দ্রব্য বিনিময় প্রথা বলতে কী বুঝায়? দ্রব্য বিনিময় প্রথার অসুবিধাসমূহ আলোচনা কর

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে দ্রব্য বিনিময় প্রথা বলতে কী বুঝায়? দ্রব্য বিনিময় প্রথার অসুবিধাসমূহ আলোচনা কর নিয়ে আলোচনা করব।

দ্রব্য বিনিময় প্রথা বলতে কী বুঝায়? দ্রব্য বিনিময় প্রথার অসুবিধাসমূহ আলোচনা কর

দ্রব্য বিনিময় প্রথা বলতে কী বুঝায়? দ্রব্য বিনিময় প্রথার অসুবিধাসমূহ আলোচনা কর। অথবা, দ্রব্য বিনিময় প্রথা কী? দ্রব্য বিনিময় প্রথার অসুবিধাগুলো লেখ। দ্রব্য বিনিময় প্রথাঃ যখন কোনো একটি দ্রব্যের পরিবর্তে অন্য একটি দ্রব্য সরাসরি বিনিময় করা হয়, তখন তাকে দ্রব্য বিনিময় প্রথা বলা হয়। বিনিময় ব্যবস্থার প্রাথমিক যুগে যখন অর্থের প্রচলন ছিল না তখন সাধারণত দ্রব্যের পরিবর্তে দ্রব্য বিনিময় করা হয়।

কেউ কোনো জিনিস ক্রয় করতে চাইলে তাকে নিজের জিনিসের বিনিময়ে অন্যের জিনিস সংগ্রহ করতে হতো। যেমন- কৃষক তার চালের বিনিময়ে জেলের নিকট হতে মাছ সংগ্রহ করতো। তাঁতি তার কাপড়ের বিনিময়ে মাংস বিক্রেতার নিকট হতে মাংস সংগ্রহ করত। এভাবে সরাসরি দ্রব্যের পরিবর্তে দ্রব্য বিনিময় করাকে দ্রব্য বিনিময় প্রথা বলা হয়।

দ্রব্য বিনিময় প্রথার অসুবিধাসমূহঃ দ্রব্য বিনিময় প্রথার নানা ধরনের অসুবিধা আছে। নিম্নে এসব অসুবিধাগুলো আলোচনা করা হলো:

১। অভাবের অসামঞ্জস্যতা: দ্রব্য বিনিময় প্রথার প্রধান অসুবিধা হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতার অভাবের অসামঞ্জস্যতা। অর্থাৎ বিনিময় ইচ্ছুক ব্যক্তিদের একজনের অভাবের সঙ্গে অন্যজনের অভাবের মিলের অভাব। এর ফলে দ্রব্য বিনিময়ে যথেষ্ট অসুবিধা দেখা দেয়। ধরা যাক, একজন লোকের চাল এর পরিবর্তে মাছ দরকার।

সুতরাং তাকে এমন একজন লোককে খুঁজে বের করতে হবে, যে মাছ বিনিময় করতে ইচ্ছুক। কিন্তু যার মাছ আছে তার মাছের বিনিময়ে চাল এর প্রয়োজন নাও থাকতে পারে। হয়তোবা তার দরকার হলো কাপড়।

এমতাবস্থায় তাকে মাছের বিনিময়ে চাল গ্রহণে ইচ্ছুক এমন লোককে আবার খুঁজতে হবে। বাস্তবে এ ধরনের লোককে খুঁজে পাওয়া খুবই কষ্টকর ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আবার অনেক সময় এ ধরনের লোককে খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে বিনিময়ের কাজে অসুবিধা দেখা দেয়।

২। দ্রব্যের অবিভাজ্যতাঃ বিনিময় প্রথার অপর একটি অসুবিধা হলো দ্রব্যের অবিভাজ্যতা। এমন অনেক দ্রব্য আছে যা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করা যায় না। ধরা যাক, একজন লোকের নিকট গাভী আছে, তার একটি কলমের দরকার। গাভীর মূল্য কলমের মূল্য অপেক্ষা অনেক বেশি। এমতাবস্থায় গাভীকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করে এর অংশবিশেষের বিনিময়ে কলম সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। সুতরাং এরূপ ক্ষেত্রে গাভী ও কলমের মধ্যে বিনিময় হতে পারে না।

৩। মূল্য পরিমাপের অসুবিধাঃ দ্রব্য বিনিময় ব্যবস্থায় দ্রব্যের মূল্য পরিমাপের কোনো নির্দিষ্ট মাপকাঠি বা সাধারণ মানদণ্ড থাকে না। এমতাবস্থায় একটি দ্রব্যের পরিবর্তে অন্য কোনো দ্রব্য কী পরিমাণ পাওয়া যাবে তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না। ফলে একই দ্রব্যের বিনিময় হার বিভিন্ন হয়ে থাকে। ধরা যাক, চাল ও মাছের বিনিময় হার হলো ১ কেজি : ২ কেজি।

অর্থাৎ ১ কেজি চাল এর বিনিময় ২ কেজি মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু বিনিময়ে ইচ্ছুক ব্যক্তির যদি চাল এর খুব বেশি প্রয়োজন হয় তাহলে সেক্ষেত্রে তার ১ কেজি চালের বিনিময় হারের পরিবর্তন ঘটবে। সুতরাং বিনিময় প্রথায় মূল্য পরিমাপের নির্দিষ্ট মাপকাঠি বা মানদণ্ড না থাকায় বিনিময়ের ক্ষেত্রে বিশেষ অসুবিধা দেখা দেয়।

৪। সঞ্চয়ের বাহনের অভাব: দ্রব্য বিনিময় প্রথা দ্রব্যের মাধ্যমে সঞ্চয় করতে হয়, কিন্তু অধিকাংশ দ্রব্যই ক্ষণস্থায়ী ও দ্রুত পচনশীল। তাই সকল দ্রব্য দীর্ঘসময় ধরে রাখা যায় না। আবার অনেক দ্রব্য কিছু সময় ধরে রাখা সম্ভব হলেও গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। তা ছাড়া দ্রব্যের আকারে সঞ্চয় করার জন্য গুদামঘরের প্রয়োজন হয়। সুতরাং বিনিময় প্রথায় সঞ্চয়ের সামর্থ্য ও ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মানুষের পক্ষে সঞ্চয় করা সম্ভব হয় না।

৫। ঋণ পরিশোধের অসুবিধা: বিনিময় ব্যবস্থার মাধ্যমে ঋণের আদান-প্রদান করা হয়। কিন্তু ঋণ প্রদান ও তা পরিশোধের মধ্যে সময়ের দীর্ঘ ব্যবধান থাকে। এ সময়ের মধ্যে দ্রব্যাদির গুণাগুণ ও মূল্যের পরিবর্তন ঘটতে পারে।

এ অবস্থায় ঋণ গ্রহণের সময় যে পরিমাণ দ্রব্য গ্রহণ করা হয়, সেই পরিমাণ দ্রব্য দ্বারা ঋণ পরিশোধ করা হলে ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতার মধ্যে একজন ক্ষতিগ্রস্ত ও অন্যজন লাভবান হয়। কাজেই বিনিময় ব্যবস্থায় ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধ করা খুবই অসুবিধাজনক।

৬। বহনযোগ্যতার অভাব: মানুষকে নানা কাজে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে হয়। বিনিময় ব্যবস্থায় অর্থের প্রচলন না থাকায় দূরদূরান্তে থাকা-খাওয়ার জন্য মানুষকে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়। বাস্তবে এসব জিনিস সঙ্গে নিয়ে চলাফেরা করা অত্যন্ত কষ্টকর এবং এজন্য মানুষকে যথেষ্ট অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। 

৭। মূল্য স্থানান্তরের অসুবিধাঃ দ্রব্য বিনিময় প্রথায় অর্থের প্রচলন না থাকায় মানুষের পক্ষে তার বাড়ি ও সম্পত্তির ন্যায় মূল্যবান সম্পদ স্থানান্তর করা সম্ভব হয় না। ফলে মানুষকে সীমাহীন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। ধরা যাক, কোনো ব্যক্তির বগুড়ায় বাড়ি ও কিছু সম্পত্তি আছে। সে এখন ঢাকায় বসবাস করতে ইচ্ছুক।

কিন্তু বাড়ি ও সম্পত্তি স্থানান্তরের অযোগ্য। সুতরাং তার পক্ষে এসব সম্পত্তি স্থানান্তর সম্ভব নয়। কাজেই বিনিময় প্রথায় বাড়ি ও সম্পত্তির ন্যায় স্থাবর সম্পত্তি স্থানান্তর করা যায় না। উপরিউক্ত আলোচনার থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, বিনিময় প্রথার যথেষ্ট অসুবিধা আছে। তাই বর্তমান যুগে বিনিময় প্রথা পরিত্যক্ত হয়েছে এবং বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে মুদ্রার প্রচালন ঘটেছে।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। দ্রব্য বিনিময় প্রথা বলতে কী বুঝায়? দ্রব্য বিনিময় প্রথার অসুবিধাসমূহ আলোচনা কর এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url