তেলেনাপোতার স্মৃতি আপনার কাছে ঝাপসা একটা স্বপ্ন বলে মনে হবে। কেন তেলেনাপোতার স্মৃতি স্বপ্ন বলে মনে হবে?

 
তেলেনাপোতার স্মৃতি আপনার কাছে ঝাপসা একটা স্বপ্ন বলে মনে হবে। কেন তেলেনাপোতার স্মৃতি স্বপ্ন বলে মনে হবে?

"শনি ও মঙ্গলের, মঙ্গলই হবে বোধহয়- যোগাযোগ হলে তেলেনাপোতা আপনারাও একদিন আবিষ্কার করতে পারেন।" -প্রেমেন্দ্র মিত্র তেলেনাপোতা আবিষ্কারের কথা এত সহজে বললেও আসলে তেলেনাপোতা বলে কোনো একটি গ্রাম নেই। বাংলার রিক্ত সর্বহারা পল্লিমাত্রই তেলেনাপোতা। নিত্যকর্মের ব্যস্ততার একটু অবসরে ছুটি কাটাতে গিয়ে মহানগরীর তিনটি মানুষের কাছে উন্মোচিত হয় তেলেনাপোতার স্বরূপ।


তেলেনাপোতা গ্রামে গিয়ে নায়কের একেবারে অভিনব অভিজ্ঞতা, তার মানসমুক্তি এবং পরিশেষে বেদনাবিদ্ধ হওয়ার ফলে নতুন করে সে নিজেকে আবিষ্কার করে। কিন্তু বাস্তবের কাঠিন্য তার রোমান্টিকতাকে আঘাত করে। তেলেনাপোতার বিজলিহীন অন্ধকার, মশার উপদ্রব, প্রবল দারিদ্র্য, পানাপুকুরের পচা গন্ধ-তাদেরকে অস্বস্তির মুখে ফেলে দেয়। নিরঞ্জনরূপী নায়ক মৃত্যুমুখিনী বৃদ্ধাকে শুধু সান্ত্বনা দেওয়াই নয়, যামিনীর করুণ চোখ দুটিতে যেন এক মুহূর্তে জীবনে সোনার কাঠি ছুঁইয়ে দেয়-চলে আসার সময় হৃৎস্পন্দনে একটি কথাই বারবার ধ্বনিত হয় "ফিরে আসব, ফিরে আসব।"

কিন্তু বাস্তব এত সহজ নয়। শহরে ফিরে এসে, দীর্ঘকাল ম্যালেরিয়া ভোগ করে সেরে ওঠার পরে 'তেলেনাপোতা' আর সত্য থাকে না। তার স্মৃতি কোথায় হারিয়ে যায়, সবই স্বপ্নের মতো মনে হয়। যামিনীর কাছে ফিরে যেতে না পারার অপরাধ যেন তাকেই বেদনাবিদ্ধ করতে থাকে। সেও যেন সেই নিরঞ্জনের মতোই, যারা প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু রক্ষা করে না। সামাজিক মানুষ হিসেবে আমাদের যে একটি দায়বদ্ধতা রয়েছে, লেখক তার মূলে আঘাত হেনেছেন পাঠকের আপাত নির্লিপ্ততায়।
 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url