বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব আলোচনা কর

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব আলোচনা কর নিয়ে আলোচনা করব।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব আলোচনা কর। কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। এখানকার প্রায় ৮৫% লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব আলোচনা কর

কৃষি বাংলাদেশের জনগণের প্রধান পেশা: মোট জাতীয় আয়ের ৩৫% এবং রপ্তানি আয়ের ৬০% আসে কৃষি হতে। বর্তমানে আমাদের দেশের ৭৩% কর্মক্ষম লোক কৃষিকাজে নিয়োজিত আছে। নিম্নে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব বিশ্লেষণ করা হলো:


  1. খাদ্য যোগান: কৃষি বাংলাদেশের জনগণের খাদ্য সরবরাহের প্রধান উৎস। বাংলাদেশের মোট খাদ্যের ৯০% কৃষি হতে পাওয়া যায়। ধান, গম, ভুট্টা, যব, আলু, নানাবিধ ফলমূল, ডাল, তেলের বীজ, শাকসবজি প্রভৃতি এদেশের খাদ্যশস্যের অন্তর্গত।
  2. অর্থকরী ফসল: খাদ্যশস্য ছাড়াও বাংলাদেশে প্রচুর অর্থকরী ফসল উৎপাদিত হয়। এদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল পাট। এ ছাড়ও চা, আখ, তামাক প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের অধিকাংশ আসে পাট ও পাটজাত দ্রব্য হতে।
  3. কর্মসংস্থান: বাংলাদেশের ৮০% লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। মোট কর্মসংস্থানের শতকরা ৬৪ ভাগ লোক কৃষিতে নিয়োজিত। জাতীয় আয়ের অধিকাংশ আসে কৃষিখাত হতে।
  4. জাতীয় আয়: বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের অধিকাংশ আসে কৃষিখাত হতে।
  5. রপ্তানি আয় ও বৈদেশিক মুদ্রা: পাট, চা প্রভৃতি রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রভৃত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। এটি আমাদের দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস।
  6. শিল্পের কাঁচামাল সংগ্রহ: বাংলাদেশের অধিকাংশ শিল্প কৃষিনির্ভর। যেমন- পাটশিল্প, চা শিল্প, তামাক শিল্প, চিনি শিল্প, রেশম, তামাক, ইক্ষু প্রভৃতি কাঁচামালের উপর নির্ভর করে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পও গড়ে উঠেছে।
  7. গৃহনির্মাণ সামগ্রী: বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামাঞ্চলের কাঁচা ঘরবাড়ি, খড়, শণ, পাটকাঠি প্রভৃতি উপকরণ দ্বারা নির্মিত।
  8. গবাদিপশুর খাদ্য: কৃষিজাত দ্রব্যাদি ধানের খড়, কলাই, ডাল, তেলবীজ, নানা ফসলের ভুসি গবাদিপশু ও হাঁস, মুরগির খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  9. জ্বালানি: কৃষিজাত শণ, খড়, পাটকাঠি প্রভৃতি আমাদের গ্রামাঞ্চলে জ্বালানিরূপে ব্যবহৃত হয়।
  10. রাজস্ব: বাংলাদেশে সরকার কৃষিজ ও কৃষিতে ব্যবহৃত জমি থেকে প্রচুর রাজস্ব আদায় করে থাকে।
  11. বস্ত্র সংগ্রহ: বাংলাদেশের কিছু কৃষিজাত পণ্য হতে নানা ধরনের কাপড়-চোপড় তৈরি করা হয়।
  12. জীবনযাত্রার মান: এদেশের জনগণের আয় ও জীবনযাত্রার মান কৃষির উপর নির্ভরশীল।
  13. শিল্পজাত দ্রব্যের বাজার সৃষ্টি: শিল্পে উৎপাদিত সার, কীটনাশক ওষুধ, চাষাবাদের যন্ত্রপাতি, পণ্য সংরক্ষণের সরঞ্জাম ইত্যাদি কৃষির প্রধান উপকরণ।
  14. নির্ভরশীলতা: বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর হওয়ায় প্রায় প্রতিটি মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। কাজেই কৃষির উন্নতি ও অবনতির উপর জড়িয়ে আছে এদেশের মানুষের ভাগ্য।
  15. অনুকূল পরিবেশ: কৃষিপ্রধান এদেশের মাটির ক্ষয়রোধ, চাষাবাদের পরিবেশ, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে নিয়মিত কৃষিকাজ পরিচালনা করতে হবে। চাষাবাদ, ফসল উৎপাদন, সেচ, সার ইত্যাদি প্রয়োগের মাধ্যমে চাষের অনুকূল অবস্থা বজায় রাখতে হবে।
  16. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান উৎস: বাংলাদেশের রপ্তানিজাত দ্রব্যের প্রায় সবটাই কৃষিজাত দ্রব্য। দেশের পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চা, তামাক ইত্যাদি মোট রপ্তানি আয়ের ৬০%।

পরিশেষে বলা যায় যে, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রগতি মোটামুটি কৃষিকে নিয়েই আবর্তিত। কৃষিখাতেই আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর একাংশের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। কৃষিই এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি। এটি আমাদের আর্থসামাজিক জীবনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব আলোচনা কর এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url