বাংলাদেশের জলবায়ুর বর্ণনা দাও | বাংলাদেশের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যাবলি লেখ

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে বাংলাদেশের জলবায়ুর বর্ণনা দাও | বাংলাদেশের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যাবলি লেখ নিয়ে আলোচনা করব।

বাংলাদেশের জলবায়ুর বর্ণনা

ভূমিকা

বাংলাদেশের জলবায়ু মোটামুটি উষ্ণ, আর্দ্র ও সমভাবাপন্ন। এদেশের মধ্যভাগ দিয়ে কর্কট ক্রান্তি রেখা অতিক্রম করায় মৌসুমি জলবায়ুর অধিক প্রভাবহেতু সামগ্রিকভাবে এটি "ক্রান্তীয় মৌসুমি" জলবায়ুর অন্তর্গত। এদেশের গড় তাপমাত্রা ২৪.৪° সে. থেকে ২৫.৭° সে.। গ্রীষ্মকালীন সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩৮০ সে. ও ২১° সে. এবং শীতকালীন সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যথাক্রমে ২৯০ ও ১১° সে.।

বাংলাদেশে জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশের জলবায়ুতে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ দেখা যায়। যথাঃ

  • (ক) সমভাবাপন্ন জলবায়ু।
  • (খ) এদেশের জলবায়ু সম্পূর্ণরূপে মৌসুমি বায়ু দ্বারা প্রভাবান্বিত।
  • (গ) গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন তাপমাত্রা চরম নয় (২১° সে. থেকে ৩৮° সে. এবং ১১° সে. থেকে ২৯° সে.)।
  • (ঘ) আর্দ্র গ্রীষ্মকাল ও শুষ্ক শীতকাল।
  • (ঙ) বর্ষাকালে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২০৩ সেমি। সর্বাপেক্ষা কম বৃষ্টি হয় নাটোরের লালপুরে এবং সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় সিলেটের লাল খানে।

বাংলাদেশে জলবায়ুর প্রভাব

এদেশে জলবায়ুর প্রভাব নিম্নলিখিত ক্ষেত্রসমূহে দেখা যায়। যথাঃ (ক) কৃষি, (খ) শিল্প, (গ) জীবজন্তু, (ঘ) বনাঞ্চল, (ঙ) মৎস্য, (চ) পরিবহন, (জ) লোকবসতি, (ছ) প্লাবন, (জ) বায়ুপ্রবাহ, (ঝ) উত্তাপ, (ঞ) বৃষ্টিপাত, (ট) কালবৈশাখি, (ঠ) উষ্ণ ও আর্দ্র গ্রীষ্মকাল, (ড) শুষ্ক শীতকাল, (ঢ) বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তা, (ঙ) জনগণের প্রকৃতি ও (ণ) ব্যবসা-বাণিজ্য।

শ্রেণিবিভাগ: বাৎসরিক তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদি তারতম্যের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের জলবায়ুকে ছয়টি ঋতুতে বিভক্ত করা যায়। কিন্তু ষড়ঋতু একটির সাথে অন্যটি এত নিবিড় যে, এদের বৈশিষ্ট্য আলাদা করা কষ্টকর। ফলে সঠিকভাবে জলবায়ু আলোচনার জন্য নিম্নের তিনটি ঋতুতে আলোচনা করা হলো:-

১। শীতকাল (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি):

বর্ষাকালের পরই শীত ঋতুর আবির্ভাব হয়। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকাল স্থায়ী। থাকে। এ সময় সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থান করায় সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পড়ে। এতে উত্তাপের পরিমাণ কম থাকে বলে শীতকালে যথেষ্ট শীত পড়ে। এ ঋতুর বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ ঢাকায় ১৮° সে. ও নোয়াখালীতে ১৯° সে.।

(ক) তাপমাত্রা: শীতকালীন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৯° সে এবং সর্বনিম্ন ১১° সে.। জানুয়ারি মাস শীতলতম মাস। এ মাসের গড় তাপমাত্রা ১৮° সেলসিয়াস। সামুদ্রিক প্রভাবে এদেশের দক্ষিণাঞ্চল কিছুটা উষ্ণ থাকে এবং উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকে। (দিনাজপুরে ১৭° সে.)।

(খ) বায়ুপ্রবাহ: এ সময় বাংলাদেশের উপর দিয়ে উত্তর-পূর্ব দিক হতে শীতল বায়ু প্রবাহিত হয়। এ বায়ুর সর্বনিম্ন আর্দ্রতা প্রায় ৩৬%।

(গ) বৃষ্টিপাত: উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু স্থলভাগের উপর দিয়ে আসে বলে শীতকালে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে। তবুও দেশের উত্তর-পূর্বের পাহাড়িয়া এলাকায় বাধা পেয়েও নিম্নচাপ হতে ৪% বৃষ্টিপাত হয়। স্থানভেদে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫ ১৫ সেমি। এ সময়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য শুষ্ক ঋতু ও আরামদায়ক এবং এ ঋতুতে আকাশ থাকে নির্মল, মেঘমুক্ত ও জলীয়বাষ্পহীন।

২। গ্রীষ্মকাল (মার্চ-মে):

বাংলাদেশে মার্চ হতে মে মাস পর্যন্ত্ সময়কে গ্রীষ্মকাল ধরা হয়। গ্রীষ্মকাল উষ্ণতম ঋতু এবং এপ্রিল মাস উষ্ণ। এ সময় সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে হতে উত্তর গোলার্ধের দিকে অগ্রসর হয়।

গ্রীষ্মকালের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ

(ক) উষ্ণতা: এ ঋতুতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮০ সে সর্বনিম্ন ২১° সে। সামুদ্রিক বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ দিকে তাপমাত্রা কম এবং উত্তরে ক্রমান্বয়ে বেশি। এপ্রিল মাসে গড় উষ্ণতা ২৮° সে। কক্সবাজার ২৭০ সে. নারায়ণগঞ্জে ২৯° সে., রাজশাহীতে ৩০° সে. উষ্ণতা বিরাজ করে।

(খ) বায়ুপ্রবাহ: গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশের উপর দিয়ে শুষ্ক ও আর্দ্র দক্ষিণ-পঞ্চিম দিক হতে যথাক্রমে উষ্ণ ও শীতল বায়ু প্রবাহিত হয়। এ দুই বায়ুর সংঘর্ষে বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে প্রায়ই ঝড় হতে দেখা যায়, যা কালবৈশাখি নামে পরিচিত। গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ৪৮ কিলোমিটার হতে ১২৮ কিলোমিটার-এর বেশি হয়।

(গ) বৃষ্টিপাত: বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টিপাত কালবৈশাখি ঝড় হতে সংঘটিত হয়। শিলাবৃষ্টিসহ এ ঝড় উত্তর-পশ্চিম হতে উৎপত্তি লাভ করে। বাংলাদেশের বার্ষিক বৃষ্টিপাতের এক-পঞ্চমাংশ গ্রীষ্মকালে হয়। একে মৌসুমি বায়ুর অগ্রদূত বলা হয়। ৩৮০ সেমি সমবর্ষণ রেখাটি উত্তর-দক্ষিণে প্রসারিত হয়ে বাংলাদেশকে দু'টি অঞ্চলে বিভক্ত করে।

সিলেট জেলাতে ৭৫ সেমি ও রাজশাহীতে ২৫ সেমি বৃষ্টিপাত হয়। এ সময়ে গড় বৃষ্টিপাত ৫১ সেমি। এ সময়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য- (i) কালবৈশাখি ঝড় সংঘটিত হয়। (ii) বজ্র বিদ্যুৎসহ প্রবল ঝড় (উত্তর-পশ্চিম হতে) শিলা বৃষ্টি হয়।

৩। বর্ষাকাল (জুন-অক্টোবর):

আমাদের দেশে জুন হতে অক্টোবর পর্যন্ত সময়কে বর্ষাকাল ধরা হয়। অর্থাৎ শীত ও গ্রীষ্মের মাঝামাঝি বৃষ্টিবহুল সময়কে বর্ষাকাল বলে। মৌসুমি বায়ুর আগমন দ্বারা বর্ষার সূচনা হয়।

বর্ষাকালীন জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ

(ক) উষ্ণতা: এ সময় বাংলাদেশে সূর্য লম্বভাবে কিরণ দিলেও অধিক বৃষ্টিপাতের দরুন তাপমাত্রা তেমন অনুভূত হয় না। এ সময় গড় তাপমাত্রা ২৭° সে.। দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলে ২৪° সে. এবং রাজশাহীতে ২৯.৪০০ সে., কুমিল্লায় ২৭.৭০° সে.।

(খ) বায়ুপ্রবাহ: জুন মাসে সূর্য বাংলাদেশের উপর অবস্থান করায় বায়ুচাপের পরিবর্তন হয় এবং দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে। দক্ষিণ- পূর্ব আয়ন বায়ু নিরক্ষরেখা অতিক্রম করার সময় ফেরেলের সূত্রানুসারে উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুতে পরিণত হয়। বর্ষার শেষের দিকে এদেশে সাইক্লোন আঘাত হানে।

(গ) বৃষ্টিপাত: বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতে ও বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে এতে প্রচুর জলীয়বাষ্প থাকে। বাংলাদেশে বর্ষাকালে সারা বছরের মোট বৃষ্টিপাতের ৭৫% হয়। এ সময় গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সর্বনিম্ন ১১৯ সেমি এবং সর্বোচ্চ ৩৪৫ সেমি। পূর্বাঞ্চলে অধিক বৃষ্টিপাত হয় এবং পশ্চিমাঞ্চলে কম বৃষ্টিপাত হয়। যেমন- পাবনায় ১১৪ সেমি রাঙামাটিতে ২৯০ সেমি, ও সিলেটে ৩৪৫ সেমি বৃষ্টিপাত হয়।

উপসংহার

বাংলাদেশের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগত দিক হতে আরামদায়ক শীতকাল, উষ্ণ গ্রীষ্ম এবং উষ্ণ আর্দ্র বর্ষাকাল। এ জলবায়ু দ্বারা আমাদের অর্থনৈতিক ও কৃষিজীবী তথা কৃষি, শিল্প, সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা প্রণালি সরাসরি প্রভাবিত।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। বাংলাদেশের জলবায়ুর বর্ণনা দাও | বাংলাদেশের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যাবলি লেখ এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url