যৌন সমস্যা সমাধানে হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম ও সতর্কতা

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে যৌন সমস্যা সমাধানে হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম ও সতর্কতা নিয়ে আলোচনা করব।

যৌন সমস্যা সমাধানে হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম ও সতর্কতা

যৌন সমস্যা সমাধানে হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম ও সতর্কতা

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে প্রকৃতির উপর নির্ভর করে আসছে। গাছপালা বা ভেষজ উদ্ভিদ ব্যবহার করে নানা শারীরিক সমস্যার সমাধান খোঁজা আমাদের সংস্কৃতির একটি অংশ। এমনই একটি পরিচিত আগাছা বা ভেষজ উদ্ভিদ হলো হাতিশুর গাছ। লোকজ চিকিৎসায় এর নানা ব্যবহার প্রচলিত আছে, যার মধ্যে একটি হলো যৌন সমস্যা বা দুর্বলতা দূরীকরণে এর শিকড়ের ব্যবহার।

যৌন সমস্যা সমাধানে হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম ও সতর্কতা

আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা আলোচনা করবো যৌন সমস্যা সমাধানে হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম নিয়ে প্রচলিত ধারণাগুলো কি, এর সম্ভাব্য উপকারিতা, ব্যবহার পদ্ধতি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ - এর সাথে জড়িত সতর্কতা ও ঝুঁকিগুলো কী কী।

বিশেষ সতর্কতা: এই পোস্টে উল্লেখিত সকল তথ্য প্রচলিত লোকজ জ্ঞান ও ধারণার উপর ভিত্তি করে লেখা। হাতিশুর গাছের শিকড় বা অন্য কোনো ভেষজ উপাদান ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড ডাক্তার অথবা অভিজ্ঞ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিজের ইচ্ছামতো কোনো ভেষজ ব্যবহার করা বিপজ্জনক হতে পারে।

হাতিশুর গাছ পরিচিতি

হাতিশুর গাছ, যা হাতিশুঁড়া, শ্রীহস্তিনী, মহাশুণ্ডী ইত্যাদি নামেও পরিচিত, একটি সাধারণ আগাছা। এর বৈজ্ঞানিক নাম Heliotropium indicum। এটি সাধারণত এক বর্ষজীবী, ছোট গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ যা প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এর পাতা সবুজ, ডিম্বাকৃতির এবং খসখসে। গাছের ডগার দিকে লম্বা মঞ্জরীতে ছোট ছোট সাদা বা হালকা বেগুনি রঙের ফুল ফোটে, যা দেখতে হাতির শুঁড়ের মতো কিছুটা বাঁকানো থাকে – সম্ভবত একারণেই এর নাম হাতিশুর।

এই গাছটি সাধারণত রাস্তার ধারে, পতিত জমিতে, ফসলের ক্ষেতের পাশে বা বাড়ির আশেপাশে কোনো যত্ন ছাড়াই জন্মাতে দেখা যায়। অনেকেই একে আগাছা হিসেবে চিনলেও, লোকজ চিকিৎসায় এর পাতা, ডাঁটা এবং শিকড়ের ব্যবহার খুঁজে পাওয়া যায়।

হাতিশুর গাছ (Heliotropium indicum)

ছবি: হাতিশুর গাছ (Heliotropium indicum)

হাতিশুর গাছের ঐতিহ্যগত বা লোকজ ব্যবহার

যৌন সমস্যার সমাধান ছাড়াও, গ্রামের মানুষজন পুরনো দিন থেকে হাতিশুর গাছের বিভিন্ন অংশ নানা কাজে ব্যবহার করে আসছে বলে শোনা যায়। যেমন:

  • ক্ষত নিরাময়ে: পাতার রস বা থেঁতো করা পাতা কাটা-ছেঁড়া বা ঘা-ক্ষত স্থানে লাগালে তা দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে বলে বিশ্বাস করা হয়।
  • ব্যথানাশক হিসেবে: ফোলা বা ব্যথার জায়গায় এর পাতার প্রলেপ ব্যবহার করা হয়।
  • পোকা-মাকড়ের কামড়ে: এর পাতার রস পোকা-মাকড়ের কামড়ের জ্বালা কমাতে সাহায্য করে বলে ধারণা করা হয়।
  • চোখের সমস্যায়: চোখের অঞ্জনি বা অন্য কোনো সাধারণ সংক্রমণে এর পাতার রস ব্যবহার করা হয় বলে শোনা যায় (তবে এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে)।
  • জ্বর কমাতে: কেউ কেউ জ্বর কমাতে এর পাতার রস ব্যবহার করেন।

গুরুত্বপূর্ণ: এই ব্যবহারগুলো সবই লোকজ জ্ঞান নির্ভর এবং এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয়। বিশেষ করে চোখের মতো সংবেদনশীল অঙ্গে যেকোনো অচেনা পাতার রস ব্যবহার মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।

যৌন সমস্যা সমাধানে হাতিশুর গাছের শিকড়

লোকজ চিকিৎসা বা গ্রাম্য কবিরাজি মতে, হাতিশুর গাছের শিকড় পুরুষদের বিভিন্ন যৌন সমস্যা, যেমন – শারীরিক দুর্বলতা, যৌন মিলনে অনীহা (কম লিবিডো), শুক্রাণুর মান উন্নয়ন এবং দ্রুত বীর্যপাতের মতো সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে বলে বিশ্বাস করা হয়।

বিশ্বাস করা হয় যে, এই শিকড়ের মধ্যে এমন কিছু উপাদান থাকতে পারে যা:

  • শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে পারে, বিশেষ করে যৌনাঙ্গে।
  • হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় কিছুটা সাহায্য করতে পারে।
  • মানসিক চাপ বা উদ্বেগ কমাতে পারে, যা যৌন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
  • সাধারণ শারীরিক শক্তি ও উদ্দীপনা বাড়াতে পারে।

আবারও মনে রাখা প্রয়োজন, এগুলো সবই প্রচলিত ধারণা এবং বিশ্বাস। এই দাবগুলোর সপক্ষে শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক প্রমাণ বা গবেষণা এখনো সেভাবে পাওয়া যায় না।

হাতিশুর গাছের শিকড় ব্যবহারের প্রচলিত নিয়ম

যারা লোকজ পদ্ধতিতে বিশ্বাস রেখে হাতিশুর গাছের শিকড় ব্যবহার করতে চান, তাদের জন্য কিছু প্রচলিত নিয়ম নিচে দেওয়া হলো। তবে ব্যবহারের আগে অবশ্যই এর ঝুঁকি এবং সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন এবং সম্ভব হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

১. সঠিক গাছ সনাক্তকরণ ও সংগ্রহ

  • প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো সঠিক হাতিশুর গাছটি চেনা। ভুল গাছ ব্যবহার করলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত জায়গা থেকে গাছ সংগ্রহ করা উচিত। রাস্তার ধার বা নোংরা জায়গা থেকে সংগ্রহ করা শিকড়ে দূষিত পদার্থ থাকতে পারে।
  • সাধারণত বর্ষাকালে বা এর পরে গাছ সতেজ থাকে এবং শিকড় তোলা সহজ হয়।
  • গাছের গোড়া সাবধানে খুঁড়ে শিকড় সংগ্রহ করতে হবে।

২. শিকড় পরিষ্কার করা

  • সংগ্রহ করার পর শিকড় থেকে মাটি, ময়লা ইত্যাদি খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
  • প্রবাহিত পানিতে (যেমন ট্যাপের নিচে) একটি ব্রাশ দিয়ে আলতোভাবে ঘষে শিকড় পরিষ্কার করা যেতে পারে।
  • পরিষ্কার পানিতে কয়েকবার ধুয়ে নিতে হবে যাতে কোনো মাটি বা বালুকণা লেগে না থাকে।

৩. ব্যবহারের পদ্ধতি

লোকজ পদ্ধতিতে বিভিন্নভাবে হাতিশুর গাছের শিকড় ব্যবহার করা হয়:

ক) কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া:

  • সবচেয়ে প্রচলিত একটি পদ্ধতি হলো তাজা শিকড় চিবিয়ে খাওয়া।
  • পরিষ্কার করা তাজা শিকড়ের একটি ছোট অংশ (সাধারণত ১-২ ইঞ্চি পরিমাণ) সকালে খালি পেটে চিবিয়ে রস খাওয়ার কথা বলা হয়।
  • এর স্বাদ তেতো বা কষা হতে পারে।
  • সতর্কতা: কাঁচা খাওয়ার পরিমাণ নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে পেটে সমস্যা বা অন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

খ) বেটে বা পেস্ট করে খাওয়া:

  • পরিষ্কার করা শিকড় শিলপাটায় বা হামানদিস্তায় ভালোভাবে বেটে বা থেঁতো করে একটি পেস্ট তৈরি করা হয়।
  • এই পেস্ট সরাসরি অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে।
  • অনেকে এর সাথে সামান্য মধু বা খাঁটি গাওয়া ঘি মিশিয়ে খান।
  • এক গ্লাস হালকা গরম পানি বা দুধের সাথে মিশিয়েও খাওয়া হয়।
  • সতর্কতা: বাটার সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি।

গ) ক্বাথ বা রস তৈরি করে পান করা:

  • পরিষ্কার করা ২-৩ ইঞ্চি পরিমাণ শিকড় ছোট ছোট টুকরো করে বা থেঁতো করে নিন।
  • এক গ্লাস (প্রায় ২৫০ মিলি) পানিতে এই শিকড়ের টুকরোগুলো দিয়ে হালকা আঁচে জ্বাল দিন।
  • পানি ফুটে অর্ধেক হয়ে এলে (প্রায় ১২৫ মিলি) নামিয়ে ছেঁকে নিন।
  • এই ক্বাথ বা রস কুসুম গরম অবস্থায় সকালে খালি পেটে পান করার নিয়ম প্রচলিত আছে।
  • সতর্কতা: ক্বাথ তৈরির পরিমাণ ও জ্বাল দেওয়ার সময় সঠিকভাবে অনুসরণ করা উচিত।

৪. ব্যবহারের মাত্রা ও সময়কাল

  • মাত্রা: হাতিশুর গাছের শিকড় ব্যবহারের কোনো নির্দিষ্ট বা বৈজ্ঞানিকভাবে নির্ধারিত মাত্রা নেই। লোকজ চিকিৎসায় সাধারণত খুব অল্প পরিমাণে (যেমন ১-২ ইঞ্চি শিকড়) ব্যবহার করতে বলা হয়। সর্বদা সর্বনিম্ন মাত্রা দিয়ে শুরু করা উচিত।
  • সময়কাল: কতদিন ব্যবহার করতে হবে তারও কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। কেউ কেউ ৭ দিন, কেউ ২১ দিন বা ১ মাস ব্যবহারের কথা বলেন। তবে একটানা দীর্ঘদিন কোনো ভেষজ উপাদান ব্যবহার করা উচিত নয়।
  • বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: মাত্রা ও সময়কাল সম্পর্কে জানার জন্য অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক বা ভেষজ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা

হাতিশুর গাছের শিকড় বা যেকোনো ভেষজ উপাদান ব্যবহারের আগে নিচের বিষয়গুলো অবশ্যই মনে রাখতে হবে:

  • ডাক্তারের পরামর্শ আবশ্যক: যৌন সমস্যা বা যেকোনো শারীরিক সমস্যার জন্য প্রথমে একজন রেজিস্টার্ড ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। আপনার সমস্যার সঠিক কারণ নির্ণয় করা জরুরি। লোকজ বা ভেষজ চিকিৎসা কখনই আধুনিক চিকিৎসার বিকল্প নয়।
  • সঠিক সনাক্তকরণ: হাতিশুর গাছ সঠিকভাবে চিনতে পারা আবশ্যক। ভুল গাছ (যা দেখতে একই রকম হতে পারে) মারাত্মক বিষাক্ত হতে পারে।
  • পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: এই শিকড় ব্যবহারে কারো কারো পেটে ব্যথা, বমি ভাব, ডায়রিয়া, অ্যালার্জি বা ত্বকে র‍্যাশ দেখা দিতে পারে।
  • লিভারের ঝুঁকি: Heliotropium গণের কিছু উদ্ভিদে পাইরোলিজিডিন অ্যালকালয়েড (Pyrrolizidine alkaloids) নামক উপাদান থাকে, যা লিভারের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, বিশেষ করে যদি ভুল প্রজাতি ব্যবহার করা হয় বা অতিরিক্ত পরিমাণে বা দীর্ঘকাল ধরে সেবন করা হয়।
  • কারা ব্যবহার করবেন না: গর্ভবতী মহিলা, স্তন্যদানকারী মা, শিশু এবং যাদের লিভার বা কিডনির সমস্যা আছে, তাদের এই শিকড় ব্যবহার করা উচিত নয়।
  • অন্যান্য ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া: আপনি যদি অন্য কোনো রোগের জন্য ওষুধ খান, তবে এই শিকড় ব্যবহারের আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন, কারণ এটি অন্য ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে।
  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা: শিকড় সংগ্রহ, পরিষ্কার ও প্রস্তুত করার সময় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা খুব জরুরি, নাহলে পেটের সমস্যা হতে পারে।

যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অন্যান্য করণীয়

শুধুমাত্র কোনো ভেষজ উপাদানের উপর নির্ভর না করে, যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য একটি সামগ্রিক approche বা পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত। এর মধ্যে রয়েছে:

  • সুষম খাদ্যাভ্যাস: প্রচুর ফলমূল, শাকসবজি, প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।
  • নিয়মিত ব্যায়াম: ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, মানসিক চাপ কমায় এবং সার্বিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম শরীরের হরমোন ব্যালান্স ও শক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য জরুরি।
  • মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: যোগব্যায়াম, ধ্যান বা শখের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো যৌন স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী।
  • ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ: এই অভ্যাসগুলো যৌন স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা যৌন সমস্যা তৈরি করতে পারে।
  • খোলামেলা আলোচনা: সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সাথে যৌন সমস্যা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের সাহায্য নেওয়া জরুরি।

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি

যদিও হাতিশুর গাছের বিভিন্ন অংশের (যেমন পাতা) কিছু অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বা ক্ষত নিরাময়কারী গুণাবলী নিয়ে কিছু প্রাথমিক গবেষণা হয়েছে, তবে যৌন সমস্যা সমাধানে এর শিকড়ের কার্যকারিতা নিয়ে নির্ভরযোগ্য ও বড় আকারের কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা বা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পাওয়া যায় না।

বর্তমানে যে তথ্যগুলো পাওয়া যায়, তা মূলত লোকজ ব্যবহার এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে প্রচলিত। তাই এর কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা কঠিন। বৈজ্ঞানিক প্রমাণের অভাবের কারণে, এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি।

শেষ কথা

হাতিশুর একটি পরিচিত আগাছা যা লোকজ চিকিৎসায় বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যৌন সমস্যা সমাধানে হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম মূলত প্রচলিত বিশ্বাস এবং অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। কেউ কেউ হয়তো এর ব্যবহারে উপকার পেয়েছেন বলে দাবি করেন, কিন্তু এর সপক্ষে কোনো শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই এবং এর ব্যবহারে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে, বিশেষ করে লিভারের ক্ষতির সম্ভাবনা ও ভুল গাছ ব্যবহারের বিপদ।

তাই, আপনি যদি যৌন সমস্যা বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকর উপায় হলো একজন যোগ্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। ডাক্তার আপনার সমস্যার সঠিক কারণ খুঁজে বের করে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। কোনো ভেষজ উপাদান ব্যবহার করতে চাইলে, তা অবশ্যই ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে এবং তার অনুমতি সাপেক্ষে ব্যবহার করা উচিত।

দাবিত্যাগ (Disclaimer): এই নিবন্ধটি শুধুমাত্র তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। এটি কোনোভাবেই চিকিৎসা পরামর্শ হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়। যেকোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা বা চিকিৎসার জন্য সর্বদা একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন। লেখক বা প্রকাশক এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে গৃহীত কোনো পদক্ষেপের জন্য দায়ী থাকবে না।

সাধারণ জিজ্ঞাস্য (FAQs)

১. হাতিশুর গাছ কি?

উত্তর: হাতিশুর বা হাতিশুঁড়া (বৈজ্ঞানিক নাম: Heliotropium indicum) একটি বর্ষজীবী আগাছা জাতীয় উদ্ভিদ। এটি সাধারণত রাস্তার পাশে, পতিত জমিতে বা বাড়ির আশেপাশে অযত্নে জন্মায়। এর ফুলগুলো দেখতে হাতির শুঁড়ের মতো বাঁকানো থাকে বলে এই নামকরণ।

২. যৌন সমস্যা সমাধানে হাতিশুর গাছের শিকড় কিভাবে ব্যবহার করা হয়?

উত্তর: প্রচলিত লোকজ বিশ্বাস অনুযায়ী, হাতিশুর গাছের তাজা শিকড় পরিষ্কার করে ধুয়ে কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া হয়, বেটে মধু বা পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয় অথবা পানিতে ফুটিয়ে ক্বাথ তৈরি করে পান করা হয়। তবে এর নির্দিষ্ট কোনো মাত্রা বা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই এবং ব্যবহারের আগে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন ও ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৩. হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার কি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে?

উত্তর: হ্যাঁ, এর কিছু সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। যেমন: পেট ব্যথা, বমি ভাব, ডায়রিয়া, অ্যালার্জি ইত্যাদি। ভুল গাছ সনাক্তকরণ বা অতিরিক্ত সেবনে লিভারের ক্ষতির ঝুঁকিও থাকতে পারে। তাই ব্যবহারের আগে অবশ্যই সতর্কতা প্রয়োজন।

৪. হাতিশুর গাছের শিকড় ব্যবহারের আগে কি ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত?

উত্তর: অবশ্যই। যেকোনো ভেষজ উপাদান, বিশেষ করে স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবহারের আগে রেজিস্টার্ড ডাক্তার বা অভিজ্ঞ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এটি কোনো আধুনিক চিকিৎসার বিকল্প নয়।

৫. হাতিশুর গাছের শিকড়ের কার্যকারিতা নিয়ে কি বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আছে?

উত্তর: যৌন সমস্যার সমাধানে হাতিশুর গাছের শিকড়ের কার্যকারিতা সম্পর্কে প্রচলিত বিশ্বাস থাকলেও, এর সপক্ষে জোরালো ও নির্ভরযোগ্য বৈজ্ঞানিক গবেষণা বা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রমাণ সীমিত। বেশিরভাগ তথ্যই লোকজ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে প্রচলিত।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। যৌন সমস্যা সমাধানে হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম ও সতর্কতা এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

পরবর্তী পোস্ট পূর্ববর্তী পোস্ট
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url