মানুষ কীভাবে সীমিত সম্পদের সাহায্যে অসীম অভাব পূরণ করে তা আলোচনা কর
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে মানুষ কীভাবে সীমিত সম্পদের সাহায্যে অসীম অভাব পূরণ করে তা আলোচনা কর নিয়ে আলোচনা করব।
মানুষ কীভাবে সীমিত সম্পদের সাহায্যে অসীম অভাব পূরণ করে তা আলোচনা কর। মানুষের অভাব অসীম। কিন্তু অভাব পূরণের উপকরণ বা সম্পদ সীমিত। সম্পদের এই স্বল্পতা বা দুষ্প্রাপ্যতা থেকেই মানুষের যাবতীয় অর্থনৈতিক সমস্যার উৎপত্তি।
মানুষের অভাব যেমন অসীম তেমনি সম্পদও যদি অসীম হতো তাহলে কোনো অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হতো না। মানুষ কীভাবে সীমিত সম্পদের সাহায্যে অসীম অভাব পূরণের চেষ্টা করে তাই অর্থনীতির প্রধান আলোচ্য বিষয়।
অধ্যাপক এল. রবিন্স, কেয়ার্নক্রস, বেনহাম, স্যামুয়েলসন প্রমুখ আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ অর্থনৈতিক সমস্যার এ দিকের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। অধ্যাপক এল. রবিন্স অর্থনীতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, "অর্থনীতি এমন একটি বিজ্ঞান যা মানুষের অসীম অভাব এবং বিকল্প ব্যবহারযোগ্য অপ্রচুর উপকরণসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনকারী কার্যাবলি আলোচনা করে।
অধ্যাপক রবিন্স-এর সংজ্ঞা থেকে মানুষের অসীম অভাব ও সীমিত সম্পদের সাহায্যে অভাব পূরণ সংক্রান্ত তিনটি মৌলিক বিষয় সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। এগুলো হলো: ১ . অসীম অভাব, ২. সীমিত সম্পদ এবং ৩. সম্পদের বিকল্প ব্যবহার।
- অসীম অভাবঃ মানুষের অভাব অসীম। দৈনন্দিন জীবনে মানুষের অভাবের কোনো শেষ নেই। কোনো দ্রব্যের অভাব পূরণ হলে আবার নতুন অভাবের জন্ম হয়। যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার মতো অতি প্রয়োজনীয় ও অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের অভাব পূরণের পর মানুষ উন্নত জীবনযাপনের জন্য রেডিও, টেলিভিশন, ফ্রিজ প্রভৃতি দ্রব্যসামগ্রীর অভাব বোধ করে। আবার এসব অভাব পূরণের পর মানুষ প্রাসাদতুল্য অট্টালিকা, দামি মোটরগাড়ি, মূল্যবান অলংকার প্রভৃতি বিলাসজাত দ্রব্যের অভাব বোধ করে।
- সীমিত সম্পদঃ মানবজীবনে অর্থনৈতিক সমস্যার মূলে রয়েছে সম্পদের স্বল্পতা বা দুষ্প্রাপ্যতা। 'সম্পদ' বলতে অভাব পূরণের দ্রব্যসামগ্রী এবং উৎপাদনের বিভিন্ন উপাদান; যেমন- ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন প্রভৃতিকে বুঝায়। মানুষের অভাব পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় এসব সম্পদ খুবই সীমিত।
- সম্পদের বিকল্প ব্যবহার: মানুষের অভাব পূরণের সম্পদ সীমিত হলেও তা বিকল্প ব্যবহারযোগ্য। অর্থাৎ একই সম্পদ বিভিন্ন অভাব পূরণে ব্যবহার করা যায়। তবে এসব সম্পদ কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হলে অন্য ক্ষেত্রে ব্যবহারের সুযোগ ত্যাগ করতে হয়। যেমন- একখণ্ড জমিতে ধান অথবা পাট উৎপাদন করা যায়। তবে দুটিই একসঙ্গে উৎপাদন করা যায় না। সম্পদের বিকল্প ব্যবহারযোগ্যতার কারণে মানুষকে বিভিন্ন অভাবের মধ্যে 'বাছাই' বা 'নির্বাচন' (Choice) করতে হয়। মানুষের সকল অভাবের গুরুত্ব এক রকম নয়। কোনোটির গুরুত্ব বেশি; কোনোটির গুরুত্ব অপেক্ষাকৃত কম। এজন্য বিকল্প ব্যবহারযোগ্য অপ্রচুর উপকরণগুলো এমনভাবে নিয়োগ করতে হবে যাতে অধিকতর প্রয়োজনীয় অভাবগুলো আগে পূরণ করে সর্বাধিক তৃপ্তি লাভ করা সম্ভব হয়।
সীমিত সম্পদ দ্বারা অসীম অভাব পূরণ করতে হলে মানুষকে তিনটি মৌল বিষয়ে 'নির্বাচন' বা 'বাছাই' করতে হয়। এ বিষয়গুলো হলোঃ ১. কী উৎপাদন করা হবে, ২. কীভাবে উৎপাদন করা হবে এবং ৩. কার জন্য উৎপাদন করা হবে।
- কী উৎপাদন করা হবে: মানুষের অভাব পূরণের জন্য বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম উৎপাদন করা হয়। কিন্তু সীমিত সম্পদের দ্বারা সব দ্রব্য একই সাথে উৎপাদন করা সম্ভব নয়। এজন্য বিভিন্ন অভাবের আপেক্ষিক গুরুত্ব বিবেচনা করে কোনো দ্রব্য কী পরিমাণে উৎপাদন করা হবে তা নির্ধারণ করতে হয়। যে দ্রব্য সমাজের অধিক কল্যাণ সাধন করে এবং যে পরিমাণ উৎপাদন করলে সে কল্যাণ সাধিত হয় ঠিক ততটুকুই উৎপাদন করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
- কীভাবে উৎপাদন করা হবে: প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী কীভাবে উৎপাদন করা হবে অর্থাৎ কোন উৎপাদন কৌশল অবলম্বন করা হবে তা নির্বাচন করাও সমাজের অন্যতম মৌলিক সমস্যা। কারণ একই দ্রব্য বিভিন্ন পদ্ধতিতে এবং উপকরণসমূহের বিভিন্ন অনুপাতের সংমিশ্রণের মাধ্যমে উৎপাদন করা যায়। যেমন- একই পরিমাণ দ্রব্য অধিক শ্রম ও কম মূলধন ব্যবহার করে উৎপাদন করা যায়; আবার কম শ্রম ও অধিক মূলধন ব্যবহার করেও উৎপাদন করা যায়। এক্ষেত্রে কীভাবে উৎপাদন করলে সমাজের উপকরণসমূহের কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত হয় তা বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়।
- কার জন্য উৎপাদন করা হবে: উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী কে বা কারা ভোগ করবে এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির লোকের মধ্যে তা কীভাবে বণ্টন করা হবে তা নির্ধারণ করাও হলো সমাজের অন্যতম মৌল সমস্যা। কারণ মানুষের অভাব পূরণ কেবল দ্রব্যসামগ্রীর উৎপাদনের পরিমাণের উপরই নির্ভর করে না, বরং তার সুষ্ঠু বণ্টনের উপরও নির্ভর করে। তাই উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী কীভাবে বণ্টন করা হলে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ সর্বাধিক তৃপ্তি লাভ করবে তা নির্বাচন করতে হয়।
উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, দৈনন্দিন জীবনে একদিকে মানুষের অভাব যেমন অসীম তেমনি অন্যদিকে অভাব পূরণের উপকরণ বা সম্পদ সীমিত। অসীম অভাব এবং সীমিত সম্পদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করাই হলো মানবজীবনের মূল অর্থনৈতিক সমস্যা।
সীমিত সম্পদ দিয়ে কোন দ্রব্য কী পরিমাণ উৎপাদন করা হবে, কীভাবে উৎপাদন করা হবে এবং কার জন্য উৎপাদন করা হবে তা সঠিকভাবে নির্বাচন বা বাছাই করতে হয়। এভাবে মানুষ সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে অসীম অভাব পূরণের চেষ্টা করে।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। মানুষ কীভাবে সীমিত সম্পদের সাহায্যে অসীম অভাব পূরণ করে তা আলোচনা কর এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url