জাতীয় আয় বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা তত্ত্বটি কী? ব্যাখ্যা কর।

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে জাতীয় আয় বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা তত্ত্বটি কী? ব্যাখ্যা কর। নিয়ে আলোচনা করব।

জাতীয় আয় বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা তত্ত্বটি কী? ব্যাখ্যা কর।

জাতীয় আয় বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা তত্ত্বটি কী? ব্যাখ্যা কর। অথবা, বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা তত্ত্বটি চিত্রসহ লেখ। অথবা, বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদন ক্ষমতা তত্ত্ব অনুযায়ী শ্রমিকের প্রান্তিক মূল্য উৎপন্ন রেখা বাম থেকে ডানদিকে নিম্নগামী হয় কেন?

উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে জে. বি. ক্লার্ক, জেবনস, এজওয়ার্থ, ওয়ালরাস প্রমুখ নয়া ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদগণ বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা তত্ত্বটি প্রচলন করে। এ তত্ত্ব অনুযায়ী কোনো উৎপাদনের পারিশ্রমিক তার প্রান্তিক উৎপাদন ক্ষমতার সমান হয়। কোনো দ্রব্যের মূল্য যেমন তার প্রান্তিক উপযোগের সমান হয় তেমনি প্রত্যেকটি উপাদানের দাম তার প্রান্তিক উৎপাদন ক্ষমতার সমান হবে।

অনুমিত শর্তাবলিঃ বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা তত্ত্বটি নিম্নলিখিত শর্তাবলির উপর প্রতিষ্ঠিত-

  1. উপাদান ও পণ্যের বাজারে পূর্ণ প্রতিযোগিতা বিদ্যমান।
  2. উপাদানসমূহের অবাধ গতিশীলতা রয়েছে।
  3. উপাদানের বিভিন্ন এককগুলো সমান দক্ষতাসম্পন্ন এবং প্রত্যেকটি উপাদানের এককগুলো একটি অপরটির পরিবর্তক হিসেবে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করা যায়।
  4. প্রত্যেকটি উপাদানের উৎপাদনশীলতা পরিমাপ করা যায়।
  5. এ তত্ত্বে পরিবর্তনীয় অনুপাত বিধির কার্যকারিতা স্বীকার করে নেয়া হয়েছে।
  6. এ তত্ত্বে ধরে নেয়া হয়েছে যে, প্রতিটি উৎপাদক প্রতিষ্ঠান সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে উপাদানের নিয়োগ পরিচালনা করে থাকে।
  7. এ তত্ত্বে ধরে নেয়া হয়েছে যে, প্রতিটি উৎপাদক সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে উৎপাদনের নিয়োগ পরিচালনা করে থাকে।
  8. এ তত্ত্বে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে যে, প্রত্যেক উপাদানকে যদি প্রান্তিক উৎপাদন অনুসারে দাম দেয়া হয় তাহলে মোট উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে বণ্টিত হয়ে যাবে।
  9. পরিশেষে, এ তত্ত্বটি দীর্ঘকালীন সময়ে উপাদানের দাম নির্ধারণে প্রযোজ্য।

এসব অনুমিত শর্তের উপর ভিত্তি করে বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদশীলতা তত্ত্বটি গড়ে উঠেছে। তত্ত্বটির মূল বিষয়বস্তু হলোঃ

অন্যান্য উপাদানের পরিমাণ অপরিবর্তিত রেখে কোনো একটি উপাদানের পরিমাণ এক একক বাড়ালে বা কমালে যে পরিমাণ উৎপাদন বাড়ে বা কমে তাই হলো সে উপাদানের প্রান্তিক উৎপাদন। কোনো উপাদানের কতখানি প্রাপ্য তা সে উপাদানের প্রান্তিক উৎপাদনের দ্বারা নির্ধারিত হয়।

ধরা যাক, কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ ভূমি, মূলধন এবং সংগঠনের সাথে ১০ জন শ্রমিক কাজ করে ৩০০ টাকার দ্রব্য উৎপাদন করে। কিন্তু ১০ জন শ্রমিকের স্থলে ১১ জন শ্রমিক কাজ করলে ৩২০ টাকার দ্রব্য উৎপাদন করতে পারে। এমতাবস্থায় একাদশতম শ্রমিকের উৎপন্ন দ্রব্যের পরিমাণ হলো ২০ টাকা। এ শ্রমিককে প্রান্তিক শ্রমিক বলা হয় এবং তার উৎপাদনের পরিমাণকে প্রান্তিক উৎপাদন বলা হয়।

বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদন ক্ষমতা তত্ত্ব অনুযায়ী, প্রত্যেক উৎপাদকারী উপাদানসমূহ এমনভাবে নিয়োগ করবে যাতে প্রান্তিক উৎপাদন প্রান্তিক ব্যয়ের সমান হয়। অর্থাৎ কোনো উপাদানের অতিরিক্ত এক একক নিয়োগ করার ফলে যে অতিরিক্ত আয় হয় তা ঐ এককের জন্য প্রদত্ত দামের সমান হতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যতক্ষণ শ্রমের প্রান্তিক উৎপাদন শ্রমিকের মজুরি অপেক্ষা অধিক হয় ততক্ষণ উৎপাদনকারী অতিরিক্ত শ্রম নিয়োগ করবে। যখন শ্রমিকের প্রান্তিক উৎপাদন শ্রমিকের প্রান্তিক মজুরির সমান হবে তখন উৎপাদনকারী আর অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগ করবে না।

কারণ এর পর উৎপাদনকারী যদি সে উপাদানটি আরও নিয়োগ করে তাহলে সে উপাদানের প্রান্তিক উৎপাদন তার জন্য প্রদত্ত দাম অপেক্ষা কম হবে এবং উৎপাদনকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রত্যেক উৎপাদনকারী কোনো উপাদান সে পর্যন্ত নিয়োগ করবে, যেখানে তার প্রান্তিক উৎপাদন দামের সমান হয়।

যদি দেখা যায় যে, উৎপাদনের উপাদানসমূহের প্রান্তিক উৎপাদন তাদের দাম অপেক্ষা অধিক হয়, তাহলে উৎপাদনকারী উপাদান নিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি করে উৎপাদন বৃদ্ধি করবে। আবার যদি দেখা যায় যে, উপাদানসমূহের প্রাস্তিক উৎপাদন তাদের দাম অপেক্ষা কম তাহলে উৎপাদনকারী উপাদানের নিয়োগ হ্রাস উৎপাদন কমিয়ে দিবে।

এভাবে কোনো উপাদান যে পরিমাণ নিয়োগ করলে তার প্রান্তিক উৎপাদন এবং তার জন্য প্রদত্ত দাম সমান হয়, সে বিন্দুতেই উপাদানগুলোর দাম নির্ধারিত হয়। এভাবে প্রত্যেক উপাদানের দাম তার প্রান্তিক উৎপাদন ক্ষমতার সমান হয়। এটাই হলো জাতীয় আয় বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা তত্ত্বের মূল কথা।

পার্শ্বের রেখাচিত্রের সাহায্যে প্রান্তিক উৎপাদন ক্ষমতা তত্ত্বটি ব্যাখ্যা করা হলো। ধরা যাক, শ্রমের বাজারে পূর্ণ প্রতিযোগিতা বর্তমান। এমতাবস্থায় গড় মজুরি AW এবং প্রান্তিক মজুরি MW সমান হবে। অতএব, গড় মজুরি রেখা ও প্রান্তিক মজুরি রেখা একই সমান্তরাল রেখার উপর অবস্থিত থাকবে।

পার্শ্বের চিত্রের P বিন্দুতে প্রান্তিক আয় উৎপাদন রেখা (MRP) সমান্তরাল রেখা AW = MW কে ছেদ করেছে। এ P বিন্দুতে শ্রমিকের মজুরি নির্ধারিত হবে। এমতাবস্থায় মজুরির হার MP-এর সমান হবে। এভাবে অন্যান্য উপাদানের পারিশ্রমিকও নির্ধারিত করা যায়।

অর্থাৎ প্রত্যেকটি উপাদানের পারিশ্রমিক তার প্রান্তিক উৎপাদন ক্ষমতার সমান হবে। সুতরাং বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা তত্ত্ব অনুযায়ী, উৎপাদনের বিভিন্ন উপাদানে পারিশ্রমিক তাদের প্রান্তিক উৎপাদন ক্ষমতার সমান হবে।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। জাতীয় আয় বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা তত্ত্বটি কী? ব্যাখ্যা কর। এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url