সুশাসনের প্রতিবন্ধকতা - Obstacles of Good Governance

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে সুশাসনের প্রতিবন্ধকতা - Obstacles of Good Governance নিয়ে আলোচনা করব।

সুশাসনের প্রতিবন্ধকতা

যে দেশে সুশাসনের কাঠামো যত মজবুত, সেখানে সমৃদ্ধি তত বেশি। তবে সুশাসন নিশ্চিত করা সহজ নয়। এটি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে একটি রাষ্ট্রকে বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করতে হয়। এ বাধা বা সমস্যাগুলোর সমাধান করতে না পারলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা দুরূহ হয়ে পড়ে। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রকে যেসব চ্যালেঞ্জ বা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় সেগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো-

১. শান্তি ও স্থিতিশীলতার সংকট: যদি কোনো দেশে যুদ্ধ, জাতিগত দাঙ্গা, সহিংস ধর্মীয় উগ্রবাদ ইত্যাদি বিদ্যমান থাকে তবে সেখানকার জনগণের জীবন, স্বাধীনতা ও সম্পদ হুমকির সম্মুখীন হয়। মানবাধিকার এবং মানবিক মর্যাদা ভূলুন্ঠিত হয়। পাশাপাশি কোনো দেশে বেশিমাত্রায় অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটলে রাষ্ট্রীয় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হয়। এ অবস্থা নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অশান্তি ও অস্থিরতা গুরুতর বাধা।

২. দারিদ্র্য: সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অপর একটি সমস্যা হলো দারিদ্র্য। কেননা দারিদ্র্যের কারণে জনগণ শিক্ষা ও উন্নত জীবনযাপন থেকে বঞ্চিত হয়। দরিদ্র ও অশিক্ষিত জনগণ সাধারণত রাজনৈতিকভাবে অসচেতন হয়ে থাকে। আর রাজনৈতিকভাবে অসচেতন মানুষ সুশাসনের প্রয়োজনীয়তা ও এটি প্রতিষ্ঠার উপায় সম্পর্কে অজ্ঞ। সুতরাং দারিদ্র্য ও সুশাসন একসাথে চলতে পারে না।

৩. ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা: সরকারের বিভিন্ন অঙ্গের (আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ) মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন ও ভারসাম্য নিশ্চিত করা সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রধান নিয়ামকগুলোর একটি। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে আইন, বিচার ও শাসন বিভাগের মধ্যে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতার ভাগাভাগি থাকতে হবে।

এক্ষেত্রে বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার বিধান সংবলিত একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে যথাযথ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি আইনসভা থাকতে হবে। এছাড়া ন্যায়পাল পদ্ধতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক, নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কেননা এইসব প্রতিষ্ঠান সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে থাকে।

৪. আমলাতন্ত্রের সংস্কার: সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন সরকারি কার্যক্রমের দক্ষ ব্যবস্থাপনা। আর বিষয়টি বহুলাংশে নির্ভর করে আমলাতন্ত্রের ওপর। কারণ আমলাদের দক্ষতার ওপরই প্রশাসনের সফলতা নির্ভর করে। আমলারা প্রায়ই সিদ্ধান্ত গ্রহণে গোপনীয়তা রক্ষা করে চলেন। এতে করে তাদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা থাকে না।

আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অনেক দেরি হয়। এই প্রশাসনিক কার্যক্রমে এই স্বচ্ছতার অভাব ও দীর্ঘসূত্রতা সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্তরায়। বর্তমান বিশ্বের উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রসমূহের অধিকাংশগুলোতেই গতানুগতিক আমলাতন্ত্র বিদ্যমান।

৫. দুর্নীতি: সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অপর একটি বড় বাধা হলো দুর্নীতি। ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহারই দুর্নীতি। অন্যভাবে বললে, যে কর্মকাণ্ড সাধারণভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং নীতিবিরুদ্ধ তাকেই দুর্নীতি বলা হয়। দুর্নীতি ন্যায্যতা, মানবাধিকার, সাম্য, স্বচ্ছতা ইত্যাদির পরিপন্থী বলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় না।

৬. অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা: সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্যতম সমস্যা হলো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার অভাব। সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় না। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে।

শুধুমাত্র নির্বাচন এবং তার মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল করে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় না। প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সব সংগঠন, প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দলের মতামতের প্রতিফলন থাকে। পরিবার ও সমাজেও থাকে গণতান্ত্রিক চেতনার ছাপ। এরকম সুষ্ঠু রাজনৈতিক ব্যবস্থা না থাকলে সুশাসন অধরাই থেকে যাবে।

৭. নেতৃত্বের সংকট: সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দক্ষ ও গণতান্ত্রিক চেতনায় উজ্জীবিত নেতৃত্বের প্রয়োজন হয়। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন নেতৃত্ব নিজের দলের চেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতকে প্রাধান্য দেয় এবং তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়। প্রকৃত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন নেতৃত্ব কখনোই শাসনক্ষমতা বা রাজনৈতিক পদ আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইবে না। এরকম সুযোগ্য নেতৃত্বই একটি রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

৮. নাগরিক অসচেতনতা: সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হলো নাগরিক অসচেতনতা। নাগরিকরা যদি তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন না হয় তবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় না। নাগরিক সচেতনতার প্রথম শর্ত হলো শিক্ষা।

আবার নাগরিকরা যদি সচেতন না হয় তবে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীর পরিবর্তে অসৎ, দুর্নীতিবাজ প্রতিনিধি নির্বাচিত হতে পারে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর (আইনের শাসন, মানবাধিকার সংরক্ষণ, সমাজের সব স্তরে ন্যায়পরায়ণতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার চর্চা প্রভৃতি) কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য নাগরিক সচেতনতা প্রয়োজন।

৯. কর্তৃত্বমূলক ক্ষমতাকাঠামো: ক্ষমতাকাঠামো হলো একটি সামগ্রিক প্রশাসন ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে ব্যক্তির অধিকার ও সামর্থ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্ষমতাকাঠামো যদি কর্তৃত্বমূলক হয় তবে সেখানে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় না। ক্ষমতাকাঠামো মূলত রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল।

তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর অনেকগুলোতেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নামসর্বস্ব। সেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক রীতিনীতিসমূহ যেমন-সর্বজনীন ভোটাধিকার, বাক-স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সভা-সমিতির অধিকার প্রভৃতি বহাল থাকে ঠিকই, কিন্তু কর্তৃত্বমূলক ক্ষমতার জন্য তা সঠিকভাবে কার্যকর হয় না।

শাসকগোষ্ঠী গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হলেও ক্ষমতার চর্চা করে স্বেচ্ছাচারিতার সাথে। কর্তৃত্বমূলক ক্ষমতা কাঠামোতে নাগরিকরা রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে ঠিকই, কিন্তু তারা নেতা হওয়ার আশা করে না। তারা মনে করে, নেতা হবে প্রথাগতভাবে সুবিধাভোগী শ্রেণি বা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী বংশের সদস্যরা। কর্তৃত্বমূলক ক্ষমতা কাঠামোতে অনেকক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ গণতন্ত্রের চর্চা না হয়ে পরিবারতন্ত্রের চর্চা হয়।

ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের শাসনের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। আবার সুশাসন প্রতিষ্ঠিত এমন উন্নত দেশেও রাজনৈতিক বংশের নমুনা দেখা যায়। তবে তার প্রেক্ষাপট অনেকটাই ভিন্ন। ১৯৬৮ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত কানাডার লিবারেল পার্টির প্রেসিডেন্ট ছিলেন পিয়ের ট্রুডো।

তারপর যথাক্রমে জন টার্নার, জ্য ক্রেতিয়ে, পল মার্টিন, বিল গ্রাহাম, স্টিফেন ডিওন, মাইকেল ইগনাটিফ, বব রে দলটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে পিয়ের ট্রুডোর ছেলে জাস্টিন ট্রুডো লিবারেল পার্টির প্রেসিডেন্ট হন। পার্টির নিবন্ধিত সদস্যদের গোপন ভোটে ৭৮.৭৬% রায় পেয়েছিলেন জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বর্তমানে কানাডার প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রে কেনেডি পরিবারের রাজনৈতিক প্রভাব ও পরিচিতি কিংবদন্তীতুল্য।

১০. প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের অভাব: সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্যতম সমস্যা হলো প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের অভাব। কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণকে স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন তার বিখ্যাত প্রবন্ধ 'Political Development and Political Decay' তে দুইটি দিক থেকে ব্যাখ্যা করেছেন। যেমন- (১) সমর্থনের মাত্রা (Scope of Support), (২) প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাত্রা (Level of Institutionalization)।

সমর্থনের মাত্রা বলতে হান্টিংটন বুঝিয়েছেন, একটি প্রতিষ্ঠান কতসংখ্যক সদস্যকে প্রতিষ্ঠানের সাথে অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছে সেই বিষয়টিকে। আর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাত্রা বলতে তিনি কার্যপ্রক্রিয়ার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণকে বুঝিয়েছেন। আর কার্যপ্রক্রিয়ার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাত্রা পরিমাপ করার জন্য হান্টিংটন চারটি চলক ব্যবহার করেছেন।

এগুলো হলো- (১) অভিযোজনের মাত্রা (adaptability), (২) জটিলতার মাত্রা (complexity), (৩) স্বাধীনতা ভোগের মাত্রা (autonomy) এবং (৪) সংহতির মাত্রা (Coherence)। এই চারটি উপাদানের কার্যকারিতার ওপর কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাত্রা নির্ভর করে। গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় নীতি ও কার্যক্রমের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। টেকসই উন্নয়ন ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যায় না।

যে সব রাষ্ট্রে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সুষ্ঠু বিকাশ ঘটেছে সেসব রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠাও সহজতর হয়েছে। তবে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ। এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও এ সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করে টেকসই রূপ দেওয়া হয়। বিশ্বের অনেক দেশেই গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলিত থাকলেও এর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের অভাবে বহু ক্ষেত্রে মানুষ গণতন্ত্রের সুফল ভোগ করতে পারছে না। গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের অভাবে সুশাসনের অন্য উপাদানগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না।

১১. অকার্যকর আইনসভা: গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বিশেষ করে সংসদীয় গণতন্ত্রে আইনসভার গুরুত্ব অপরিসীম। মূলত আইনসভা প্রণীত আইনের আলোকেই একটি দেশের সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আইনসভার সদস্যরা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা তারা সংসদে তুলে ধরবেন।

বিরোধী দল সরকারের ভুল-ত্রুটি চিহ্নিত করবে যা থেকে সরকার নিজেদের কার্যক্রম সংশোধন করবে। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেই আইনসভা দুর্বল ও অকার্যকর। এসব দেশে নানা মাত্রায় শাসন বিভাগের স্বেচ্ছাচারিতা লক্ষ করা যায়। কোথাও কোথাও বিরোধী দল ধ্বংসাত্মক পদ্ধতিতে সরকার বিরোধিতায় ব্যস্ত থাকে। এভাবে সংসদ অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এটিও সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথে অন্তরায়।

১২. স্থানীয় সরকার কাঠামোর দুর্বলতা: শক্তিশালী, দক্ষ ও কার্যকর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠা সুশাসনের অন্যতম শর্ত। কার্যকর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে এবং রাজনীতিতে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিন্তু অনেক রাষ্ট্রেই স্থানীয় সরকার কাঠামো খুবই দুর্বল ও অকার্যকর। ফলে সে সব রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ দুরুহ হয়।

১৩. রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপ: রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপ সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম বাধা। সামরিক হস্তক্ষেপের ফলে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইনের শাসন, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়। গণতন্ত্র চর্চা এবং এর সাথে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে অকার্যকর করে রাখা হয়। ফলে সুশাসন ব্যাহত হয়।

১৪. আইনের শাসনের অভাব: আইনের শাসন সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান শর্ত। আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান, সবার আইনের আশ্রয় গ্রহণের অধিকার রয়েছে এবং সব কিছুর ওপরে আইনের প্রাধান্য- এগুলো হচ্ছে আইনের শাসনের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রেই আইনের শাসন পরিস্থিতি দুর্বল।

১৫. গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অভাব: স্বাধীন ও শক্তিশালী গণমাধ্যম সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে। গণমাধ্যম মৌলিক অধিকার রক্ষা, মানবাধিকার রক্ষা, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অনেক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই গণমাধ্যমের ওপর কমবেশি হস্তক্ষেপ করা হয়। এর ফলে সুশাসন বাধাগ্রস্ত হয়।

১৬. ই-গভর্নেন্সের অনুপস্থিতি: ই-গভর্নেন্স ছাড়া বর্তমান যুগে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা কঠিন। দক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য ই-গভর্নেন্স গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসনিক ব্যবস্থা সেকেলে ধরনের হয়ে থাকলে নাগরিকদের কাছে স্বল্প সময় ও ব্যয়ে সেবা পৌঁছানো সম্ভব হয় না।

তথ্য-প্রযুক্তির অগ্রগতিকে কাজে লাগিয়ে এখন বিশ্বের সব দেশই কমবেশি ই-গভর্নেন্সের প্রয়োগ ঘটাচ্ছে। কোনো রাষ্ট্র বা সরকার যদি ই-গভর্নেন্সের প্রয়োগ ঘটাতে বা এর পরিসর বাড়াতে অনীহা দেখায়, তবে তা অবশ্যই সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্তরায় হিসেবে দেখা দেবে।

পরিশেষে বলা যায়, কোনো একক কারণে নয়, বরং বেশ কয়েকটি কারণে কোনো দেশের সুশাসন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার এ প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার জন্য সরকার এবং রাষ্ট্রের সব নাগরিকের সদিচ্ছা ও অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। সুশাসনের প্রতিবন্ধকতা - Obstacles of Good Governance এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url