সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি কাকে বলে? সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি কাকে বলে? সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর নিয়ে আলোচনা করব।

সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি কাকে বলে? সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর

সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি কাকে বলে? সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর। অথবা, সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্যগুলো লেখ।

ধনতন্ত্রে শ্রমিক শোষণের মাধ্যমে পুঁজিপতির মুনাফা বৃদ্ধির অব্যাহত প্রক্রিয়া চালু থাকায় আয় ও সম্পদের বণ্টন অসম, অর্থাৎ সমাজের অধিকাংশ সম্পদের মালিক মুষ্টিমেয় পুঁজিপতি উৎপাদনকারী এবং স্বল্প পরিমাণ সম্পদ সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র জনগণের মালিকানাধীন। এ অসম বণ্টন ব্যবস্থা থেকেই সৃষ্টি হয় শ্রেণিসংঘাত এবং ধনবাদী সমাজের সংকট।

সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিঃ সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে সমাজের অধিকাংশ সম্পদ ও উৎপাদনের উপাদানের উপর ব্যক্তিগত মালিকানার পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় মালিকানা বজায় থাকে। সরকার দেশের উৎপাদন ও বণ্টন প্রক্রিয়া সম্পর্কে মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অধিকাংশ শিল্পকারখানা ও উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের মালিক সরকার এবং সেগুলো সরকারি নির্দেশে পরিচালিত হয়ে থাকে।

কারখানাগুলোর শ্রমিকরাও সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত ও নিয়ন্ত্রিত। কী কী দ্রব্য কত পরিমাণে, কীভাবে এবং কার জন্য উৎপাদিত হবে তা সরকারি সিদ্ধান্ত দ্বারা নির্ধারিত হয়। এ অর্থনীতিতে সম্পদের মালিকানা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমে সরকার দেশের প্রধান প্রধান অর্থনৈতিক প্রশ্নে নীতি নির্ধারণ করে থাকে।

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য: বিশুদ্ধ সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির সংজ্ঞা ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে এর নিম্নোক্ত কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়:

  1. সম্পদের রাষ্ট্রীয় মালিকানা: সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে অধিকাংশ সম্পদ ও উৎপাদনের উপাদানগুলোর উপর সরকারি মালিকানা বিরাজ করে। দেশের অধিকাংশ শিল্পকারখানা ও উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের মালিক সরকার। এজন্য সেক্ষেত্রে সমাজে দ্রব্যসামগ্রীর উৎপাদন সাধারণভাবে ব্যক্তি উদ্যোগের পরিবর্তে সরকারি উদ্যোগে সম্পন্ন হয়।
  2. অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরকারি নির্দেশনা: সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে সরকার দেশের উৎপাদন ও বণ্টনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডে মৌলিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কোন দ্রব্য কী পরিমাণে ও কী পদ্ধতিতে উৎপাদিত হবে এবং তা উৎপাদনগুলোর মধ্যে কীভাবে বণ্টিত হবে তা সরকারি সিদ্ধান্ত দ্বারা স্থির করা হয়। অর্থাৎ দেশের প্রধান প্রধান উৎপাদন, বণ্টন ও অন্যান্য অর্থনৈতিক প্রশ্নে সরকার নীতি নির্ধারণ ও পরিচালকের ভূমিকা পালন করে।
  3. ভোক্তার স্বাধীনতার অভাবঃ সমাজতন্ত্রে ভোক্তারা ধনতন্ত্রের মতো ভোগের অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভোক্তাবা সরকার নির্ধারিত উৎপাদিত দ্রব্যাদি ভোগ করে থাকে। অবশ্য সামাজিকভাবে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নির্বাচন ও ক্রয়ের ব্যাপারে ভোক্তার স্বাধীনতা বজায় থাকে।
  4. অবাধ প্রতিযোগিতার অভাব: অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগে উৎপাদন পরিচালিত হওয়ায় সেখানে বহুসংখ্যক বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মতো অবাধ প্রতিযোগিতা থাকে না। অবশ্য সরকারি মালিকানাধীন উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা সবসময় থাকে।
  5. ব্যক্তিগত মুনাফার অনুপস্থিতি: সমাজতন্ত্রে ব্যক্তিগত মুনাফার কোনো স্থান নেই। কারণ এখানে মুনাফার পরিবর্তে জাতীয় চাহিদা ও সামগ্রিক কল্যাণের জন্য উৎপাদন করা হয়। ব্যক্তিগত মুনাফার স্থান না থাকায় এ সমাজে আয়ের বণ্টনও সুষম।
  6. সম্পদের সুষম বণ্টন: সমাজতন্ত্রে বণ্টন ব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত সুষম। এখানে আয় বণ্টনের মূলনীতি হলো প্রত্যেকে তার যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ এবং কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাবে। এ রকম বণ্টন নীতির ফলে সমাজতন্ত্রে অর্থনৈতিক কাজের সুফল সকলে লাভ করে। এর ফলে সামাজিক ন্যায়বিচারের পথ প্রশস্ত হয়।
  7. সামাজিক নিরাপত্তা: সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী সরকার দেশের অধিকাংশ উৎপাদন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে জনসাধারণের প্রাথমিক প্রয়োজনগুলো পূরণের চেষ্টা করা। অর্থাৎ প্রতিটি লোকের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং জীবনের সাধারণ ঝুঁকির বিরুদ্ধে আর্থিক নিরাপত্তা প্রদানের চেষ্টা করা হয়।
  8. বেকারত্বের অনুপস্থিতি: বিশুদ্ধ সমাজতন্ত্রে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় অধিকাংশ সক্ষম ব্যক্তির জন্য কাজের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে পরিকল্পিত উৎপাদন ব্যবস্থার ফলে উৎপাদন ও ভোগের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা করা হয়। এর ফলে উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অক্ষুন্ন থাকায় বেকারত্বের অবকাশ অপেক্ষাকৃত কম।
  9. শ্রমিক শোষণের সুযোগ কমঃ বিশুদ্ধ সমাজতন্ত্রে রাষ্ট্র বা সরকার কর্তৃক অধিকাংশ উৎপাদন কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হয়। সেখানে ব্যক্তিপর্যায়ে মুনাফাভিত্তিক উৎপাদন হয় না। ফলে ধনতন্ত্রের মতো পুঁজিপতির দ্বারা শ্রমিককে স্বল্প মজুরি প্রদান ও শোষণ করার সুযোগ কম।

উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার থেকে বলা যায়, সমাজতান্ত্রিক দেশে সামাজিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। এখানে সম্পদের অপচয় হয় না বললেই চলে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার ক্রমোন্নতির মাধ্যমে জাতীয় আয় বাড়ে। ফলে বেকারত্বের হার থাকে অতি নগণ্য। সরকারি উদ্যোগে মানুষের জীবনে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো প্রাথমিক অভাবগুলো সমাজতান্ত্রিক সমাজে মেটানোর চেষ্টা করা হয়।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি কাকে বলে? সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url