্রব্য অন্যদের কাছে থেকে সংগ্রহ করে।

এভাবে সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মধ্যে দ্রব্য ও সেবার আদান-প্রদান বা বিনিময় সংঘটিত হয়। আধুনিক কালে দ্রব্য নয়, বরং মুদ্রা হলো বিনিময়ের মাধ্যম। কাজেই বিনিময়ের মাধ্যমে মানুষের বিভিন্ন রকম অভাবের মধ্যে সমন্বয় সাধনের ফলে ভোগ বৃদ্ধি পায়।

৩) বণ্টনঃ উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মধ্যে কীভাবে বা কোন নীতি অনুযায়ী বণ্টিত হচ্ছে তা নির্ধারণ করা একটি অর্থনৈতিক; সমস্যা। উৎপাদন ক্ষেত্রে উপাদানসমূহ (ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন) যে অবদান রাখে, তাদেরকে তাদের প্রাপ্য পারিতোষিক যেমন- খাজনা, মজুরি, সুদ ও মুনাফা বণ্টন করে দেয়াও একটি অর্থনৈতিক সমস্যা।

উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী এবং উপাদানগুলোর দাম যত সুষমভাবে বণ্টিত হবে, সমাজের অর্থনৈতিক কল্যাণ তত বাড়বে। তবে একটি দেশের বণ্টন নীতি সে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে নির্ধারিত হয়।

৪) ভোগঃ সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টার মূল লক্ষ্য হলো ভোগ। দ্রব্য ও সেবার ভোগের মাধ্যমে অভাব পূরণ হয়। সীমাবদ্ধ সম্পদ দ্বারা উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী ভোগের মাধ্যমে কীভাবে সর্বাধিক তৃপ্তি লাভ করা যায়, মানুষ নিরন্তরভাবে সেই প্রচেষ্টা চালায়।

উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার থেকে পরিশেষে বলা যায় যে, অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের এ চারটি পর্যায়- উৎপাদন, বিনিময়, বণ্টন ও ভোগ পরস্পর নির্ভরশীল ও সম্পর্কযুক্ত। কোনোটিরই স্বতন্ত্র কোনো গুরুত্ব নেই।

উৎপাদন না করলে যেমন বিনিময়, বণ্টন ও ভোগের প্রশ্ন আসে না, তেমনি ভোগ না করলে উৎপাদন, বিনিময় ও বণ্টনের দরকার হয় না। মানুষের সমস্ত অর্থনৈতিক কার্যাবলি এ চারটি কর্মপর্যায়ের ভেতর দিয়ে অগ্রসর ও সম্পন্ন হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url