বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও | বাংলাদেশের অবস্থান সীমা ও আয়তন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও | বাংলাদেশের অবস্থান সীমা ও আয়তন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও নিয়ে আলোচনা করব।

বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। অথবা, বাংলাদেশের অবস্থান, সীমা ও আয়তন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত পরিচয় - bangladesher sankhipto parichay

ভূমিকা

১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে ভারত বিভক্ত হয়ে স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। অবশেষে ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তান রাষ্ট্র হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান

বাংলাদেশ উত্তর গোলার্ধে বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যমণ্ডিত একটি মনোরম দেশ। এটি ২০°৩৪′ ও ২৬°৩৮′ উত্তর অক্ষাংশের মধ্যে এবং ৮৮°০১′ ও ৯২°৪১′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অবস্থিত। বাংলাদেশের প্রায় মধ্যস্থান দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম করেছে। ফলে বাংলাদেশ ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত।

বাংলাদেশের সীমা

বাংলাদেশের উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি ও কুচবিহার জেলা এবং আসাম ও মেঘালয় রাজ্য। পূর্বে আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্য এবং মায়ানমার। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ।

বাংলাদেশের উপকূল সীমারেখা

বাংলাদেশের উপকূল রেখার দৈর্ঘ্য ৭১৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বাংশের টেকনাফ থেকে শুরু করে খুলনার হরিণভাঙা নদীর মোহনা পর্যন্ত এ উপকূল রেখা বিস্তৃত, যা দেশের মোট সীমানার ১৫.৩% ভাগ। আয়তনঃ বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার। বাংলাদেশের আঞ্চলিক সমুদ্রসীমা প্রায় ২২ কিলোমিটার (১২ নটিকেল মাইল) পর্যন্ত বিস্তৃত।

বাংলাদেশের উপজীবিকা

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৫ ভাগ প্রত্যক্ষভাবে কৃষিজীবী এবং ২৫ ভাগ লোক চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়োজিত আছে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা

জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের নবম বৃহত্তম দেশ। ২০১১-১২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৪ কোটি ৯৭ লক্ষ ৭২ হাজার ৩৬৪ জন। এর মধ্যে ৭ কোটি ৪৯ লক্ষ ৮০ হাজার ৩৪৬ জন পুরুষ এবং ৭ কোটি ৪৭ লক্ষ ৯১ হাজার ৯৭৮ জন মহিলা। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি কিলোমিটারে ১০১৫ জন। জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ১.৩৭।

বাংলাদেশের ধর্ম

বাংলাদেশের অধিবাসীদের মধ্যে ৮৬% মুসলমান, ১৩% হিন্দু এবং ১.১ ভাগ বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।

বাংলাদেশের ভাষা

বাংলাদেশের জাতীয় ও রাষ্ট্র ভাষা বাংলা। অধিবাসীদের প্রায় ৯৯% জন বাংলা ভাষায় কথা বলে। বিদেশি ভাষার মধ্যে ইংরেজি অধিক প্রচলিত। এ ছাড়াও আরবি, উর্দু ও উপজাতীয় ভাষায় কথা বলে।

বাংলাদেশের শিক্ষা

বর্তমানে বাংলাদেশের ৫৮টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ১৩৩টি সরকারি মেডিকেল কলেজ, ১টি স্নাতকোত্তর চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়, ২২৮টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, ১৩৬৯টি সাধারণ কলেজ, ৫৭২টি সরকারি কলেজ, ১৮২টি পলিটেকনিকেল ইনস্টিটিউট, ১৮,৫০০টি হাইস্কুল, ৩১৭টি সরকারি হাইস্কুল, ৮০,৩৯৭টি প্রাইমারি স্কুল এবং ৪৩৯টি মাদরাসা আছে।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে দেশে এমপিভুক্ত নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা ১৫,৪৯৮টি, কলেজের সংখ্যা ২,৪০৩টি এবং মাদরাসার সংখ্যা ৭,৩৪৬টি। এছাড়া ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট ও বিএমটিসহ মোট এমপিওভুক্ত প্রাথমিকোত্তর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৬,৩৩৫টি।

বাংলাদেশের প্রশাসনিক বিভাগ

বাংলাদেশে বর্তমানে ৮টি প্রশাসনিক বিভাগ আছে, যথা- ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর। এ ৭টি বিভাগে ২১টি সাবেক জেলা ও বর্তমানে ৬৪টি জেলা রয়েছে। ঢাকা বিভাগের ১২টি জেলা, রাজশাহী বিভাগে ৮টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১টি, খুলনা বিভাগে ১০টি, বরিশাল বিভাগে ৭টি এবং সিলেট বিভাগে ৪টি, রংপুর বিভাগে ৮টি জেলা রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে ৬৪৪টি থানা, ৪৮৫টি উপজেলা, ৪৫৬২টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৫৪৩২৭টি মৌজা, ৮৭১৯০টি গ্রাম এবং ৭টি সিটি কর্পোরেশন বাদে ৩১৬টি পৌরসভা রয়েছে।

বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য

বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের মধ্যে ধান, পাট, চা, তামাক, ইক্ষু, ডাল, তৈলবীজ অন্যতম। এসব কৃষিপণ্য ছাড়া নানা প্রকার তরিতরকারি ও শাকসবজি উৎপন্ন হয়। যেমন- আলু, পটোল, লাউ, কুমড়া, বেগুন, মরিচ, ঢেঁড়শ, রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদি।

বাংলাদেশের খনিজ সম্পদ

বাংলাদেশ খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ নয়। বাংলাদেশে প্রধান খনিজ সম্পদ হলো প্রাকৃতিক গ্যাস, কঠিন শিলা, কয়লা, চুনাপাথর, সিলিকা বালি, পিট কয়লা, চীনামাটি ইত্যাদি।

বাংলাদেশের শিল্পকারখানা

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। দেশের মোট জাতীয় আয়ের শতকরা ১১ ভাগ শিল্প থেকে আসে। পাট, বস্ত্র, সিমেন্ট, সার, চিনি, লোহা ও ইস্পাত, চামড়া, মৎস্য, তৈরি পোশাক কারখানা বাংলাদেশের প্রধান শিল্প। তবে প্রাকৃতিক ও জনসম্পদকে কাজে লাগিয়ে শিল্পক্ষেত্রে উন্নতির চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য

বিভিন্ন দেশের সাথে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের মাধ্যমে সমুদ্রপথে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য সংঘটিত হয়। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে পাট, পাটজাতদ্রব্য, তৈরি পোশাক, চা, চামড়া, মৎস্য ইত্যাদি। আমদানি দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে খাদ্যশস্য, যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ, রেল ইঞ্জিন, মোটরগাড়ি, ওষুধপত্র ইত্যাদি।

বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি

বাংলাদেশের পূর্ব ও উত্তরে সামান্য পাহাড়িয়া অঞ্চল ছাড়া বাকি অঞ্চলগুলো নদী বিধৌত উর্বর সমতল ভূমি।

উপসংহার

বাংলাদেশ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সবুজ সমারোহের একটি মনোরম দেশ। দেশের আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার ঘনত্বে এদেশ বিশ্বে প্রথম। অধিকাংশ লোক কৃষিজীবী এবং অশিক্ষিত। বাংলাদেশ একটি মিশ্র অর্থনীতির দেশ।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও | বাংলাদেশের অবস্থান সীমা ও আয়তন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url