বাংলাদেশে দারিদ্র্যের কারণ ও তা দূরীকরণের সহজ উপায়
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের কারণ ও তা দূরীকরণের সহজ উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
বাংলাদেশে দারিদ্র্যের কারণ ও তা দূরীকরণের সহজ উপায়
ভূমিকা: দারিদ্র্য কী?
দারিদ্র্য মানে হলো গরীব অবস্থা। যখন একজন মানুষের কাছে তার জীবন বাঁচিয়ে রাখার জন্য দরকারি জিনিসগুলো, যেমন খাবার, পোশাক, থাকার জায়গা কেনার মতো যথেষ্ট টাকা বা সম্পদ থাকে না, তখন তাকে গরীব বা দরিদ্র বলা হয়। এটা শুধু আমাদের দেশের সমস্যা নয়, পুরো পৃথিবীর অনেক দেশেই এই সমস্যা আছে। কিন্তু বাংলাদেশে দারিদ্র্য একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যার কারণে অনেক মানুষ কষ্ট পায়, তাদের জীবন ভালোভাবে কাটে না।
দারিদ্র্যের কারণে মানুষের অনেক অসুবিধা হয়। তারা ঠিকমতো খেতে পায় না, ভালো পোশাক পরতে পারে না, থাকার জন্য ভালো ঘর পায় না। অসুস্থ হলে ডাক্তার দেখানোর টাকা থাকে না। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। মোটকথা, জীবনটা খুব কষ্টের হয়ে যায়। এই দারিদ্র্য কেন হয় এবং কীভাবে আমরা এটা কমাতে পারি, সেটাই আজকে আমরা সহজ করে জানার চেষ্টা করব।
দারিদ্র্যের প্রকারভেদ
সাধারণত দারিদ্র্যকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, যদিও এই ভাগগুলো বোঝা একটু কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু সহজ করে বললে:
- চরম দারিদ্র্য (Extreme Poverty): যখন কেউ তার বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে জরুরি জিনিসগুলোও (যেমন প্রতিদিনের খাবার) জোগাড় করতে পারে না, তখন তাকে চরম দরিদ্র বলা হয়। এরা দিনের পর দিন না খেয়ে বা অল্প খেয়ে থাকে।
- আপেক্ষিক দারিদ্র্য (Relative Poverty): যখন একজন মানুষ তার আশেপাশের বেশিরভাগ মানুষের চেয়ে অনেক গরীব থাকে, তখন তাকে আপেক্ষিক দরিদ্র বলা হয়। হয়তো সে চরম দরিদ্র নয়, কিন্তু সমাজে অন্যদের তুলনায় তার সুযোগ-সুবিধা অনেক কম।
আমাদের দেশে এই দুই ধরনের দারিদ্র্যই দেখা যায়। তবে চরম দারিদ্র্য সবচেয়ে বেশি কষ্টের।
বাংলাদেশে দারিদ্র্যের প্রধান কারণগুলো কী কী?
বাংলাদেশে কেন এত মানুষ গরীব? এর পেছনে অনেক কারণ আছে। কোনো একটা কারণে দারিদ্র্য হয় না, অনেকগুলো কারণ একসাথে মিলে এই সমস্যা তৈরি করে। চলো, কারণগুলো একটু সহজ করে জেনে নিই:
১. ধনী ও গরীবের মধ্যে অনেক বেশি পার্থক্য (অর্থনৈতিক বৈষম্য)
আমাদের দেশে এমন অবস্থা দেখা যায় যে, কিছু মানুষের কাছে অনেক টাকা-পয়সা, জমিজমা আছে, আবার বেশিরভাগ মানুষের কাছে তেমন কিছুই নেই। যারা ধনী, তারা দিন দিন আরও ধনী হচ্ছে। কিন্তু গরীব মানুষ সহজে বড়লোক হতে পারছে না। তাদের আয় বাড়ছে না বা খুব অল্প বাড়ছে। এই ধনী আর গরীবের মধ্যে আয়ের বিশাল পার্থক্য দারিদ্র্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে। যাদের টাকা আছে, তারা ভালো শিক্ষা, ভালো চিকিৎসা পায়, ভালো ব্যবসা করতে পারে। কিন্তু গরীবরা এই সুযোগগুলো পায় না, তাই তারা গরীবই থেকে যায়।
২. সবার জন্য ভালো শিক্ষার অভাব (অশিক্ষা)
শিক্ষা মানুষকে ভালো চাকরি পেতে বা নিজের কাজ শুরু করতে সাহায্য করে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও অনেকে, বিশেষ করে গ্রামের দিকে, ঠিকমতো লেখাপড়া করার সুযোগ পায় না। অনেকে স্কুলে গেলেও মাঝপথে পড়া ছেড়ে দেয়, কারণ তাদের পরিবার গরীব, তারা স্কুলে পাঠানোর খরচ চালাতে পারে না বা ছেলেমেয়েদের কাজে পাঠাতে হয়। ভালো শিক্ষা না থাকলে ভালো কাজ পাওয়া কঠিন, ফলে আয় কম হয় এবং দারিদ্র্য বাড়ে।

৩. যথেষ্ট কাজের সুযোগ না থাকা (বেকারত্ব ও অল্প আয়ের কাজ)
অনেক শিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিত মানুষও কাজ খুঁজে পায় না। আবার অনেকে যে কাজ করে, তাতে এত কম বেতন পায় যে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়ে। দেশে যত মানুষ আছে, সেই তুলনায় যথেষ্ট কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। বিশেষ করে গ্রামে কাজের সুযোগ খুব কম। তাই অনেকে শহরে চলে আসে কাজের খোঁজে, কিন্তু সেখানেও সবার কাজ জোটে না। কাজ না থাকলে বা আয় খুব কম হলে মানুষ গরীব থাকবেই।
৪. প্রাকৃতিক দুর্যোগ (বন্যা, ঝড়, খরা)
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় এবং ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এখানে প্রায় প্রতি বছর বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদী ভাঙন বা খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। এসব দুর্যোগে গরীব মানুষের বাড়িঘর, ফসল, গরু-ছাগল সব নষ্ট হয়ে যায়। তারা এক মুহূর্তে সবকিছু হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। বারবার এমন দুর্যোগ হলে গরীব মানুষ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারে না, তাদের দারিদ্র্য আরও বেড়ে যায়।
৫. দেশের জনসংখ্যা বেশি হওয়া (জনসংখ্যা বৃদ্ধি)
আমাদের দেশের আয়তন অনুযায়ী মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। মানুষ বেশি হলে খাবার, জমি, কাজ, ডাক্তার, স্কুল – সবকিছুর উপর চাপ পড়ে। সবার জন্য যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দেওয়া কঠিন হয়ে যায়। যখন একটা পরিবারে অনেকজন সদস্য থাকে আর আয় কম থাকে, তখন সবার প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হয় না। এটাও দারিদ্র্য বাড়ার একটা কারণ।
৬. অসুস্থতা ও ভালো চিকিৎসার অভাব (স্বাস্থ্য সমস্যা)
গরীব মানুষরা প্রায়ই নানা রকম অসুখ-বিসুখে ভোগে। কারণ তারা পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে না, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকতে পারে না। অসুস্থ হলে ভালো ডাক্তার দেখানোর বা ওষুধ কেনার টাকা থাকে না। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তাকে নিয়ে চিন্তা করতে হয়, কাজে যাওয়া যায় না, আবার চিকিৎসার জন্য ঋণ করতে হয়। এই অসুস্থতা গরীব মানুষকে আরও গরীব করে তোলে।
৭. প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাব (যেমন - পানি, বিদ্যুৎ, রাস্তা)
অনেক গ্রামে বা শহরের গরীব এলাকায় এখনও বিশুদ্ধ পানির অভাব, ভালো পায়খানা নেই, বিদ্যুৎ নেই বা থাকলেও খুব কম সময়ের জন্য থাকে। রাস্তাঘাট ভালো না থাকায় যাতায়াত করা বা জিনিসপত্র বাজারে নিয়ে বিক্রি করা কঠিন। এই ধরনের মৌলিক সুবিধাগুলো না থাকলে মানুষের জীবনযাত্রার মান খারাপ হয় এবং তাদের পক্ষে দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হয়ে যায়।
৮. দুর্নীতি
দুর্নীতি মানে হলো অসৎ উপায়ে লাভ করা। যখন সরকারি টাকা বা সাহায্য গরীব মানুষের কাছে ঠিকমতো পৌঁছায় না, মাঝপথে কেউ সেটা নিয়ে নেয়, তখন তাকে দুর্নীতি বলে। দুর্নীতির কারণে গরীবদের জন্য নেওয়া অনেক ভালো পরিকল্পনাও সফল হয় না। ফলে তারা যে সাহায্য পাওয়ার কথা ছিল, সেটা পায় না এবং তাদের অবস্থার উন্নতি হয় না।
দারিদ্র্যের ফলাফল কী হয়?
দারিদ্র্যের কারণে শুধু একজন মানুষ বা একটা পরিবার কষ্ট পায় না, পুরো দেশটাই পিছিয়ে পড়ে। দারিদ্র্যের কিছু খারাপ ফলাফল হলো:
- মানুষ ঠিকমতো খেতে পায় না, তাই অপুষ্টিতে ভোগে, শরীর দুর্বল হয়ে যায়।
- ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না, ফলে তারা অশিক্ষিত থেকে যায়।
- অসুস্থ হলে চিকিৎসা করাতে পারে না, অনেকে বিনা চিকিৎসায় মারাও যায়।
- থাকার ভালো জায়গা না থাকায় খুব কষ্টে জীবন কাটাতে হয়।
- টাকার অভাবে অনেকে নানা রকম অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে।
- মানুষের মনে হতাশা আসে, তারা দেশের উন্নতিতে ঠিকমতো অংশ নিতে পারে না।
- দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নতি বাধা পায়।
দারিদ্র্য দূর করার জন্য আমরা কী করতে পারি? (সমাধানের উপায়)
দারিদ্র্য একটি বড় সমস্যা হলেও, এটা কমানোর জন্য বা দূর করার জন্য অনেক কিছু করার আছে। সরকার, বিভিন্ন সংস্থা এবং আমরা সাধারণ মানুষ – সবাই মিলে চেষ্টা করলে এই অবস্থা বদলানো সম্ভব। কিছু জরুরি পদক্ষেপ নিচে আলোচনা করা হলো:
১. ধনী-গরীবের পার্থক্য কমানো
এটা খুব জরুরি। সরকার এমন কিছু নিয়ম করতে পারে যাতে ধনীদের আয়ের একটা অংশ কর হিসেবে নিয়ে সেই টাকা গরীবদের কল্যাণে ব্যবহার করা যায়। যেমন, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা বাড়ানো যেতে পারে। গরীবদের জন্য কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে (যেমনটা গ্রামীণ ব্যাংক বা অন্যান্য ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা করে থাকে) যাতে তারা ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করতে পারে। এছাড়া, গরীব মানুষের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য বা চিকিৎসার জন্য বিশেষ সাহায্য দেওয়া যেতে পারে।
২. সবার জন্য ভালো শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা
সব ছেলেমেয়ের জন্য স্কুল শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং তা যেন বিনামূল্যে বা খুব কম খরচে হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু সাধারণ শিক্ষা নয়, কারিগরি বা হাতে-কলমে কাজের প্রশিক্ষণও খুব দরকারি। যেমন, সেলাই, ইলেকট্রিকের কাজ, কম্পিউটারের কাজ, রাজমিস্ত্রির কাজ ইত্যাদি শিখলে মানুষ সহজে কাজ পায় বা নিজেই কিছু করতে পারে। শিক্ষার মান ভালো করতে হবে যাতে ছাত্রছাত্রীরা আসলেই কিছু শিখতে পারে।
৩. নতুন কাজের সুযোগ তৈরি করা
দেশে আরও কলকারখানা স্থাপন করতে হবে, বিশেষ করে গ্রামে যেন মানুষ নিজের এলাকায় কাজ পায়। কৃষিকাজের উন্নতি করতে হবে, যাতে কৃষকরা ভালো ফসল ফলাতে পারে এবং ভালো দামে বিক্রি করতে পারে। ছোট ও মাঝারি ব্যবসার জন্য সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে। যারা নিজেরা কিছু করতে চায়, তাদের সাহায্য করতে হবে।
৪. প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুতি
যেসব এলাকায় বন্যা বা ঝড় বেশি হয়, সেখানে দুর্যোগের আগে মানুষকে সাবধান করার ব্যবস্থা আরও ভালো করতে হবে। নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করতে হবে। দুর্যোগের পর ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত খাবার, পানি, ওষুধ ও থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের ঘরবাড়ি আবার তৈরি করতে বা ফসল ফলাতে সাহায্য করতে হবে। নদী ভাঙন रोकने জন্য বাঁধ দিতে হবে। দুর্যোগে টিকে থাকতে পারে এমন ঘরবাড়ি বা ফসল চাষে উৎসাহ দিতে হবে।
৫. জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখা
পরিবার ছোট রাখার সুফল সম্পর্কে মানুষকে আরও বেশি করে বোঝাতে হবে। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিগুলো যেন সবার জন্য সহজলভ্য হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থাকলে সীমিত সম্পদের উপর চাপ কমবে।
৬. সবার জন্য ভালো স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা
গ্রামেগঞ্জে আরও হাসপাতাল বা ক্লিনিক তৈরি করতে হবে। গরীব মানুষ যেন বিনামূল্যে বা খুব কম খরচে ডাক্তার দেখাতে পারে এবং ওষুধ কিনতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
৭. প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা
সবার জন্য বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যকর পায়খানার ব্যবস্থা করতে হবে। বিদ্যুৎ সুবিধা সব জায়গায় পৌঁছে দিতে হবে। রাস্তাঘাট, সেতু ইত্যাদি তৈরি করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। এতে গ্রামের মানুষ সহজে শহরে আসতে পারবে, তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রি করতে পারবে।
৮. দুর্নীতি বন্ধ করা
সরকারি বা বেসরকারি সব কাজেই স্বচ্ছতা আনতে হবে। যারা দুর্নীতি করবে, তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। গরীবদের জন্য বরাদ্দ টাকা বা সাহায্য যেন তাদের হাতেই পৌঁছায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
৯. নারীদের এগিয়ে আনা (নারী ক্ষমতায়ন)
মেয়েরা যদি ছেলেদের মতো লেখাপড়া করার ও কাজ করার সমান সুযোগ পায়, তাহলে পরিবারের আয় বাড়ে এবং দারিদ্র্য কমে। তাই মেয়েদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। তাদের স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিতে হবে।
১০. কৃষি ও গ্রামের উন্নয়ন
যেহেতু বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ গ্রামে থাকে এবং কৃষিকাজ করে, তাই কৃষির উন্নতি করা খুব জরুরি। কৃষকদের ভালো বীজ, সার ও সেচের সুবিধা দিতে হবে। তারা যেন তাদের ফসলের ন্যায্য দাম পায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রামে ছোট ছোট শিল্প বা ব্যবসা গড়ে তুলতে সাহায্য করতে হবে।
১১. সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা
দারিদ্র্য দূর করা শুধু সরকারের একার কাজ নয়। বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), ধনী ব্যক্তি এবং সাধারণ মানুষ – সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা আমাদের প্রতিবেশীর বিপদে পাশে দাঁড়াতে পারি, কাউকে ছোটখাটো সাহায্য করতে পারি, অথবা কোনো ভালো কাজের সাথে যুক্ত হতে পারি।
উপসংহার: একসাথে লড়লে দারিদ্র্য হার মানবে
দারিদ্র্য মানুষের জীবনকে কষ্টকর করে তোলে, তার মেধা ও সম্ভাবনার বিকাশ হতে দেয় না। কোনো দেশ ততক্ষণ পর্যন্ত উন্নতি করতে পারে না, যতক্ষণ তার বেশিরভাগ মানুষ গরীব থাকে। বাংলাদেশকে যদি আমরা একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে দেখতে চাই, তাহলে আমাদের দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে একসাথে লড়তে হবে। উপরে যে কারণ ও সমাধানগুলো আলোচনা করা হলো, সেগুলোর দিকে মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে অবশ্যই আমরা দারিদ্র্য অনেক কমিয়ে আনতে পারব। এর জন্য দরকার সরকারের সদিচ্ছা, সঠিক পরিকল্পনা এবং আমাদের সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা।
কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs)
১. বাংলাদেশে দারিদ্র্যের প্রধান কারণ কী?
বাংলাদেশে দারিদ্র্যের কোনো একটি প্রধান কারণ নেই, বরং অনেকগুলো কারণ একসাথে কাজ করে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো: ধনী ও গরীবের মধ্যে আয়ের অনেক বেশি পার্থক্য, সবার জন্য ভালো শিক্ষার অভাব, যথেষ্ট কাজের সুযোগ না থাকা, বন্যা বা ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বারবার আসা, এবং দেশের জনসংখ্যা বেশি হওয়া। এছাড়াও অসুস্থতা, দুর্নীতি এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা (যেমন ভালো রাস্তা, হাসপাতাল) সবার কাছে না পৌঁছানোও দারিদ্র্য বাড়াতে সাহায্য করে।
২. শিক্ষা কীভাবে দারিদ্র্য কমাতে সাহায্য করে?
শিক্ষা দারিদ্র্য কমানোর জন্য খুব দরকারি। লেখাপড়া শিখলে মানুষ ভালো চাকরি পায় বা নিজের ব্যবসা শুরু করতে পারে, যার দ্বারা তার আয় বাড়ে। শিক্ষিত মানুষ স্বাস্থ্য সম্পর্কে বেশি সচেতন হয়, ফলে অসুস্থ কম হয় এবং চিকিৎসার খরচ বাঁচে। শিক্ষা মানুষকে তার অধিকার সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে এবং সমাজের উন্নতিতে অংশ নিতে উৎসাহ দেয়। ছেলেমেয়ে উভয়কেই শিক্ষিত করলে পুরো পরিবার ও দেশের উন্নতি হয়।
৩. দারিদ্র্য দূর করতে সরকার কী করতে পারে?
সরকার দারিদ্র্য দূর করতে অনেক কিছু করতে পারে। যেমন:
১. ধনী ও গরীবের মধ্যে আয়ের পার্থক্য কমানোর জন্য নীতি তৈরি করা (যেমন, ধনীদের উপর একটু বেশি কর এবং গরীবদের জন্য ভাতা বা সাহায্য দেওয়া)।
২. সবার জন্য, বিশেষ করে গরীবদের জন্য, ভালো শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং কারিগরি প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়ানো।
৩. নতুন কাজের সুযোগ তৈরি করা, যেমন শিল্প কারখানা স্থাপন বা কৃষি কাজের উন্নতি করা।
৪. প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দ্রুত সাহায্য পাঠানো এবং দুর্যোগে ক্ষতি কমানোর ব্যবস্থা নেওয়া।
৫. গরীব মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করা।
৬. দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
৭. রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ ও পানির মতো প্রয়োজনীয় সুবিধা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া।
৪. সাধারণ মানুষ কীভাবে দারিদ্র্য কমাতে সাহায্য করতে পারে?
সাধারণ মানুষও দারিদ্র্য কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা প্রতিবেশীর বিপদে সাহায্য করতে পারি, গরিব ছেলেমেয়েদের পড়াতে সাহায্য করতে পারি, অথবা কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করতে পারি। নিজেরা সৎ থেকে এবং অন্যকে সাহায্য করার মানসিকতা রাখলে সমাজে পরিবর্তন আনা সম্ভব। এছাড়াও, জিনিসপত্র নষ্ট না করে বা সাশ্রয়ী হয়েও আমরা পরোক্ষভাবে সাহায্য করতে পারি।
৫. বাংলাদেশ থেকে কি দারিদ্র্য পুরোপুরি দূর করা সম্ভব?
দারিদ্র্য পুরোপুরি রাতারাতি দূর করা খুব কঠিন, কিন্তু চেষ্টা করলে অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। এর জন্য সরকারের সঠিক পরিকল্পনা, সেই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন এবং দেশের সব মানুষের একসাথে কাজ করা দরকার। যদি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কাজের সুযোগ বাড়ে এবং ধনী-গরীবের পার্থক্য কমে, তাহলে বাংলাদেশ অবশ্যই দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার পথে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। বাংলাদেশে দারিদ্র্যের কারণ ও তা দূরীকরণের সহজ উপায় এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url