উদারনৈতিক গণতন্ত্রকে মার্কসবাদীরা কীভাবে সমালোচনা করেছেন

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে উদারনৈতিক গণতন্ত্রকে মার্কসবাদীরা কীভাবে সমালোচনা করেছেন নিয়ে আলোচনা করব।

উদারনৈতিক গণতন্ত্রকে মার্কসবাদীরা কীভাবে সমালোচনা করেছেন

মার্কসবাদ কর্তৃক উদারনৈতিক গণতন্ত্রের সমালোচনা

যে গণতন্ত্রের ভিত্তি জনসম্মতির ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং জনগণের কাছে দায়িত্বশীল একটি সরকার থাকে, তাকে বলে উদারনৈতিক গণতন্ত্র। উদারনৈতিক গণতন্ত্রে একটি নির্বাচিত সরকারের অবস্থিতির কথা বলা হয়, যে সরকার জনগণের স্বার্থে নিয়োজিত। উদারনৈতিক গণতন্ত্রে স্বাধীনতা, সাম্য, পরমতসহিঘ্নতা, সমমর্যাদা প্রভৃতি প্রদান করা হয়।

রাজনৈতিক গণতন্ত্র

উদারনৈতিক গণতন্ত্রকে মার্কসবাদীরা সমালোচনা করে বলেছেন যে, এইরূপ গণতন্ত্র কেবলমাত্র রাজনৈতিক গণতন্ত্রকেই প্রতিষ্ঠিত করতে আগ্রহী। আসলে সামন্ত্রতন্ত্রের অবসানের মধ্য দিয়ে বুর্জোয়া বিপ্লবের সাফল্যের ধারায় উদারনীতিবাদের জন্ম হয়। উদারনৈতিক গণতন্ত্রের তাই ধারক ও বাহক হল বুর্জোয়া গোষ্ঠী।

তারা মানবাধিকার বিষয়ক বিপ্লব সংগঠনের মধ্যে দিয়ে উদারনৈতিক গণতন্ত্রকে প্রাধানা দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছে। অতএব, এইরূপ গণতন্ত্র কখনোই সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হতে পারে না: তারা কেবলমাত্র রাজনৈতিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাতেই আগ্রহী। তাই মার্কসবাদ মনে করে যে, প্রকৃত বা আসল গণতন্ত্র তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে, যখন কেবলমাত্র রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য ও সকল স্তরের মানুষের সমানাধিকার।

উদারনৈতিক গণতন্ত্র ও শ্রেণিবৈষম্য

মার্কসবাদ মনে করে, উদারনৈতিক গণতন্ত্রে শ্রেণিবৈষম্য বিদ্যমান। কারণ, তা মুষ্টিমেয় শ্রেণিরই প্রতিনিধিত্ব করে। এইরূপ গণতন্ত্রে সংখ্যাগুরু দরিদ্র-শ্রেণি বা শ্রমিক-কৃষক শ্রেণি ক্ষমতা ভোগ করতে পারে না, তারা তাদের নিজেদের স্বার্থে আইন রচনা করতে পারে না। সকল ব্যাপারেই মুষ্টিমেয় বুর্জোয়া শ্রেণির খবরদারি বজায় থাকে।

অর্থাৎ, একটা বাছাই করা শ্রেণিই সকল ক্ষমতার আধার হিসেবে কাজ করে। তাই উদারনৈতিক গণতন্ত্রে সকল মানুষের স্বার্থ প্রতিফলিত হয় না। অধ্যাপক ল্যাঙ্কি যথার্থই বলেছেন যে, রাজনৈতিক গণতন্ত্র অর্থহীন হবে, যদি না অর্থনৈতিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রোলেতারীয় একনায়কত্ব

মার্কস, লেনিন প্রমুখ মনে করেন যে, বুর্জোয়া শাসনের অবসানের পর প্রোলেতারীয় একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে কার্যত, শ্রমিক শ্রেণিই ক্ষমতার অধিকারী হবে এবং তারা সমাজের সংখ্যাগুরু শ্রেণি হওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত হবে সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বার্থে রচিত নতুন এক ব্যবস্থা।

এতকাল মুষ্টিমেয় পুঁজিপতি শ্রেণির স্বার্থরক্ষার জন্য প্রচারিত গণতন্ত্রের অবসান ঘটে গিয়ে প্রোলেতারীয় একনায়কত্বের প্রতিষ্ঠা হলে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনই প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই, প্রোলেতারীয় একনায়কত্বাধীন প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রই হল প্রকৃত গণতন্ত্র।

উদারনৈতিক গণতন্ত্র মার্কসবাদীদের চোখে গণতন্ত্রের মুখোশ ছাড়া আর কিছুই নয়। অতীতের সমাজব্যবস্থাকেই নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয় উদারনৈতিক গণতন্ত্রে। সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রেই উদারনৈতিক গণতন্ত্রের অন্ধকার দূরীভূত হতে পারে।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। উদারনৈতিক গণতন্ত্রকে মার্কসবাদীরা কীভাবে সমালোচনা করেছেন এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url