বাংলাদেশের জনগণের স্বল্প মাথাপিছু আয়ের কারণ ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির উপায়সমূহ আলোচনা কর

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে বাংলাদেশের জনগণের স্বল্প মাথাপিছু আয়ের কারণ ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির উপায়সমূহ আলোচনা কর নিয়ে আলোচনা করব।

বাংলাদেশের জনগণের স্বল্প মাথাপিছু আয়ের কারণ ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির উপায়সমূহ আলোচনা কর

বাংলাদেশের জনগণের স্বল্প মাথাপিছু আয়ের কারণ ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির উপায়সমূহ আলোচনা কর। অথবা, বাংলাদেশের স্বল্প মাথাপিছু আয়ের কারণসমূহ লেখ।

বাংলাদেশে স্বল্প মাথাপিছু আয়ের কারণঃ বিশ্বের নিম্ন আয়ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, জাপান প্রভৃতি উন্নত দেশের মাথাপিছু আয় যেখানে প্রায় ৩৫ হাজার মার্কিন ডলারেরও বেশি, সেখানে বাংলাদেশে এ আয় মাত্র ২৮১৪ মার্কিন ডলার। নিম্ন আয়ের কারণে এখানে জীবনযাত্রার মানও নীচু। বাংলাদেশে স্বল্প মাথাপিছু আয়ের কারণগুলো নিচে আলোচনা করা হলোঃ

  1. ঔপনিবেশিক শাসনের অবহেলো: প্রায় দু'শ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ও স্বাধীনতাপূর্ব পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ছিল মন্থর।
  2. কৃষির অনুন্নতিঃ বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। কিন্তু এদেশে কৃষি ব্যবস্থা অনুন্নত ও নিম্ন উৎপাদনশীল। অর্থনীতির প্রধান খাত হিসেবে কৃষির উৎপাদন ক্ষমতা কম হওয়ায় এদেশের জাতীয় ও মাথাপিছু আয় কম। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনযাত্রার মানও নীচু।
  3. শিল্পের অনগ্রসরতাঃ বাংলাদেশের শিল্পখাত অনুন্নত। জাতীয় আয়ের মাত্র শতকরা ১৬ ভাগ শিল্প খাত থেকে আসে। শিল্পের অনগ্রসরতার ফলে এদেশে জাতীয় উৎপাদন কম এবং কর্মসংস্থানের সুযোগও সীমিত।
  4. অন্যান্য খাতের অনুন্নয়ন: কৃষি শিল্পের অনুন্নতির পাশাপাশি বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য সেবাখাতের প্রত্যাশিত প্রসার ঘটে নি। ফলে জাতীয় উৎপাদন ও মাথাপিছু আয় দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে না।
  5. উচ্চহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি: বাংলাদেশে বিগত কিছু সময় যাবত জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চহার (বর্তমানে এই হার ১.৪৭%) অব্যাহত থাকায় দেশের সীমিত সম্পদ ও উন্নয়নের উপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
  6. বেকার সমস্যা: বিনিয়োগের স্বল্পতা এবং উচ্চহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য এদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে না। বর্তমানে দেশের প্রায় ৩৩ ভাগ শ্রমশক্তি বেকার।
  7. বিনিয়োগযোগ্য মূলধনের স্বল্পতা: স্বাধীনতা উত্তরকালে বাংলাদেশে ব্যবসায়ী পুঁজির বিকাশ ঘটলেও শিল্প পুঁজির বিকাশ ও যোগান অত্যন্ত কম। এ কারণে শিল্প, কৃষিসহ উৎপাদনের অন্যান্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট কম।
  8. শ্রমিকের নিম্ন উৎপাদনশীলতাঃ সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষার অভাব ও তার নিম্নমানের জন্য আমাদের দেশের অধিকাংশ শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা কম।
  9. প্রাকৃতিক সম্পদের অপূর্ণ ব্যবহারঃ বাংলাদেশে যেসব প্রাকৃতিক সম্পদ (কৃষি, বন, মৎস্য, পশু, খনিজ, পানি প্রভৃতি) আছে তা বিনিয়োগযোগ্য পুঁজি এবং যথাযথ প্রযুক্তির অভাবে ব্যবহার করা যায় না। ফলে উৎপাদন ও আয় দ্রুত বাড়ে না।
  10. বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতিঃ বাংলাদেশে দীর্ঘকাল যাবৎ বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতির জন্য বাণিজ্য থেকে উদ্বৃত্ত সৃষ্টি হয় না। এজন্যও জাতীয় ও মাথাপিছু আয় কম।
  11. প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছর সংঘটিত বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে প্রচুর সম্পদের ক্ষতি হয় এবং উৎপাদন বিনষ্ট হয়। এজন্য আয় কমে এবং জীবনযাত্রার মান নীচু হয়।

বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধির উপায়ঃ জনসাধারণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে হলে বাংলাদেশকে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করতে হবেঃ

  • দ্রুত শিল্পায়ন: দ্রুত শিল্পায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করতে হবে।
  • কৃষি উন্নয়ন: কৃষির উপর এদেশের অধিকাংশ লোক নির্ভরশীল। কাজেই জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করতে হলে কৃষি হতে আয় বৃদ্ধি করতে হবে।
  • প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারঃ প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করা যায়।
  • শিক্ষাবিস্তারঃ বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করতে হলে দেশে অধিকসংখ্যক স্কুল ও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে কারিগরি ও প্রকৌশলী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।
  • কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধিঃ দেশে অধিকতর কর্মসংস্থানের সুযোগসুবিধা সৃষ্টি করে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে হবে।
  • জাতীয় আয়ের সুষম বণ্টনঃ মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান বাড়াতে হলে জাতীয় আয়ের সুষম বণ্টন করতে হবে।
  • সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়নঃ একটি সুষ্ঠু ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনা' প্রণয়নই বাংলাদেশের জনসাধারণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তা করতে পারে।

উপসংহারঃ পরিশেষে উপরিউক্ত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করা হলে বাংলাদেশের জনসাধারণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে এবং জীবনযাত্রার মান আরও উন্নত হবে।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। বাংলাদেশের জনগণের স্বল্প মাথাপিছু আয়ের কারণ ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির উপায়সমূহ আলোচনা কর এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url