বাংলাদেশ সরকারের আয়ের প্রধান উৎসসমূহ আলোচনা কর

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে বাংলাদেশ সরকারের আয়ের প্রধান উৎসসমূহ আলোচনা কর নিয়ে আলোচনা করব।

বাংলাদেশ সরকারের আয়ের প্রধান উৎসসমূহ আলোচনা কর

বাংলাদেশ সরকারের আয়ের প্রধান উৎসসমূহ আলোচনা কর। অথবা, বাংলাদেশ সরকারের আয়ের উৎসসমূহ আলোচনা কর।

চির অতীতে সরকারের কার্যাবলি শুধুমাত্র জনগণের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধান এবং বহিঃশত্রুর আক্রমণের হাত হতে দেশকে রক্ষা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল কিন্তু বর্তমান যুগে দেশের অভ্যন্তরে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং দেশ রক্ষা ছাড়াও জনসাধারণের সার্বিক কল্যাণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সরকারকে বহুবিধ কাজ করতে হয়।

এজন্য সরকারের যেমন প্রচুর অর্থ ব্যয় হয় তেমনি বিভিন্ন উৎস হতে সরকার আয়ও করে থাকে। বাংলাদেশ সরকার কর ধার্য ও অন্যান্য উপায়ে আয় বা রাজস্ব সংগ্রহ করে থাকেন। এভাবে সংগৃহীত রাজস্বই সরকারের আয়।

নিম্নে বাংলাদেশ সরকারের আয়ের প্রধান উৎসসমূহ আলোচনা করা হলোঃ

  1. বাণিজ্য শুল্ক: বাংলাদেশ সরকারের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস হলো বাণিজ্য শুল্ক। সরকার দেশের আমদানি ও রপ্তানি খাতে দ্রব্যসামগ্রীর উপর কর ধার্য করে যে আয় পেয়ে থাকেন, তাকে বাণিজ্য শুল্ক বলা হয়। বাণিজ্য শুল্কের মাধ্যমে সরকার প্রতি বছর প্রচুর রাজস্ব লাভ করে থাকেন।
  2. আবগারি শুল্ক: বাংলাদেশ সরকারের আয়ের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো আবগারি শুল্ক। দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত ও ব্যবহৃত দ্রব্যাদির উপর যে কর ধার্য করা হয়, তাকে আবগারি শুল্ক বলা হয়। বাংলাদেশে উৎপাদিত ও ব্যবহৃত চা, চিনি তামাক, দিয়াশলাই, সিগারেট, মদ, গাঁজা, আফিম প্রভৃতি দ্রব্যের উপর প্রচুর অর্থ সরকার আয় করে থাকেন।
  3. আয়কর: আয়কর হলো সরকারের রাজস্বের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। জনসাধারণের ব্যক্তিগত আয়ের উপর ধার্য করকে আয়কর বলা হয়। কৃষি আয়ের উপর আরোপিত করকে কৃষি আয় বলা হয়। বিভিন্ন কোম্পানির আয়ের উপরে যে কর ধার্য করা হয়, তাকে কর্পোরেশন কর বলা হয়। এসব করকে আয়করের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
  4. মূল্য সংযোজন কর: বাংলাদেশ সরকারের আয়ের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো মূল্য সংযোজন কর। এটি একটি পরোক্ষ কর। দেশের মধ্যে পণ্যসামগ্রী বিক্রির উপর এই কর ধার্য করা হয়।
  5. ভূমি রাজস্ব: ভূমি রাজস্ব সরকারের আয়ের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। তবে স্বাধীনতা লাভের পর ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করায় বর্তমানে এই খাতে আয়ের পরিমাণ যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। এতদসত্ত্বেও ভূমি রাজস্ব এখনও সরকারের আয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
  6. স্ট্যাম্প: দলিলপত্র ও মামলা মকদ্দমার আবেদনপত্রে স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি ব্যবহার করা হয়। সরকার স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি বাবদ প্রতি বছর যথেষ্ট রাজস্ব পেয়ে থাকেন।
  7. রেজিস্ট্রেশন: রেজিস্ট্রেশন হলো সরকারের আয়ের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। এ খাতে সরকার প্রতি বছর যথেষ্ট আয় পেয়ে থাকেন।
  8. রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক: স্বাধীনতা উত্তরকালে বাংলাদেশ সরকার দেশের সমস্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিমা প্রতিষ্ঠানসমূহ রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে আছে। এসব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বিমা প্রতিষ্ঠানের ভগ্নাংশ বাবদ সরকার প্রতি বছর যথেষ্ট আয় পেয়ে থাকেন।
  9. রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প: স্বাধীনতা লাভের পর সরকার দেশের বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহ রাষ্ট্রায়ত্ত করেছেন। এসব প্রতিষ্ঠান হতে সরকার প্রতি বছর কিছু আয় পেয়ে থাকেন।
  10. সুদ: সরকার বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দান করে থাকে। এই ঋণের সুদ বাবদ সরকারের যথেষ্ট আয় হয়।
  11. রেলওয়ে: রেলওয়ে সরকারের আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। রেলওয়ে হতে সরকারের প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব পাওয়ার কথা। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিচালনাগত অব্যবস্থা, ব্যাপক দুর্নীতি প্রভৃতির দরুন এই খাত প্রচুর পরিমাণ লোকসানের সম্মুখীন হয়।
  12. সম্পূরক শুল্ক: সম্পূরক শুল্ক হিসেবে সরকার প্রতি বছর যথেষ্ট পরিমাণ আয় পেয়ে থাকেন। এ খাতে ২০০২-২০০৩ সালে ৪,৩৯০ কোটি টাকা এবং ২০১৪-২০১৫ সালে ৩২৮০.৪২ কোটি টাকা আয় হয়।
  13. তার ও টেলিফোন: বাংলাদেশ সরকার তার ও টেলিফোন হতে প্রতি বছর বেশকিছু আয় পেয়ে থাকেন। এ খাত হতে বাংলাদেশ সরকারের ১৯৯৫-৯৬ সালে ১,৬০০ কোটি টাকা এবং ২০১৪-২০১৫ সালে ১,৯০০ কোটি টাকা আয় হয়।
  14. মোটর ও যানবাহন কর: সরকার মোটরগাড়ি ও অন্যান্য যানবাহনের উপর কর ধার্য করে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব আয় করে থাকেন।
  15. পরিবহন ও যোগাযোগ: সরকারের আয়ের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো পরিবহন ও যোগাযোগ। এ খাতে সরকারের ২০০২-২০০৩ সালে ২২৫ কোটি টাকা, ২০১৪-২০১৫ সালে ২৮০ কোটি টাকা।
  16. মাদক শুল্ক: মাদক শুল্ক বাবদ সরকারের ১৯৯৫-৯৬ সালে ২৬ কোটি টাকা, ২০০২-২০০৩ সালে ৩৫ কোটি টাকা ও ২০১৪-২০১৫ সালে ৭০ কোটি টাকা আয় হয়।
  17. অর্থনৈতিক কার্যক্রম: সরকার আমদানি-রপ্তানি আইনের আওতায় বাণিজ্য সংস্থা ও কোম্পানিসমূহের রেজিস্ট্রশন ফি, সমবায় সমিতির নিবন্ধনকরণ ও নবায়ন ফি প্রভৃতি বাবদ যথেষ্ট পরিমাণ আয় পেয়ে থাকেন।
  18. সমাজ ও সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম: জনস্বাস্থ্য, পানি সরবরাহ, সরকারি বাসভবনের ভাড়া, টিভি ও রেডিও হতে প্রাপ্ত আয় বাবদ সরকারের বেশকিছু আয় হয়।
  19. কৃষি ও তৎসম্পর্কীয় সেবা: কৃষি ও তৎসম্পর্কীয় সেবা খাত হতে সরকার প্রতি বছর কিছু আয় পেয়ে থাকেন।
  20. অন্যান্য উৎস: উল্লিখিত উৎসসমূহ ছাড়াও সরকার অন্যান্য কর বহির্ভূত রাজস্ব বাবদ প্রতি বছর যথেষ্ট পরিমাণ রাজস্ব পান।

সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সরকার যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ, বাধ্যতামূলকভাবে ঋণ, পুরস্কার, টাকশাল, সরকারি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি হতে যথেষ্ট পরিমাণ আয় করে থাকেন।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। বাংলাদেশ সরকারের আয়ের প্রধান উৎসসমূহ আলোচনা কর এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url